X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সোনা নিয়ে যা বললেন স্বর্ণকার গিয়াসউদ্দিন

গোলাম মওলা
১৮ জুলাই ২০১৮, ১৫:৩২আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০৬

সোনা

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা নিয়ে আলোচনা এখন দেশজুড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ভল্টে রক্ষিত সোনায় কোনও ধরনের হেরফের হয়নি। যা হয়েছে ইংরেজি-বাংলায় হিসাব লেখার হেরফেরে। যদিও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিবেদন বলছে, তাদের জব্দকৃত সোনার হিসাব ও পরিমাপে গরমিল রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য এই ভুলের জন্য তাদের তালিকাভুক্ত শখ জুয়েলার্সের মালিক গিয়াস উদ্দিন স্বর্ণকারকে দায়ী করেছে। তবে গিয়াস উদ্দিন বলছেন ভিন্ন কথা। বুধবার বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের রাখা চাকতিতে তিনি ৪০ শতাংশ সোনা থাকার কথা বললেও ভুলক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ডবুকে তা ৮০ শতাংশ লেখা হয়। আর এসব তথ্য লিখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা।

বাংলা ট্রিবিউন: চাকতিতে ৪০ শতাংশ সোনা ৮০ শতাংশ হলো কীভাবে?

গিয়াস উদ্দিন: সেটা ২০১৫ সালের কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন শুল্ক গোয়েন্দারা সোনা রাখতে আসে, তখন আমাকে বলা হয়েছিল কী পরিমাণ সোনা আছে তা পরিমাপ করে বের করে দিতে। তখন আমি কষ্টিপাথরে সোনার মান যাচাই করে ৪০ শতাংশই বলেছিলাম, কিন্তু তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রেকর্ডবুকে যিনি লিখছিলেন তিনি ভুলে ইংরেজিতে ৪০-এর জায়গায় ৮০ লিখেছিলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: ৪০-এর জায়গায় ৮০ লেখা ওই কর্মকর্তা কে ছিলেন?

গিয়াস উদ্দিন:  আমি যখন সোনার পারসেনটেজ বলছিলাম খুব সম্ভবত সেটা লিখছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা অরবিন্দ বাবু। তবে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা কানু দাও সেখানে ছিলেন। যতটুকু মনে পড়ে, অরবিন্দ বাবু অথবা কানু দা এই দুজনের যেকোনও একজন লিখেছিলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কাজ কী, আর অরবিন্দ বাবু ও কানুদার কাজ কী?

গিয়াস উদ্দিন: আমার কাজ সোনার পরিমাপ ও বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা। আর উনাদের কাজ হলো আমি যে পরিমাপ বা শতাংশ বলবো, উনারা সেটা কাগজে লিখবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে ভুলটা আসলে কার?

গিয়াস উদ্দিন: আমি তো বলার সময় ঠিকই বলেছিলাম, কিন্তু উনারা লেখার সময় বাংলার বদলে ইংরেজিতে লিখেছেন। প্যাঁচটা লেগেছে এখানেই, লেখার সময়।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, তাদের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার (আপনি) এই ভুলটি করেছিলেন।

গিয়াস উদ্দিন: আমি তো লিখি না। আমি শুধু পরীক্ষা করে যেটা বলি, সেটা লিপিবদ্ধ করেন বা লেখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ওই দিন সেখানে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাও ছিলেন।

বাংলা ট্রিবিউন: শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের জমা দেওয়া ওই সোনার চাকতি কি কমানো বা ছোট করার সুযোগ আছে?

গিয়াস উদ্দিন: শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ওই দিন দুটি চাকতি জমা দিয়েছিল। দুটি চাকতি জমা রাখার সময়ও আমি পরিমাপ করে দেখেছি, সোনা ছিল গড়ে ৪০ শতাংশ, এখনও তা-ই আছে।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে চাকতির সোনার পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলো কেন?

গিয়াস উদ্দিন: প্রশ্ন তুলেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ, এ ব্যাপারে উত্তরও তারাই দিতে পারবে। যে চাকতিটার কথা বলা হয়েছে সেটা আমি ৪০ শতাংশ বলেছি। এটা নিয়ে শুল্ক বিভাগ কথা বলার পর এয়ারপোর্টের কাস্টমস অফিসার ও গুদাম সংরক্ষক হারুন সাহেবকে ডাকা হয়। তিনি এসে বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত দিয়ে গেছেন, তিনি যে চাকতি দিয়ে গেছেন ভল্টে সেই চাকতিই সংরক্ষিত আছে।

বাংলা ট্রিবিউন: শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কি কোনও স্বার্থ আছে বলে আপনি মনে করেন?

গিয়াস উদ্দিন: হয়তো তাদের কোনও স্বার্থ নেই। তারা তো পরিদর্শন করেছে। এটা ২০১৫ সালের ঘটনা। আমি যতদূর জানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সময়ে কে বা কারা অভিযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের রক্ষিত ভল্টে সব সোনা পাথর হয়ে গেছে। ভল্টে কোনও সোনাই নেই। সব সোনা বাইরে চলে গেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের ভেতরে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ পরিদর্শন করে। কিন্তু পরে তারা দেখতেও পেয়েছে, সোনা এক রতিও কমেনি বরং বেড়েছে ।

বাংলা ট্রিবিউন: কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ বলছে ২২ ক্যারেট সোনা ১৮ ক্যারেট হয়েছে, এটা হলো কীভাবে?

গিয়াস উদ্দিন: আমি সোনার মান যাচাই করেছি অ্যানালগ পদ্ধতিতে—কষ্টিপাথরে। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ডিজিটাল মেশিনে করেছে। ফলে হয়তো দুইজনের হিসাবে দুই রকম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা মাপার মেশিন আধুনিক জার্মান মেশিন। সেখানে বাতাসের চাপও পৃথক করা যায়।

বাংলা ট্রিবিউন: তাই বলে ২২ ক্যারেট সোনা ১৮ ক্যারেট হবে?

গিয়াস উদ্দিন: সোনা তো বদল হয়নি, অথবা বাইরেও যায়নি। যেখানকার সোনা সেখানেই আছে। সোনা ২২ ক্যারেট, ২১ ক্যারেট হতে পারে। ১৮ ক্যারেট ২২ ক্যারেট হতে পারে না। এত ভ্যারি করে না। বাংলাদেশ ব্যাংকে এয়ারপোর্ট থেকে চোরাইপথে আনা সোনা জমা হয়। যারা চোরাইপথে সোনা আনে তারা বিভিন্ন গ্রেডের সোনা আনে। সেখানে ১৮ গ্রেড, ২১ গ্রেড, ২২ গ্রেডের সোনা থাকে। ২২ ক্যারেটের সিল-ছাপ্পড় ওখানে মারা নাই। আমি কষ্টিপাথরে ঘষে যা পেয়েছি তাই বলেছি। কিন্তু উনারা নাকি সব গড়পরতা ১৮ ক্যারেট লিখেছে। উনাদের এই কথার কতটুকু সত্যতা আছে সেটা তো আমি বলতে পারবো না।

বাংলা ট্রিবিউন: ধন্যবাদ আপনাকে।

গিয়াস উদ্দিন: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ।

/টিএন/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা