X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ

গোলাম মওলা
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৬আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:২১

বাংলাদেশ ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শুধু তাই নয় মাছ, শাকসবজি ও ধান উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এবং জোর কদমে একের পর একের সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিস্ময়কর সব রূপান্তর ঘটছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরণের তিনটি পূর্বশর্ত পূরণ করেছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করবে।’

এদিকে, হংকং-সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের গবেষণা সেল এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইন ২০৩০: আওয়ার লংটার্ম প্রজেকশন ফর ৭৫ কান্ট্রিজ’ শিরোনামের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে ৭৫টি দেশের অর্থনীতি নিয়ে তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এইচএসবিসি’র গবেষণা অনুসারে, আগামী ১২ বছরের মধ্যে ১৬ ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার পথচলা শুরু হয়েছিল শূন্য থেকে। বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান দিয়ে সে সময় গড়ে ওঠে রিজার্ভ। শূন্য থেকে সেই মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রিজার্ভ ২০০৯ সালের তুলনায় এখন ছয় গুন বেড়েছে। গত ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার (তিন হাজার ৩৬৯ কোটি ডলার)। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার (তিন হাজার ১৩৫ কোটি ডলার)।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলে এই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে। স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা ও ডলার— এই তিন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা হয় দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে। এই অর্থ বিভিন্ন দেশের বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করা হয়। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচাও করে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের তৈরি  ‘সরকারের সাফল্যের ১০ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে— বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মুদ্রার চেয়ে অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-এর ব্যবস্থাপনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি উল্লেখ করেন, আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য রিজার্ভের অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হলেও  প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রফতানি আয় বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থান দখল করে আছে। শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় ও কাঁচা পাট রফতানিতে প্রথম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে সপ্তম স্থানে রয়েছে।

এদিকে, জাতিসংঘের সংস্থা এফএও-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। চীন ও ভারতের পরেই এখন বাংলাদেশের অবস্থান। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই অবস্থান ছিল পঞ্চম।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান বলছে, দেশে চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন বেশি। সংস্থাটির মতে, দেশে মাথাপিছু মাছ গ্রহণের চাহিদা ৬০ গ্রাম। অথচ জনগণ এখন গড়ে ৬২.৫৮ গ্রাম মৎস্যগ্রহণ করছে। শুধু তাই নয়, মাছ রফতানি করেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে বাংলাদেশ।  ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশ প্রায় ৬৯ হাজার মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন ছিল ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৪ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ছিল ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৪ মেট্রিক টন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, রফতানি খাতেও বড় অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮২ লাখ (৩৬.৬৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। অথচ ১৯৮১-৮২ সালে তা ছিল মাত্র ৭৫ দশমিক ২ কোটি ডলার। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে,  বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ পৃথিবীর বিভিন্নি দেশে কাজ করছেন। তারা প্রতিবছর ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৩-১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। এছাড়া, ইনফরমাল চ্যানেলে আরও  প্রায়১০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে প্রবেশ করছে। ফলে এই ২৩ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স বৈদেশিক বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে অর্থনীতির গতি সঞ্চার করে চলেছে।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সারির হ্যাটট্রিকে ১১ গোলের ম্যাচ জিতলো মোহামেডান
সারির হ্যাটট্রিকে ১১ গোলের ম্যাচ জিতলো মোহামেডান
গরমে আরও ডায়রিয়া রোগী বাড়ার শঙ্কা
গরমে আরও ডায়রিয়া রোগী বাড়ার শঙ্কা
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের বিষয় যুক্ত করা হবে: পরিবেশমন্ত্রী
জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় জনস্বাস্থ্যের বিষয় যুক্ত করা হবে: পরিবেশমন্ত্রী
সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি বিরোধী দলীয় নেতার
সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি বিরোধী দলীয় নেতার
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের