X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসিআই’র ‘লোকসান’ নিয়ে তদন্ত করছে ডিএসই, প্রথম বৈঠক রবিবার

গোলাম মওলা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪২আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৪

এসিআই’র ‘লোকসান’ নিয়ে তদন্ত করছে ডিএসই, প্রথম বৈঠক রবিবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের সর্বশেষ প্রান্তিকের লোকসানসহ কোম্পানির গত কয়েক বছরের আর্থিক বিবরণীর তথ্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএসই। আগামী রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) প্রথম বৈঠকে বসবে তদন্ত কমিটি।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্য ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রথম বৈঠকে বসবে আগামী রবিবার। আমাদের ১৫ দিন সময় সময় দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারবো। তিনি বলেন, কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে।
ডিএসইর একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, এসিআই কারসাজি করে লোকসান দেখাচ্ছে। তিনি মনে করেন, এসিআইয়ের সাম্প্রতিক বছরগুলোর আর্থিক বিবরণী মনগড়া ও কারসাজিপূর্ণ। কোম্পানিটি তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডের (স্বপ্ন) লোকসানের আড়ালে মূল কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, ৩৬ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের নামে ৯শ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বিষয়টা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন, এটি ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানি নয় যে, মালিকরা যা খুশি তা করবেন। এটি একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। শেয়ারহোল্ডাররাও এই কোম্পানির একাংশের মালিক। তাদের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় করার অধিকার কারও নেই।
অবশ্য এসিআই কোম্পানির সেক্রেটারি মো. মোস্তফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসিআই ওয়ান্ডারফুল বিজনেস করছে। যেটা আমাদের আর্থিক বিবরণীতেই আছে। তবে যেটা হয়েছে তা তেলের দামের কারণে।
এর আগে গত মঙ্গলবার ( ১২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসিআই’র লোকসান নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে। ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি এফসিএমএ। কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোম্পানিটি তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডকে (স্বপ্ন) গত ১০ বছর ধরে তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে এসিআই। এ কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ ও কোম্পানির মালিকপক্ষের প্রতি আস্থায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সমাপ্ত চলতি হিসাববছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর’ ১৮) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে কোম্পানিটি ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। আর শেয়ার প্রতি লোকসান দেখানো হয় ৭৮ পয়সা। অথচ আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। সে বছর ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৫ টাকা ৪৪ পয়সা। এসিআই-এর মতো ব্লুচিপ কোম্পানির এই লোকসানের বিষয়টি পুঁজিবাজার অঙ্গনে বির্তক সৃষ্টি করে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আবেদন জানানো হয়।
এসিআই লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, পাঁচটি কারণে কোম্পানিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণগুলো হচ্ছে- ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, ব্যাংক ঋণের সুদ হার বৃদ্ধি, সহযোগী কোম্পানিগুলো থেকে লভ্যাংশ প্রাপ্তি কমে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং আয়কর খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়া।
টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কাঁচামাল, মোড়কজাত করার উপকরণ এবং সম্পূর্ণ তৈরি পণ্য আমদানিতে কোম্পানিটিকে আগের চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এসব পণ্যের জন্য কোম্পানিটিকে ব্যাপকভাবে বিদেশি বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়।
গত প্রান্তিকের শুরু থেকে ব্যাংক ঋণের সুদ হার বেশ ঊর্ধ্বমুখী। এটি কোম্পানির মুনাফার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আলোচিত প্রান্তিকে অর্থায়ন তথা ঋণের সুদ বাবদ এসিআই লিমিটেড আগের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি ব্যয় করেছে বা করতে হয়েছে। উল্লিখিত প্রান্তিকে অর্থায়ন ব্যয় বাবদ কোম্পানিটির ৭৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আগের বছর একই প্রান্তিকে এই খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ২১ লাখ টাকা।
বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানি রয়েছে এসিআই লিমিটেডের। এছাড়াও এর রয়েছে কয়েকটি অ্যাসোসিয়েট কোম্পানি। এসিআইয়ের মুনাফার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে এসব কোম্পানি থেকে। কিন্তু আলোচিত প্রান্তিকে এসব কোম্পানি থেকে ২০ শতাংশ কম আয় এসেছে এসিআইয়ের ঘরে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী