X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির, কারণ জানতে ব্যবসায়ীদের ডেকেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী

শফিকুল ইসলাম
২৬ মার্চ ২০১৯, ০৮:০০আপডেট : ২৬ মার্চ ২০১৯, ১৮:০৪

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

অস্থির হয়ে উঠছে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। দেশে সব পণ্যেরই মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এরপরও বাড়ছে মাছ, মাংস, ডিম, তেল ও পেঁয়াজের মতো খাদ্যপণ্যের দাম।

অনেকেরই অভিযোগ, সামনে রোজা; একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই মাসের জিনিসপত্রের অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। তাই এই মূল্যবৃদ্ধি। একটি চক্র এর সঙ্গে যুক্ত।

তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিশেষ তদারকি টিম কাজ করছে বাজারে। তবে এর সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। উল্টো বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের মূল্য। এতে বিপাকে পড়ছেন সমাজের কম আয়ের মানুষ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারও।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পুরো বিষয়টি জানতে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এরইমধ্যে বৈঠকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বুধবার (২৭ মার্চ) বিকাল ৩টায় সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

সূত্র জানায়, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হচ্ছে রমজান। রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে কয়েকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর সেই চাহিদাকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক মুনাফার নেশায় মেতে ওঠে। কেউ কেউ পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এতে বাজার অস্থিতিশীল হয়। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ে। তাই এবার রমজান শুরুর আগেই বাজারের দিকে নজর দিতে চায় সরকার। পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রাখতে চায় সরকার।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা রমজানের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ান। তাই রমজান আসার আগেই এ বিষয়টি নিয়ে কঠোর মনিটরিং করে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঠিকমতো বাজার মনিটরিং না করলে সুবিধাবাদী একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়। তাই এখন থেকেই গভীরভাবে বাজার পর্যালোচনা করা উচিত সরকারের।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এরইমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। এরমধ্যে পেঁয়াজ উল্লেখযোগ্য। গত কয়েকদিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা। ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বেচা হচ্ছে ২৮ টাকা দরে।
এদিকে শীতের সবজি শেষ হয়ে গেছে। শেষ হয়েছে শীতকালীন বিভিন্ন প্রজাতির মাছও। গ্রীষ্মকালীন সবজি এখনও আসেনি বাজারে। সামনে রমজান। এসব কারণে বাজারে সব ধরনের সবজিসহ মাছ ও ডিমের দাম বেড়েছে অনেকটাই। বাজারে এখন ৬০ টাকার নিচে কোনও সবজি নেই বললেই চলে। করল্লার কেজি ১০০ টাকা। ঢেঁড়স বেচা হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। প্রতিদিন বাড়ছে ডিমের দাম। এই সুযোগে কিছুটা বেড়েছে চালের দাম।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রোজার সময় ডাল, তেল, পেঁয়াজ, চিনির বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়। তাই এসব নিত্যপয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

যাত্রাবাড়ী বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলছেন, ‘আমরা কিছুই জানি না। পাইকারি বাজারে বেড়েছে, তাই আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি।’ একই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী এম এ রব খন্দকার বলেন, ‘খামারে দাম বেড়েছে। তাই আমরাও বাড়িয়েছি।’

গাজীপুর বোর্ড বাজারের সোহাগ পোল্ট্রি ফার্মের মালিক স্বপন সরকার বলেন, ‘হ্যাচারিতে একদিনের বাচ্চাসহ মুরগির ওষুধ, খাদ্য ও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। দাম না বাড়িয়ে উপায় কী! আমাদেরও তো বাঁচতে হবে!’

কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। তবে এখন পর্যন্ত পণ্যের সরবরাহে কোনও সমস্যা নেই। তবে অবৈধ মজুত যাতে কেউ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চাহিদার তুলনায় দেশে সব ধরনের পণ্যের মজুত সন্তোষজনক। দেশে কোনও পণ্যের ঘাটতি নেই। সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু রমজানে নয়, সারা বছরই দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে, দাম বাড়বে না। এর জন্য যা করার প্রয়োজন, তা-ই করা হবে। কেউ যাতে বাজার অস্থির করতে না পারে, সে বিষয়ে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করবে।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে ব্যবসায়ীদের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মজুত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। কোনও পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি না থাকলে দাম বৃদ্ধির কোনও কারণ নেই, তা নিশ্চিত করা হবে।’

প্রতি বছরই রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে একটি কুচক্রী মহল অধিক মুনাফার আশায় বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। তাই আসন্ন রমজানে বাজার মনিটরিং সিস্টেম জোরদার করতে সরকার গঠিত বাজার মনিটরিং কমিটিগুলো সরকার পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা