X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

গাড়িতে সিএনজি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ চায় সরকার

সঞ্চিতা সীতু
০৪ মার্চ ২০১৯, ১৭:৪৫আপডেট : ০৫ মার্চ ২০১৯, ০০:১১

সিএনজি স্টেশন সাশ্রয়ী হওয়ায় এবং পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে দেশের গণপরিবহনে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ব্যবহার শুরু হয় প্রায় দুই দশক আগে। তবে সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণায়ও পরিবর্তন এসেছে। সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি এই সাশ্রয়ী জ্বালানিও আমদানি করতে হচ্ছে এখন। ফলে সরকার আপাতত গাড়িতে সিএনজি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণের পক্ষে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের কথা চিন্তা করলে গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার করাই উচিত। তবে তা করতে হবে গাড়িতে সিলিন্ডারের মান ঠিক রাখাসহ অন্য সব বিষয় নিয়ন্ত্রণে রেখে। যা অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে না। পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর সিএনজি সিলিন্ডার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিএনজির বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক গাড়ি অথবা হাইব্রিড গাড়ির কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শতকের ’৮০ এবং ’৯০-এর দশকে ঢাকার জনসংখ্যা বাড়তে শুরু করে। তখন গণপরিবহনের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ে। এই সুযোগে রাজধানী ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে টু-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার। জ্বালানি তেলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ মোবিল ব্যবহার করে চলতো এই ত্রিচক্রযানে। এর ধোঁয়ায় গোটা শহর আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বছর ২০ আগের ঢাকা যারা দেখেছেন তাদের স্মৃতিতে এখনও তা আছে।

কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ মানুষ, সরকার, পরিবেশবিদ এবং প্রকৌশলীরা এর বিকল্প খুঁজছিলেন। পরিবহনে জ্বালানি খরচ বাঁচানোর চেয়ে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি মিলবে— এমন চিন্তা থেকে গাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাস রূপান্তর করে ব্যবহার শুরু হয়। শুরুতে থ্রি-হুইলারে সিএনজি ব্যবহার শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে বাস, ট্রাকসহ ব্যক্তিগত গাড়িতেও ছড়িয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, তখন মনে করা হতো দেশে বিপুল পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে। এই গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা গেলে দেশ লাভবান হবে। গাড়িতে নিজেদের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এখন সরকার তেলের মতোই এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের ঘাটতি মেটাচ্ছে।

পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল এলাহী বলেন, ‘ওই সময় ঢাকা শহরে গাড়িগুলোতে যে পরিমাণ তেল ব্যবহৃত হতো তাতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছিল খুব। অন্যদিকে পরিবহনের তেল সরবরাহের কারণে তেলে আমদানিও বেশি করতে হচ্ছিল। এই তেল আমদানি সাশ্রয় এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করতেই সিএনজি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় সরকার।’ তিনি বলেন, ‘এতদিন সিএনজি ব্যবহার না হলে ঢাকা শহরের বায়ুর দূষণ বেড়ে যেতো কয়েক গুণ। তখন এটি নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হতো।’

মকবুল এলাহী বলেন, ‘মোট গ্যাসের মাত্র চার শতাংশ গ্যাস সিএনজিতে ব্যবহৃত হয়। এখন সরবরাহ করা ২৭০০ মিলিয়ন গ্যাসের মধ্যে চার ভাগ কত হয়? এই গ্যাসকে তেলে কনভার্ট করলেই বোঝা যাবে কত টাকা বেশি খরচ হতো।’

তিনি বলেন, ‘সিএনজির বিকল্প হিসেবে অনেক কিছু আসতে পারে। তেল ছাড়া আসতে পারে অটো গ্যাস, যা এলপিজি থেকে তৈরি করা হয়। এটিও তেলের মতো আমদানি করেই আনা হয়। ফলে সিএনজির বিকল্প কোনও কিছু আনলে সেটা আমদানি করেই আনতে হবে। তাতে সাশ্রয় হবে না। খরচ বাড়বে।’

জানা যায়, সিএনজি ব্যবহারে একটি গাড়ির ব্যয় সাশ্রয় হয় ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশের মতো। অর্থাৎ ১০০ টাকার পেট্রোল বা অকটেন ব্যবহারে একটি গাড়ি যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে সেই দূরত্ব অতিক্রমে ৬৭ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ টাকার সিএনজি প্রয়োজন হয়। তবে এর সঙ্গে সব থেকে বড় পাওয়া হচ্ছে পরিবেশের সুরক্ষা।

যদিও সিএনজিতে ব্যয় ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যে প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে দিয়েছে তাতে সিএনজির দাম বৃদ্ধি পাবে। সরকার দেশের জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য গাড়িতে সিএনজি ব্যবহার বন্ধ করার পক্ষে। ক্রমান্বয়ে দাম বৃদ্ধির এটি অন্যতম বড় কারণ।

জানা যায়, ২০০০ সালে সিএনজির ব্যবহার শুরুর সময়ে সাড়ে সাত টাকা করে গ্রাহক গ্যাস কিনতো। এখন যার দর ৪০ টাকা। সবশেষ ২০১৭ সালে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সময় গ্রাহক পর্যায়ে এই দর নির্ধারণ করে বিইআরসি। এবার দাম প্রস্তাবে ২৫ ভাগ বৃদ্ধির আবেদন করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। সেই হিসাবে সিএনজির দাম দাঁড়াবে ৪৮ টাকায়। এর বিপরীতে বর্তমানে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি  ৬০ টাকা, অকটেন ১০০ টাকা এবং পেট্রোল ৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় থাকে কার্বন মনোক্সাইড। বিষাক্ত এই গ্যাস খুব সহজেই শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে চলে যায়। সেখান থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তের হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে একটি জটিল যৌগ তৈরি করে।

এ কারণেই সময় বদলানোর সঙ্গে বিভিন্ন দেশ তেলে চলানোর গাড়ি বিক্রি বন্ধ করছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ২০৩০ সালের পর থেকে তরল জ্বালানির গাড়ি বিক্রি বন্ধ করবে। পরিবেশ দূষণের কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ। অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হচ্ছে মিথেন। মিথেন পোড়ালে সামান্য তামপাত্রা বৃদ্ধি ছাড়া পরিবেশের কোনও ক্ষতি হয় না। তবে সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ আরও অনেক বিষয়ে সিএনজি ব্যবহার বিতর্কের মধ্যে পড়েছে।

বুয়েটের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের বহু দেশের গাড়ি এখন বিদ্যুতে চলে। ২০৩০ সালের পর কনভার্সন ইঞ্জিন অথবা তেল বা গ্যাস পুড়িয়ে যে আমরা চলি সেটি থাকবে না বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।’ তিনি বলেন, সিএনজির তুলনায় জ্বালানি তেল চালিত গাড়ির দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। সিএনজিতে একেবারে ক্ষতি হয় না, সেটি বলা উচিত না। কিন্তু তেলের তুলনায় সেটা কিছুই না। এর চেয়েও বেশি ভালো হয় হাইব্রিড গাড়ি অথবা বিদ্যুৎচালিত গাড়ি। এই দুই ধরনের গাড়ি থেকে পরিবেশের কোনও ক্ষতিই হয় না।’ এতে সাশ্রয়ও অনেক হবে বলে মত দেন তিনি।

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সিএনজি সিলিন্ডার প্রসঙ্গ আলোচিত হওয়ার বিষয়ে জানাতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘এগুলো অবশ্যই বিপজ্জনক। তবে বন্ধ করা কোনও সমাধান হতে পারে না৷ তদারকির আওতায় আনতে হবে৷’

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা