X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া জামানতে ঋণ নেওয়া কি বন্ধ হবে?

গোলাম মওলা
২০ আগস্ট ২০১৮, ১৭:১২আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৮, ১৫:২৯

টাকা অসৎ গ্রাহকরা যাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারে, সেজন্য সব গ্রাহকের জমা দেওয়া জামানতের ওপরে নজর রাখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তাই নয়, এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি কলাটোরেল ইনফরমেশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে ঋণের আবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) হালনাগাদ রিপোর্টের মতোই বন্ধকি রাখা জামানতের রিপোর্টও দাখিল করতে হবে। এমনকী ঋণ মঞ্জুরের নথিতেও হালনাগাদ জামানতের রিপোর্ট থাকতে হবে। ভুয়া জামানত বা একই জামানত একাধিক ব্যাংকে বন্ধক রাখা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামানতের তথ্যভাণ্ডার গঠন করা হলে ঋণেও স্বচ্ছতা আসবে। ঋণ দেওয়ার আগেই গ্রাহক এবং তার সম্পদ সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এতে ব্যাংকগুলোর জন্য সঠিক গ্রাহক নির্বাচন করা সহজ হবে। ফলে ঋণের ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে যাবে।’
জানা গেছে, ঋণ তথ্যভাণ্ডারের মতোই জামানত তথ্যভাণ্ডার গঠন গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য বিশেষ একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যাংকের প্রত্যেক গ্রাহকের বন্ধকি রাখা জামানতের সব তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর তথ্যভাণ্ডারে জমা হচ্ছে। এখন ব্যাংকগুলোর কাছে গ্রাহকের জামানত রাখা সব সম্পদের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামানতের জালিয়াতি বন্ধে এখন থেকেই বন্ধক রাখা সম্পত্তির সিআইবি রিপোর্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি কলাটোরেল ইনফরমেশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ভবিষ্যতে ব্যাংক থেকে ভুয়া জামানতের বিপরীতে ঋণ নেওয়া বন্ধ হবে। তাতে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও কমবে। সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অসৎ ব্যবসায়ীরা যাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকেও যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।’
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, জামানত তথ্যভাণ্ডারের সফটওয়্যারটি চূড়ান্ত করার কাজ প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কলাটোরেল ডাটাবেজের তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার প্রাপ্তি সাপেক্ষে সেটিকে উন্নয়ন করে সফটওয়্যার সিস্টেমে ডিপ্লয় করার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে সিস্টেমটির পারফরম্যান্স টেস্টিং সম্পন্ন করা হবে। এর আগে তথ্যভাণ্ডার তৈরির অগ্রগতি জানতে চেয়ে গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এই চিঠির জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এক চিঠিতে এসব কথা জানায়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কলাটোরেল ইনফরমেশন সিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আগামী মাসে (সেপ্টেম্বর) ব্যাংকগুলোতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আর কলাটোরেল ইনফরমেশন সিস্টেমের আনুষ্ঠানিক কাজ চালুর আগে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ‘ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর’ (সিআইবি) আরও আনুমানিক ছয় মাস সময় প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এটি চালু হতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে, ঋণের বিপরীতে জামানত সংক্রান্ত তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এর সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন করা প্রয়োজন।
এদিকে, এ বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছে— ঋণের বিপরীতে জামানত সংক্রান্ত প্রতারণা ও দুর্নীতিরোধে ঋণ-শৃঙ্খলা জোরদারকরণের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি থেকে বিদ্যমান আইনি কাঠামোতেই কলাটোরেল ডাটাবেজ প্রস্তুতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ডাটাবেজের ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত নিয়ে জাল-জালিয়াতির ঘটনা, এ সংক্রান্ত প্রতারণা ও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র স্থাবর জামানতের (ভূমি, দালান, ফ্লাট এবং যন্ত্রপাতি) তথ্য ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই ডাটাবেজ ‘কলাটোরেল ইনফরমেশন সিস্টেম’ নামে নতুন সিস্টেমে পরিচালিত হবে। প্রতি তিনমাস পর জামানতের তথ্য এই সিস্টেমে আপলোড করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রতি ত্রৈমাসিকের তথ্য পরবর্তী মাসের ২০ তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে। ঋণ মঞ্জুরির সময় কলাটোরেল নেওয়া হবে, এমন সম্পদের সিআইবি রিপোর্ট ওই সিস্টেম থেকে সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক। সিস্টেমে পৃথক ফাইলে জামানত রাখা সম্পদের যাবতীয় তথ্য আপলোড করতে হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু তদন্তে ঋণের বিপরীতে একই জামানত একাধিক ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে ঋণ নেওয়া বা ভুয়া জামানত বন্ধক দিয়ে ঋণ নেওয়ার ঘটনা ধরা পড়েছে। এছাড়া, জামানতের মূল্য বেশি দেখিয়ে ঋণ নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রখর রোদে নষ্ট হচ্ছে মাঠের ফসল, বৃষ্টি পেতে নামাজে মুসল্লিরা
প্রখর রোদে নষ্ট হচ্ছে মাঠের ফসল, বৃষ্টি পেতে নামাজে মুসল্লিরা
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, ৫ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ
সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে চাকরি, ৫ ক্যাটাগরির পদে নিয়োগ
অলিম্পিকের আগে জার্মানিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ শায়েরা-রবিউলদের
অলিম্পিকের আগে জার্মানিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ শায়েরা-রবিউলদের
জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রস্তুতি ক্যাম্পে ডাক পেলেন সাইফউদ্দিন
জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রস্তুতি ক্যাম্পে ডাক পেলেন সাইফউদ্দিন
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা