X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কি এখন স্বাধীন?

গোলাম মওলা
০৫ জুলাই ২০১৮, ১০:৫৫আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৮, ১৯:১০

ব্যাংক (ছবি: ফোকাস বাংলা) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা হয়েছে মূলত ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। ব্যাংকিং খাতের নীতিনির্ধারণী বিষয়, বিশেষ করে মুদ্রানীতির মাধ্যমে বাজারে অর্থের জোগান বাড়ানো-কমানোর কাজও করে এই ব্যাংক। কিন্তু সম্প্রতি যেসব নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত হয়েছে তার সবই বাণিজ্যিক ব্যাংকের তথা ব্যাংক মালিকদের চাহিদার ভিত্তিতে। এমনকি বাজারে অর্থের জোগান বাড়ানো-কমানোর কাজও হচ্ছে ব্যাংক মালিকদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। নিয়মনীতি মানার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংককে তোয়াক্কা না করলেও নানা অজুহাতে তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, যে কোনও সময়ের তুলনায় বর্তমানে ব্যাংকগুলো স্বাধীনতাও ভোগ করছে সব চেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। কাজেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কি এখন তাহলে স্বাধীন?

আরও জানা যায়, ‘অতিরিক্ত স্বাধীনতার’ সুযোগেই আগ্রাসী ব্যাংকিং করে ডুবতে বসেছে ফারমার্স ব্যাংক। শুধু ফারমার্স নয়, বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছে। এই আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের ইচ্ছে মতো চলছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনও নিয়ম-নীতি মানছে না তারা। অতিরিক্ত ঋণ বিতরণের ফলে ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা থাকলেও উল্টো বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখন চাপে রাখে।’ তার মতে, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা না মানার কারণে ফারমার্স ব্যাংক এখন বিপদের মুখে।’ এই কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও ক্ষমতা দেওয়া জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পরিদর্শন করতে পারছে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকের দিক থেকে চাপ ও অনিহা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর এসব ব্যাংকের প্রভাবের কারণেই এমনটা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ফারমার্স ব্যাংকের কোনও শাখায় পরিদর্শন করার জন্য গেলে রাস্তা থেকেই ফিরে আসতে হয়েছে। কেবল ফারমার্স নয়, আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংক আছে, সেগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করতে পারেন না।’ তিনি জানান, ব্যাংকগুলো যেমন পরিদর্শনে বাধা দেয়, আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও কর্মকর্তাদের ফিরে আসার জন্য ফোন দেওয়া হয়।

ওই কর্মকর্তার মতে, ‘বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভালো অবস্থানে আছে। তারা নিজেরা তাদের ব্যাংকটিকে ভালো রাখতে চায়, যে কারণে তারা ভালো করছে।’

এদিকে চলতি বছরের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাতের সীমা কমাতে গিয়েও পারেনি। শুধু তাই নয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চাপে ঋণ-আমানত অনুপাতের সীমা সমন্বয়ের সময় নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই বার পিছু হটে। সর্বশেষ (২ জুলাই) ব্যাংকার্স সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঋণ-আমানত অনুপাতের সীমা বেড়ে গেলেও ব্যাংকগুলোকে কোনও ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে না। ওই সভাতেই বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের আরও একটি ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছে। সেটি হলো ৬ শতাংশ সুদে সরকারি ব্যাংকের আমানত বেসরকারি ব্যাংক নিতে পারবে। এক পরিবার থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে চার জন থাকার দাবিও তারা আদায় করে নিয়েছেন। পরিচালক পদের মেয়াদ টানা ৬ বছরের জায়গায় ৯ বছর করে নিয়েছেন। এবারের বাজেটে তারা ব্যাংকের করপোরেট করও কমাতে পেরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক

জানা যায়, এর আগে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা ও সিআরআর কমানোর মতো বেশ কিছু বড় সুবিধা দেওয়া হয়েছে ব্যাংক মালিকদের। ব্যাংক মালিকদের চাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) এক শতাংশ কমানো হয়। যদিও সিআরআর কমানো-বাড়ানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-নির্ধারণী বিষয়। এই এক শতাংশ সিআরআর কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা চলে যায়। মূল্যস্ফীতিকে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েকটি অস্ত্র ব্যবহার করে। এর অন্যতম হলো নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) আর বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ (এসএলআর)। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোকে নিয়ম মেনে আমানতের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। কিন্তু ব্যাংক মালিকদের দাবির মুখে দেশে এবারই প্রথম সিআরআর কমানো হয়েছে।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থা রেপোর মেয়াদ বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়। রেপোর সুদহার ৬ দশমিক ৭৫ থেকে কমিয়ে ৬ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়, যা গত ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। সম্প্রতি প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার বাধ্যবাধকতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তারা নানাভাবে সুযোগ সুবিধা নিতে চাইবে। কিন্তু আমানতকারীদের ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে না পারে, তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক।’ তিনি মনে করেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা যেটুকু আছে, সেটুকু প্রয়োগ করা উচিত।

প্রসঙ্গত, দেশে মোট ৫৭টি ব্যাংকে আমানত হিসাব রয়েছে প্রায় ১০ কোটি। আর ব্যাংক খাতে এখন আমানতের পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা। একটি ব্যাংকে উদ্যোক্তাদের অর্থ থাকে ১০ ভাগের মতো। বাকি ৯০ ভাগ থাকে আমানতকারীদের অর্থ।

আরও পড়ুন- তবু বেড়েছে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা


 

/এএইচ/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা