X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তামাকের ব্যবহার কমাতে সাত সুপারিশ

শফিকুল ইসলাম
৩১ মার্চ ২০১৯, ১৩:৪৮আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৯, ১৩:৫৬

তামাক পণ্য নিষিদ্ধ

তামাক পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে আসন্ন বাজেটে সাত দফা সুপারিশের বাস্তবায়ন চায় সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এইসব সুপারিশের বাস্তবায়ন হলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে  বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করা সম্ভব। ত্বরান্বিত করা সম্ভব এমজিডি (সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাস্তবায়নের পথ।

আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিতব্য বাজেটে তামাক পণ্যের ব্যবার কমিয়ে আনতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো: ১. তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বাড়াতে হবে। ২. বিভিন্ন তামাকপণ্য ও ব্রান্ডের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে তামাক ব্যবহারকারীর ব্রান্ড ও তামাকপণ্য পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত করতে হবে। ৩. সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীকে সরকারের করজালের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ৪. পর্যায়ক্রমে সকল তামাকপণ্য অভিন্ন পরিমাণে (শলাকা সংখ্যা এবং ওজন) প্যাকেট বা কৌটায় বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ৫. একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (৫ বছর মেয়াদি) করতে হবে। ৬. সকল প্রকার ই-সিগারেট এবং হিটেড (আইকিউওএস) তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং ৭. স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বৃদ্ধি (২%) করতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) সম্প্রতি এ সব সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি এই সাত দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন করা গেলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করার সহজ হবে। এবং এর মধ্য দিয়ে (টেকসই উন্টনয়ন লক্ষ্যমাত্রা) এসডিজি বাসবায়নের পথ ত্বরান্বিত হবে।      

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা ইতোমধ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) তামাকের ব্যবহার কমাতে সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ২টিতে (নিম্ন এবং উচ্চ) নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়াও তারা বিদ্যমান ৩৫ টাকা এবং ৪৮ টাকা এই দুইটি মূল্যস্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তর (নিম্নস্তর) এবং ৭৫ টাকা ও ১০৫ টাকা মূল্যস্তরকে একত্রিত করে আরেকটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করারও প্রস্তাব করেছে প্রজ্ঞা। উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং সকল ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছে প্রজ্ঞা। 

প্রজ্ঞার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে হবে। একই সঙ্গে ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ৪ দশমিক ৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। 

ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্তকরনের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। তারা ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির ন্যায় ‘খুচরা মূল্যের’ ভিত্তিতে করারোপ করার কথা বলেছে।  প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার উপর ৫ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের উপর ৩ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছে প্রজ্ঞা।  সংগঠনটি সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য করার সুপারিশ করেছে।

প্রজ্ঞা মনে করে এসব প্রস্তাবসমূহ গ্রহণ করা হলে প্রায় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী (১.৩ মিলিয়ন সিগারেট ধূমপায়ী এবং ১.৯ মিলিয়ন বিড়ি ধূমপায়ী) ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। সিগারেটের ব্যবহার ১৪ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিড়ির ব্যবহার ৫ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ৪ শথাংশ হবে । দীর্ঘমেয়াদে ১ মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং ৬ হাজার ৬৮০ কোটি থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে (জিডিপি’র ০.৪ শতাংশ পর্যন্ত) অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরেই তামাক পণ্যের করকাঠামো পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছি, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকরাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। তাই আমরা আবারও দাবি জানাচ্ছি, তামাকের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষায় বাজেটে কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে দাম বাড়াতে হবে। 

বিআইডিএিসএর গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেছেন, তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়ানো হলে, যারা নতুন করে তামাক ব্যবহার শুরু করতে চায় তারা নিরুৎসাহিত হবে। তার মতে, তামাক ব্যবাহারকারীদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কার্যক্রমে তামাক ব্যবহারকারীদের অন্তর্ভুক্ত না করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে তামাক ব্যবহারের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তামাকপণ্যে করারোপরের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তামাকের হাত থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষার জন্য এর মূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনিকে জানিয়েছেন, আসন্ন বাজেটের আগেই এ সব প্রস্তাব নিয়ে স্টেকহোল্ডারতেদর সঙ্গে প্রি বাজেট মিটিং করবেন তিনি। 

 

 

 

/বিএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ