X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

তরমুজের বাজারে আগুন

শফিকুল ইসলাম
০৬ মে ২০১৯, ২২:৩০আপডেট : ০৭ মে ২০১৯, ২২:১৪

দাম বেড়েছে তরমুজের (ছবি: ইন্টারনেট থেকে)

রোজার সময় ফলের কদর বাড়ে। ফল ছাড়া ইফতার কল্পনাই করা যায় না। এদিকে গ্রীষ্মকাল শুরু হলেও পরিপক্ব না হওয়ায় বাজারে এখনও আসেনি চাহিদা অনুযায়ী মৌসুমী ফল। ফলে বাজারে থাকা গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজের ওপর ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি থাকায় সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা তরমুজের দাম হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছেমতো। গত এপ্রিলের শুরুতে যে তরমুজের কেজি ৩০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল এখন তা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। ফলে সরকার ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রমজানে দ্রব্যমূল্য সহসশীল রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও রোজা শুরুর আগেই সেই প্রতিশ্রুতি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নানা অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। এর ওপর চৈত্রের শুরুতেই প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করায় বেশি দাম পাওয়ার আশায় পরিপক্ক হওয়ার আগেই মাঠ থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করেছেন কৃষকরা।

তারা বলছেন, এখন আর মাঠে তরমুজ নাই। তাই বাজারে তরমুজের দাম বেড়ে গেছে।

দেশের বেশিরভাগ এলাকায় তরমুজের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে এর আকার অনুযায়ী। পাঁচ বছর আগেও একটি ছোট আকারের তরমুজ (গড় ওজন ৪ কেজি পর্যন্ত) গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি আকারের তরমুজ (গড় ওজন ৫ কেজি থেকে ১০ কেজি) ৮০ থেকে ১৮০ টাকা এবং বড় সাইজের তরমুজ (১০ কেজি থেকে আধা মণ বা তারও বেশি ওজনের) ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। তবে ইদানিং দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশেষত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও সুপার শপগুলোতে তরমুজ কেজিতে বিক্রির চল শুরু হয়। সে হিসেবে, গত বছর বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে মাঝারি বা বড় আকৃতির তরমুজ ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবারে এর দাম আকাশ চুম্বি।

আজ সোমবার (৬ মে) বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মাঝারি আকারের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়। আকার একটু বড় হলেই তা ৮শ’ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় বিক্রেতারা তরমুজ চার থেকে ৫ টুকরা করে কেজি দরে তা বিক্রি করছেন। বাজারে প্রতি কেজি তরমুজের দাম ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। রাজধানীর সুপার শপগুলোয় এই পদ্ধতিতে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একটি সুপার শপের ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, দাম বেশি তাই ক্রেতার পক্ষে এতো দাম দিয়ে পুরো একটি তরমুজ কেনা সম্ভব হয় না। তাই কেটে সাইজ ছোট করে প্যাকিং করে রেখে দেই। ক্রেতারা ওজন দেখে দাম দেন। 

তিনি জানান, আবার অনেকের পরিবারে লোক সংখ্যা কম। হয়তো বড় সাইজের তরমুজ তার প্রয়োজন হয় না। আবার ছোট সাইজের তরমুজ সচরাচর পাওয়াও যায় না। তাই কাটা ছোট সাইজের তরমুজ পেলে তাদের সুবিধা হয়। তাই এই প্রক্রিয়ায় আমরা বিক্রি করছি। 

আড়তে এখনও মজুত করে রাখা আছে তরমুজ

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক মোবারক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, এ বছর আবহাওয়াজনিত কারণে তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। সারা বছরই বেশি তাপমাত্রা ছিল। অধিক তাপমাত্রা থাকার কারণে তরমুজের বীজ ও চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ফলন ব্যাহত হয়েছে। আবার যেটুকু ফলন হয়েছে তাও বৈশাখ ও নববর্ষকে মাথায় রেখে বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় ক্ষেত থেকে আগেভাগে কেটে আনা হয়েছে। ফলে ভরা মৌসুমে তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে না।

বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাসকে মধু মাস বলা হলেও প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে আম কাঁঠাল এখনও পাকেনি। সরকার ঘোষিত ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী ২০ মে থেকে গুটি আম বাজারে ওঠার মধ্য দিয়ে শুরু হবে আমের মৌসুম। ২৫ মে গোপালভোগ, ২৮ মে ক্ষিরসাপাত আম বাজারে আনতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজারে এখন পাকা আমও নেই। এরপরও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করছে অস্বাভাবিক দামে। ফল না থাকায় সেটাই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ মাসের আগে কাঁঠাল ও লিচুও পরিপক্ব অবস্থায় পাওয়ার কথা নয়।

রাজধানীর ফলের আড়ত বাদামতলী ঘাট ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর ইফতারে ফলের চাহিদা মেটাতে চাপ পড়বে আনারস, আপেল, আঙ্গুর, আনার, পেয়ারা আর খেজুরের ওপর। তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় সে ঘাটতি খানিকটা মেটাবে বাঙ্গি। বাজারে বাঙ্গির সরবরাহ ভালো হওয়ায় দামও আনুপাতিকহারে কম।

বাংলাদেশে সাধারণত সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে ভাজা পোড়া জাতীয় খাবারের পাশাপাশি নানা ধরনের ফল স্থান পায় রোজাদারদের পাতে। তবে এ বছর দেশীয় ফলের পুরো মৌসুম এখনও না থাকায় সে ঘাটতি মেটাতে আমদানি করা ফল খেজুর, আপেল, মাল্টা, নাশপাতি, বেদানার দিকে আপাতত চোখ রাখবেন রোজাদাররা। এসব ফলের দাম সামান্য বাড়লেও তা এখনও নাগালের মধ্যেই আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে রোজার একেবারে শেষ দিকে আম উঠলে দেশি ফলের তৃপ্তি পাবেন রোজাদাররা। আর দেশি অন্যান্য ফলের মধ্যে সারাবছর চাষ করা পেয়ারাও রয়েছে বাজারে। এসব ফলের চাহিদা থাকবে পুরো রমজানজুড়ে।

ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর। ধর্মীয় রীতি অনুসারে, খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙা সুন্নত। তাই রোজাদাররা এ ফলটি ছাড়া ইফতার করার কথা কল্পনাও করেন না। বাজারে নানা ধরনের খেজুর পাওয়া যায়। এর বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা। মধ্যপ্রাচ্যে এবার খেজুরের ফলন কম হওয়ায় দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বাদামতলীর পাইকারি ফল বিক্রেতারা। তবে বাজারে এবার গত বছর আনা খেজুরও রয়েছে। এর মধ্যে মানহীন খেজুর ভালো খেজুরের সঙ্গে মিশিয়ে প্যাকেটজাত করে বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে জরিমানাও দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এ অভিযান রোজার মাসজুড়ে অব্যাহত থাকার ঘোষণা আছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।

বাজারে থাকা আমদানি করাসহ অন্যান্য ফল

প্রকারভেদে খেজুরের দামেও রয়েছে পার্থক্য। খেজুরের দাম সম্পর্কে পাইকারি বিক্রেতা রমজান আলী জানিয়েছেন, দাবাস খেজুর প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, নাগাল সামের খেজুর ১৮০ টাকা, বড়ই খেজুর ২৪০ টাকা, সায়ার ১৭০ টাকা, ফরিদা ৩০০ টাকা, ডেসটিনি ২৯০ টাকা, সুপ্রি ২৯০ টাকা, জাহেদি ২২০ টাকা, ডেট ক্রাউন ২৬০ টাকা, মরিয়ম ৭৮০ টাকা, তিউনিশিয়া ঢালা ৩২০ টাকা, তিউনিশিয়া ক্রাফট ৪৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

রমজানে আপেলের চাহিদাও থাকে প্রচুর। প্রকারভেদে আপেল বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। আপেল আমদানিকারক এম এ কাদের এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল কাদের জানিয়েছেন, বাজারে এখন ফুজি আপেল ১৯০ টাকা, গোল্ডেন ১৮৫ টাকা, গালা ১৫০ টাকা, জাহানী ১৮০ টাকা আর হানি আপেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। আপেলের পাশাপাশি প্রকারভেদে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। 

অন্যদিকে, প্রকারভেদে নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। বেদানার দাম আকার অনুযায়ী নির্ভর করে। ছোট আকারের বেদানা ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের বেদানা ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। আর বড় আকারের বেদানা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।

বাজারে এখন লাল আঙ্গুর সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে ছোট সাইজের সবুজ আঙ্গুর। প্রতি কেজি আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দরে। তবে বাজার ও এলাকা ভেদে দামের তারতম্য রয়েছে।

 

/এসআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ