X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে বিদ্যুৎ আমদানিতে আগ্রহ

সঞ্চিতা সীতু
১৯ জুলাই ২০১৮, ০৯:০৬আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৮, ১৫:৪২

বিদ্যুৎ প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতেই সরকারের এখন আগ্রহ বেশি। দাম কম হওয়ার কারণেই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির প্রতি জোর দিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগকে নেপাল ও ভুটানের জল বিদ্যুতে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বিইআরসি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘তাদের দেশে ওখানে বিদ্যুতের দাম কম হওয়ার কারণেই আমরা আমদানি করছি। তাদের ওখানে দাম বেশি হলে তো আমরা দেশেও উৎপাদন করতে পারতাম।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জ্বালানির দর বেশ পড়ার কারণে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ছে।’

ভারত থেকে এখন প্রতিদিন ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।এর বাইরে আরও ৫০০ মেগাওয়াট আমদানির চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভারতের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে সহসা চুক্তি করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘এনবিআরের অভিমতের অপেক্ষায় রয়েছি।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে এখন তরল জ্বালানিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। গত আট বছরে দেশে মিশ্র জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হলেও মূলত তেলচালিত বিদ্যুতের উৎপাদন যে হারে বেড়েছে, অন্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুতের উৎপাদন সেই হারে বাড়েনি। জ্বালানির দরের ভারসাম্য রক্ষায় কয়লাকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও এখনও কোনও কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসেনি।’

দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের চেয়ে বেশি দরে বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে।পিডিবি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত দুই অর্থ বছরে দেশে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে যথাক্রমে (২০১৫-১৬) ১১ দশমিক ৬৭ টাকা এবং (২০১৬-১৭) ১১ দশমিক ২৩ টাকায় বিদ্যুৎ কিনেছে।একই জ্বালানিতে একই সময়ে দেশের ভাড়ায় চালিত ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুতের দাম পড়ছে প্রতি ইউনিট যথাক্রমে ১০ টাকা এবং ৯ দশমিক ৬৪ টাকা। অন্যদিকে ডিজেলচালিত বিদ্যুতের দাম পড়েছে আরও বেশি। ভাড়ায় চালিত ডিজেল নির্ভর একই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের দর পড়ছে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২৬ দশমিক ৫৭ টাকা  ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাম আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ২৭ টাকা।

এর বিপরীতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর পড়েছে ৫ দশমিক ০৪ টাকা। পরবর্তী বছর এই দরের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫২ টাকা।

কম দামে গ্যাস গ্যাস সরবরাহ করেও কমে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।তেল ও গ্যাসে উৎপাদিত বেসরকারি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯২ টাকায় এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩৬ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে।গড় বিদ্যুতের দামও আমদানি করা বিদ্যুতের দামের তুলনায় বেশি।

তবে শুধু গ্যাসে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম বেসরকারি পর্যায়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম পড়ছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৩৮ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৭৫ টাকা।

সরকার গত অর্থবছরে ভারতের এনভিভিএন লিমিটেড এর কাছ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনেছে প্রতি ইউনিট ৩ দশমিক ৭৯ টাকায়। পিটিসি ইন্ডিয়ার কাছ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট কিনেছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা এবং ৪০ মেগাওয়াট কিনেছে ৫ দশমিক ১২ টাকায়। ভেড়ামারা দিয়ে এই বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। মোট ৫০০ মেগাওয়াটের মধ্যে সঞ্চালন ক্ষতি পোষাতে ৪০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত কেনা হয়।এছাড়া ত্রিপুরা থেকে এনভিভিএনের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয় ৬ দশমিক ৮০ টাকায়। এই বিদ্যুতের গড় দাম পড়ছে ৫ দশমিক ৫২ টাকা।

নতুন করে যে ৫০০ মেগাওয়াট আমদানি করা হচ্ছে সেখানে এই দর দেশীয় বেসরকারি উৎপাদনকারীদের তুলনায় কম। পিডিবি বলছে, স্বল্প মেয়াদে ৩০০ ও ২০০ মেগাওয়াট করে ভারতের দু’টি কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনা হবে। সরকার স্বল্প ও দীর্ঘ দুই মেয়াদে বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বল্প মেয়াদে ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দীর্ঘমেয়াদে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।২০৩৩ সালের ৩১ মে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।

এনভিভিএন (ইন্ডিয়া) থেকে স্বল্প মেয়াদে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৭১ পয়সা দরে দৈনিক ৩০০ মেগাওয়াট ও পিটিসি ইন্ডিয়া থেকে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৮৬ পয়সা দরে দৈনিক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। আর দীর্ঘ মেয়াদে এনভিভিএন প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৪৮ পয়সা মূল্যে ৩০০ মেগাওয়াট এবং পিটিসি থেকে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৫৪ পয়সা মূল্যে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে ।

এই দামও এখন উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় অনেক কম।পিডিবি বলছে, আগামী বছর দেশে আরও অন্তত এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট তেল চালিত বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি হবে।এতে দেশে বেসরকারি উৎপাদনকারীদের দর আরও বাড়বে।

আরও পড়ুন- এলএনজি নিয়ে নতুন সংকটের আশঙ্কা

 

 

/এমএনএইচ/আপ-এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই গ্রেফতার
ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই গ্রেফতার
‘কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে’
রানা প্লাজার ভুক্তভোগীর আক্ষেপ‘কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে’
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান