X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঋণ দেওয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো

গোলাম মওলা
২২ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৫৯আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৫৯

টাকা দেশের ৩০টিরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এখন নগদ টাকার সংকট চলছে। বাকি ব্যাংকগুলোও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে ব্যাংক খাতে এখন ঋণ বিতরণ কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ হচ্ছে না একদমই। ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুটি কারণে ব্যাংকগুলো এখন সর্তকতার সঙ্গে এগুচ্ছে। প্রথমত, যে সব ব্যাংকের কাছে ঋণ দেওয়ার মতো নগদ টাকা নেই তারা বসে আছে। আর যাদের হাতে টাকা আছে তারা সর্তকতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এই মুহূর্তে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনও ঝুঁকি নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না এসব ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যও বলছে, গত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। গত আগস্ট শেষে ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমেছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে। এত কম প্রবৃদ্ধি গত আড়াই বছরে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪.৮২ শতাংশ। অথচ চলতি বছরের শুরুতেও বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আর কখনই অস্থিতিশীল হবে না। তবে ব্যাংকগুলো নিজেরা এখন একটু রক্ষণশীল ভঙ্গিতে এগোচ্ছে। তাছাড়া সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা থাকলেও সব ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করেনি। এ কারণে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। এ কারণে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে।

এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নির্বাচনের বছরে এমনিতেই ব্যাংকগুলো বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে দেখে শুনে ঋণ দেয়। কিন্তু এবার ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানোর পর থেকে ব্যাংক খাতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়েছে তারা ঋণ দিতে পারছে না। এছাড়া এডিআর সীমার মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্তকতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করছে। যাতে এডিআর নির্ধারিত সীমার ওপরে না উঠে।  ফলে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।

জানা গেছে, সোনালী, জনতা, এমনকি বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক বলে পরিচিত ইসলামী ব্যাংকও গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে।  বড় বড় এই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের চাহিদা মত ঋণ (বিনিয়োগ) দিতে পারছে না। অনেককে নির্বাচনের পর ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে রেখেছে ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে কেপিসি ইন্ড্রাস্ট্রির মালিক কাজী সাজেদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেখানে ইন্ড্রাস্ট্রিতে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার কথা ১১ কোটি টাকা, সেখানে ব্যাংক এক বছরেরও বেশি সময় ক্ষেপণ করে ঋণ দিয়েছে অর্ধেকেরও কম টাকা। ফলে ব্যাংকের দেওয়া এই টাকায় ইন্ড্রাস্ট্রির যে উপকার হওয়ার কথা পুরোপুরি সেটি হচ্ছে না।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কয়েকজন  কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের ব্যাংক বেশ কিছুদিন ধরে নতুন কোনও প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে না। আর আগের যেসব গ্রাহক ও প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগ অনুমোদিত হয়েছিল, সেগুলোতেও অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে  অধিক সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সাধারণ ব্যাংকগুলো তাদের মোট আমানতের ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো মোট আমানতের ৮৫ শতাংশ ঋণ দিতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করেছে ১৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক মোট আমানতের ১০৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ ঋণ দিতে গিয়ে বিপদে পড়েছে। ব্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। একইভাবে সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংক মোট আমানতের ১০৫ দশমিক ৩২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।

কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘনের দায়ে শুধু ওয়ান ব্যাংক এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আর অন্য ব্যাংকগুলোকে শুধু সতর্ক করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেসব ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে, এইগুলোর ব্যাপারে এখনই সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তিনি উল্লেখ করেন, যে সব ব্যাংক বেশি ঋণ দিয়েছে, তাদেরকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে স্বাভাবিক পথে নিয়ে আসা। আর যেসব ব্যাংক মূলধন ভেঙে খাচ্ছে, সেইসব ব্যাংকের মালিকরা মূলধন সহায়তা দেবে। আর জনগণের টাকায় সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা বন্ধ করতে হবে। বাজেট থেকে মূলধন সহায়তা না দিয়ে বরং ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দেবে। সেই ঋণের টাকা সরকার না নিয়ে মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলোকে দিয়ে দেবে। এভাবে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করতে হবে।

 

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা