X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুৎ উৎপাদন: বাড়ছে তেলের ওপর নির্ভরতা, কমছে না দাম

সঞ্চিতা সীতু
০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৩৩আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৪০

বিদ্যুৎ বেশি দামের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ঠিক সময়ে উৎপাদনে না আসায় তরল জ্বালানিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এতে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

গত দুই বছরে ঢালাওভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে ২৪টি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এই পরিস্থিতিকে দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই চুক্তি করেছে। তেলে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে দাম বেশি পড়বে। বিষয়টি স্বাভাবিক। যার মাশুল সাধারণ ভোক্তাদের দিতে হবে। আমরা বারবার বলার পরও সরকার এই প্রক্রিয়া থেকে বের হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, “এটাকে আমি ‘লাইফ সাপোর্ট’ বলি। এই লাইফ সাপোর্ট করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা যতদিন তাদের হাতে থাকবে ততদিন তারা এটা করিয়ে নেবে।"

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিদ্যুতের দামের ওপর এর প্রভাব পড়তেই থাকবে। সাধারণ মানুষের ওপর চাপ থেকেই যাবে।’ তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার মধ্যে তো থাকতে হবে, এ থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার প্রথমে এই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোনও পরিকল্পনা ছিল না। পরে তা করা হয়েছে এবং এখন তা বাড়িয়েই যাচ্ছে সরকার।’

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘পিডিবি থেকে বলা হয়েছিল যে, এই টাকা তাদের দিলে তারা আরও কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। কিন্তু তা না করে দেওয়া হলো বেসরকারি খাতে।’

সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত যেসব কেন্দ্রের কথা বলা হচ্ছে সেখানে তেলচালিত ৫ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি খাতে ৫ হাজার ৯৫৫ মেগাওয়াটের ৩৭টি এবং বেসরকারি খাতে ৬ হাজার ১৭৭ মেগাওয়াটের ৬৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক ৬ হাজার ৩৩৭ মেগাওয়াট, তরল জ্বালানিভিত্তিক ৫ হাজার ৪৯৮ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক ২৭৪ মেগাওয়াট এবং সৌর ২৩ মেগাওয়াট।

২০২১ সাল পর্যন্ত বছরওয়ারি নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে, ১৪ হাজার ৯৫৬ মেগাওয়াটের উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

বর্তমানে যে ২৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে তার মধ্যে ২ হাজার ৯০১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ একেবারেই তরল জ্বালানিনির্ভর। এর বাইরে ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎেকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বৈত জ্বালানিতে (ডুয়েল ফুয়েল)। এসব কেন্দ্রও গ্যাস সংকটের কারণে ডিজেলে উৎপাদন করে।

মোট ২৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে তিনটি সরকারি— মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট, গাজিপুর ১০০ মেগাওয়াট এবং মিরেরসরাই ১৫০ মেগাওয়াট। বাকিগুলো বেসরকারি। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট, চাঁদপুর ২০০ মেগাওয়াট, জুলদা ১৫০ মেগাওয়াট, বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট, বাঘাবাড়ি ২১০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা ১০৫ মেগাওয়াট, আনোয়ারা ৩০০ মেগাওয়াট, পটিয়া ৫০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা ১১০ মেগাওয়াট, বগুড়া ১১৩ মেগাওয়াট, রংপুর ১১৩ মেগাওয়াট, চৌমহনি ১১৩ মেগাওয়াট, ভৈরব ৫০ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট, চাঁদপুর ১১৫ মেগাওয়াট, কাঞ্চন (নারায়ণগঞ্জ) ৫৫ মেগাওয়াট, ফেনী ১১৪ মেগাওয়াট, পটিয়া ১১৬ মেগাওয়াট, ঠাকুরগাঁও ১১৫ মেগাওয়াট এবং ফেনী ১০০ মেগাওয়াট।

দ্বৈত জ্বালানিচালিত তিন কেন্দ্র হলো সিরাজগঞ্জ ৪০০ মেগাওয়াট, ভোলা ২২০ মেগাওয়াট এবং টাঙ্গাইল ২২ মেগাওয়াট।

এ বিষয়ে পিডিবির একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০০৯ সালে বিদ্যুতের সংকট মোকাবিলায় তিন মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাময়িক সমস্যা সমাধানের জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তেলভিত্তিক ও বেশি দামের বিদ্যুৎ দিয়ে সাময়িক সংকট মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসার কথা। এই কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে তেলভিত্তিক বেশি দামের কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু যেহেতু বড় ও সাশ্রয়ী কেন্দ্রগুলো নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে পারেনি, তাই সংকট কাটাতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না।’

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক