X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের গ্রাহক ভোগান্তি: ইভিসি মিটার পেতে আরও একবছর অপেক্ষা!

সঞ্চিতা সীতু
১৪ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৪৩আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৪৬

গ্যাসের গ্রাহক ভোগান্তি: ইভিসি মিটার পেতে আরও একবছর অপেক্ষা! গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ব্যর্থতার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ইলেক্ট্রনিক গ্যাস ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার স্থাপনে আরও একবছর সময় বাড়ানো হয়েছে। দীর্ঘদিনের অভিযোগ, গ্রাহক গ্যাস ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল দিচ্ছেন।

এ ক্ষেত্রে শিল্প-কারখানা, সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ারের মতো বড় গ্রাহক বিতরণ কোম্পানির অবিচারের শিকার হচ্ছে। এই সমস্যা দূর করতে ইভিসি মিটার স্থাপনের জন্য ২০১৫ সালে তিন বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর তাদের আরও একবছর সময় দেওয়া হচ্ছে। যদিও এই একবছরেও ব্যর্থ হলে বিতরণ কোম্পানিকে কোনও ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হবে কিনা, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশনা না দিয়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থা—বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই সময় বাড়িয়েছে।

পেট্রোবাংলার হিসেবেই বলা হচ্ছে, সারাদেশের ১৬ ভাগের মতো গ্যাস ব্যবহার করা হয় আবাসিকে। বাকি গ্যাসের পুরোটা শিল্প, বাণিজ্য, সারকারখানা ও চা বাগানে ব্যবহার করা হয়। বিতরণ করা গ্যাসের একটি বড় অংশই অবৈধভাবে ব্যবহার হয় বলে অভিযোগ আছে। বিতরণ কোম্পানির এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে অবৈধ ব্যবহার হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে।

এই প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, যখন মাস শেষে গ্যাসের হিসাব করা হয়, তখন ক্রয়-বিতরণের মধ্যে তেমন কোনও পার্থক্য পাওয়া যায় না। উল্টো কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখানো হয় বিতরণ কোম্পানিগুলো পেট্রোবাংলার কাছ থেকে যে গ্যাস কিনছে, তার চেয়ে বেশি গ্যাস বিক্রি করছে। এতে অবৈধ ব্যবহার বন্ধের দিকে নজর থাকে না বিতরণ কোম্পানিগুলোর।একইভাবে গ্রাহকসেবার দিকেও তাকায় না তারা।

গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে তিন বছরের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান করার নির্দেশ দেয় বিইআরসি।  কিন্তু রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হবে বলেই বিতরণ কোম্পানি ইভিসি স্থাপনে অনীহা দেখায় বরাবর। 

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ইভিসি মিটার স্থাপনে বরাবর অনীহা দেখিয়ে আসছে। সরকার চাইলে দ্রুত এই মিটার স্থাপন করা সম্ভব। গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রাধান্যে থাকা উচিত।’

জানতে চাইলে বিইআরসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ধরা যাক একজন গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার সময় ১৫ পিএসআই চাপে গ্যাস দেওয়ার অঙ্গীকার করে বিতরণ কোম্পানি। কিন্তু যেহেতু গ্যাসের সংকট রয়েছে, তাই ওই গ্রাহক ১৫ পিএসআই থেকে কম চাপে গ্যাস পায়। কোনও কোনও সময় চাপের পরিমাণ ২/৩ পিএসআইতে নেমে আসে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানি যখন সাধারণ মিটারে বিল করে, তখন সার্বক্ষণিক চাপ ১৫ পিএসআই ধরেই বিল করে। এক্ষেত্রে যেসব গ্রাহক আরও বেশি চাপে গ্যাস নিচ্ছে, তাদের আরও বেশি আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাস না দিয়েই বিল পেয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন থেকে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকায় জ্বালানিখাতের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিষয়টি মূল্যায়ন করতে গণশুনানির সময় বিইআরসি একটি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়।ওই কমিটি সারাদেশে বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের বিল করার ক্ষেত্রে এই নৈরাজ্যের কথা তুলে ধরেছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, অবিলম্বে সব গ্রাহকের আঙিনায় ইভিসি মিটার বসাতে হবে। সুপারিশে মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, ইভিসি মিটার স্থাপনের মাধ্যমে গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের প্রকৃত ব্যবহারভিত্তিক বিল প্রণয়ন করতে হবে। বাণিজ্যিক ছাড়া অন্য বড় ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ইভিসি মিটার স্থাপন করা জরুরি বলে মনে করছে মূল্যায়ন কমিটি।

কমিশনের একজন সদস্য বলেন, ইভিসি মিটার থাকলে গ্রাহক যে চাপে গ্যাস পাচ্ছে, ওই চাপেই বিল আসার কথা।এতে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা হয়। এতে বিতরণ কোম্পানির আয়-ব্যয়র হিসাবেও স্বচ্ছতা আনা সম্ভব।

এ সবের বিপরীতে সম্প্রতি হঠাৎ করেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এক আদেশের মাধ্যমে জানিয়েছে, সব গ্যাস বিতরণ কোম্পানিকে একবছরের মধ্যে ইভিসি মিটার স্থাপন করতে হবে। সে হিসেবে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে আরও একবছর বাড়তি সময় দেওয়া হলো।

দেশে তিতাস, কর্ণফুলী, জালালাবাদ, বাখরাবাদ, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পান গ্রাহকপর্যায়ে গ্যাস দিয়ে থাকে। পেট্রোবাংলা উৎপাদন কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কিনে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে।এলএনজি আসায় ভবিষ্যতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে এক্ষেত্রে ইভিসি না থাকলে গ্রাহক আরও বড় লোকসানে পড়বে।

জানতে চাইলে বিইআরসির একজন কর্মকর্তা বলেন, আরও একবছরেও না পারলে কী হবে, সেই আলোচনা এখনও হয়নি। তবে কমিশন মনে করছে, আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে সব গ্রাহকের আঙিনায় একবছরের মধ্যে ইভিসি স্থাপন সম্ভব।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি