X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

আশুলিয়ার কয়েকটি ছাড়া বাকি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৫৬আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:১০

কাজে ফিরেছেন পোশাক শ্রমিকরা (ফাইল ছবি)

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো সংশোধনের পর সোমবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব এলাকার কারখানাগুলোতে কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা। তবে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দিয়েও পরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। যদিও এই বিক্ষোভের সঙ্গে কোনও শ্রমিক সংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি।

সোমবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে আটটায় আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় হামিম গ্রুপের শ্রমিকরা মজুরি কাঠামো  প্রথমে রাস্তায় নেমে এসে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক অবরোধ করেন। ৮টা ৪৫ মিনিটে দ্য ড্রেস অ্যান্ড দ্য আইডিয়াল লিমিটেডের শ্রমিকরা জামগড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একই সময় খবর পেয়ে পলমল গ্রুপের দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও জামগড়া এলাকায় এসে বিক্ষোভে যুক্ত হন। তবে তাদের সঙ্গে পোশাক শ্রমিক সংগঠনের কোনও নেতাকে দেখা যায়নি।

জামগড়া এলাকার দ্য ড্রেস অ্যান্ড দ্য আইডিয়াল কারখানার কর্মী আসাদ বলেন, ‘সকাল নয়টার দিকে আমাদের কারখানা ছুটি দেওয়া হলে সবার সঙ্গে আমিও কারখানা থেকে বের হয়ে যাই।’

নাম  প্রকাশ না করে পলমল গ্রুপের এক নারী শ্রমিক জানান, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে কারখানার বেল বাজতে শুরু করলে তারা কারখানা থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাধারণ শ্রমিকরা দাবি করেছেন, মজুরি কাঠামো সংশোধন করা হলেও আগে থেকেই গ্রেড বৈষম্য করে রেখেছে মালিকপক্ষ। আর বেতন যা বেড়েছে তা লোক দেখানো।

পলমল গ্রুপের সাফা গার্মেন্টেসের এক নারী শ্রমিক অভিযোগ করেন—তিনি পাঁচ বছর যাবত ওই কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। একজন সিনিয়র অপারেটর হিসেবে তাকে তৃতীয় গ্রেড দেওয়ার কথা ছিল। অথচ কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে ষষ্ঠ গ্রেড দিয়ে পে-স্লিপ দিয়েছে। এতে তিনি প্রত্যাশিত বেতন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ষষ্ঠ গ্রেড মূলত হেলপারদের বেতনের সমান বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসময় মূল বেতন বাড়ানোর দাবিও জানান ওই নারী পোশাক শ্রমিক।

একই এলাকায় পলমল গ্রুপের আয়েশা ক্লোথিং গার্মেন্টেসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শ্রমিক জানান, ‘তাদের যে দাবি ছিল, তা মেনে নেওয়া হয়নি। তিনি পাঁচ বছর যাবত ওই কারখানায় কাজ করেন এবং তৃতীয় গ্রেডের একজন অপারেটর। তার বেতন ছিল সাড়ে আট হাজার টাকা। এখন লোক দেখানো মাত্র এক হাজার টাকা বেতন বাড়ানো হয়েছে। তার বেসিক বেতন বাড়ানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন। ফলে ওভারটাইমের হারও বাড়বে না। বর্তমানের সিদ্ধান্তে তিনিসহ অন্য কর্মীরা সন্তুষ্ট নন বলে দাবি করেন ওই নারী শ্রমিক।

তবে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করার চেষ্টা করতেই সেখানে আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ এসে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পুলিশ এসময় মাইকে শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায়। আর কাজে যোগ না দিলে তাদের বাড়ি চলে যেতে বলে। এরপর কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে কারখানায় গেলেও বেশিরভাগ শ্রমিক বাড়িতে ফিরে যান। 

ঢাকা-১ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এসপি সানা সামিনুর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকরা সড়কে নেমে অবরোধ করতে চাইলে তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।’

বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি দাবি করেছেন, আশুলিয়া ছাড়া সারাদেশের পোশাক শ্রমিকরা আজ  কাজে যোগ দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, আশুলিয়ার শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় বাইরের কারও ইন্ধন থাকতে পারে। এর সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

পোশাক শ্রমিকদের সংশোধিত মজুরি কাঠামো ঘোষণার পরেও শ্রমিক আন্দোলনের সিদ্ধান্ত ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘না, আজ  থেকে আন্দোলন নয়, কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশোধিত মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হলে সারাদেশের শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে কারখানায় ফিরে গেছেন। তবে সকালে আশুলিয়ার জামগড়া থেকে জিরাবো পর্যন্ত কয়েকটি ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা প্রথমে কাজে যোগ দিলেও পরে তারা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ করেছেন।অথচ যেসব ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছেন, সেগুলোর বেশিরভাগই কমপ্লায়েন্স। তাদের বেতন নিয়ে কোনও ঝামেলা নেই, তারা  আগেই  মজুরি সমন্বয় করে দিয়েছে। এখানে কোনও একটি অদৃশ্য শক্তি আছে, যারা কখনও শিল্পের পক্ষে ছিল না। যারা এরকম করছে, তারা শ্রমিকের বন্ধু না এবং দেশের শত্রু।’

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, ‘সব জায়গায় শ্রমিকরা কারখানায় কাজে গেছেন। যেসব কারখানায় সমস্যা আছে, আমরা শ্রমিকদের বলেছি— মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে।’

এদিকে,সড়ক দুর্ঘটনায় সাভারে শ্রমিক নিহতের গুজবের পৃথক ঘটনায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমিন বাজারের সালেহপুর এলাকার ব্যান্ডো ইকো অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর সঙ্গে মজুরিজনিত কারণে শ্রমিক আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক ছিল না।  

/এসও/এপিএইচ/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে