X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব কারণে প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:০৯আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৫৫

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক-২০১৮তে বাংলাদেশের অবস্থান

গ্লোবাল কম্পিটিটিভ ইনডেক্স (জিসিআই) বা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে গতবছরের চেয়েও তুলনামূলক ভালো ফল করলেও অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সামগ্রিক বিবেচনায় একধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ।  এবছর ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩। ২০১৭ সালে এই অবস্থান ছিল ১০২। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

পিছিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে পণ্য বাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের গতিশীলতা আনার ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। আর সিপিডি বলেছে, গত এক বছরে বাংলাদেশ বেশ কিছু খাতে উন্নতি করলেও দুর্নীতি, অবকাঠামোগত সমস্যা, উচ্চ কর হার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগসহ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মোট ১৬টি সমস্যার কারণে সূচকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ।

বুধবার (১৭ অক্টোবর) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) বিশ্বব্যাপী একযোগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।  রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ডব্লিউইএফ এর পক্ষে বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

প্রতিবেদন প্রকাশের সময় জানানো হয়েছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি হলেও জরিপটি চালানো হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর ১৪০টি দেশে এ জরিপ চালানো হয়। এতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩তম। ২০১৭ সালে এ জরিপ চালানো হয়েছিল ১৩৫ টি দেশের ওপর। তখন বাংলাদেশের  অবস্থান  ছিল ১০২তম।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, এবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই সূচক তৈরির মেথোডলোজিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তুলনা করার সুবিধার জন্য এ প্রতিবেদনে গত বছরের সূচকের অবস্থানও প্রকাশ করা হয়েছে। একটি দেশের অবস্থান বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, পণ্য বাজার, শ্রম বাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের আকার, বাজারের গতিশীলতা, নতুন ধারণার আত্মীকরণ--এই ১২টি মানদণ্ড ব্যবহার করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ১০০ ভিত্তিক সূচকে সব মিলিয়ে এবার বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ৫২.১, যার গতবছরের স্কোরের চেয়ে ০.৭ বেশি।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিচারে সূচকের মানদণ্ডগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, শ্রম বাজার, বাজারের আকার, উদ্ভাবনী ক্ষমতায় বাংলাদেশের উন্নতি হলেও পণ্য বাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের গতিশীলতায় অবনতি হয়েছে।

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির কর্মকর্তারা

বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ১৬টি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে যা এক ধাপ অবনমনে প্রভাব ফেলেছে । এগুলো হচ্ছে দুর্নীতি, অবকাঠামোগত সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দক্ষ কর্মীর অভাব, দুর্বল শ্রম আইন, অর্থের যোগানে সমস্যা, অস্থিতিশীল ব্যবসায়িক নীতি, উচ্চ কর হার, সরকারের স্থিতিশীলতা, অপরাধ ও চুরি, জটিল কর নীতি, প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও সৃজনশীলতার অভাব, দুর্বল জনস্বাস্থ্য, বৈদেশিক মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি এবং কঠোর শ্রমনীতি। গত বছরের তুলনায় এর ৬টি সূচকে সামান্য উন্নতি হলেও তা অবনমন ঠেকাতে যথেষ্ট ছিল না।

এ বিষয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্য দেশগুলো এগিয়েছে দৌড়ানোর ভিত্তিতে, আর আমরা এগুচ্ছি হাঁটার ভিত্তিতে। ফলে আমাদের উন্নয়ন ধীরগতির, আমাদের চেয়ে অন্যরা এগিয়ে গেছে।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সার্বিকভাবে এবার বাংলাদেশের পয়েন্ট কমেনি বরং শূন্য দশমিক ৭ পয়েন্ট বেড়েছে। কিন্তু এবার নতুন করে তথ্য প্রযুক্তি খাত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ খাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে থাকায় সার্বিকভাবে অবস্থানগত পরিবর্তন হয়েছে।’

ড. মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, এই প্রতিবেদনের জন্য ১০ কোটি টাকার ওপরে মূলধন রয়েছে এমন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ওপর চালানো জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী মনে করেন দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কমে গেছে। আর জাতীয় নির্বাচনের বছর হলেও ২০১৮ সালকে তেমন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন না ব্যবসায়ীরা। তবে  তারা রেমিটেন্স, উৎপাদন, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান ইত্যাদি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম নাম ৪ ধাপ এগিয়ে ৭৪ স্থানে উঠে এসেছে, কম্বোডিয়া এক ধাপ এগিয়ে ১০৯তম স্থানে রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তালিকায় দেখা যায়, সুইজারল্যান্ডকে পেছনে ফেলে এবার শীর্ষস্থান ফের দখলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির স্কোর ৮৫ দশমিক ৬। সিঙ্গাপুর ও জার্মানি রয়েছে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে। শীর্ষ ১০-এ থাকা অন্য দেশগুলো হলো যথাক্রমে- সুইজারল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ড, হংকং, যুক্তরাজ্য, সুইডেন ও ডেনমার্ক। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া এক ধাপ এগিয়ে ২৫তম, থাইল্যান্ড দুই ধাপ এগিয়ে ৩৮তম, ইন্দোনেশিয়া দুই ধাপ এগিয়ে ৪৫, ফিলিপাইন ১২ ধাপ এগিয়ে ৫৬তম স্থানে রয়েছে।

এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। ৬২ স্কোর নিয়ে ভারত আছে সূচকের ৫৮ নম্বরে। গতবারের চেয়ে পাঁচ ধাপ উন্নতি হয়েছে দেশটির। শ্রীলঙ্কা ৫৬ স্কোর নিয়ে সূচকের  ৮৫তম, ৫১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান সূচকের ১০৭ নম্বরে এবং নেপাল ৫০.৮ স্কোর নিয়ে ১০৯ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মালদ্বীপ, ভুটান ও আফগানিস্তানের ওপর এ জরিপ চালানো হয়নি।

/জিএম/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা