X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘লাগে এক কেজি, কেনে পাঁচ কেজি’

শফিকুল ইসলাম
১০ মে ২০১৯, ১৭:১৩আপডেট : ১০ মে ২০১৯, ১৮:০৩

রোজায় বেড়েছে পণ্যের দাম

রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকেই বাড়ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। রোজা শুরুর পরও দাম বেড়েই চলেছে। তবে পণ্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও বাজারে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে। প্রায় প্রতিটি বাজারের বেশিরভাগ দোকানেই একই চিত্র। কার আগে কে নেবে, এ নিয়ে যেন ক্রেতাদের মধ্যে চলছে এক ধরনের প্রতিযোগিতা। ক্রেতাদের চাহিদামাফিক পণ্য বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত দোকানিরাও। শুক্রবার (১০ মে) সরকারি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

রোজায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে— এটা এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। বাজারে কোনও পণ্যেরই সংকট নেই। সব পণ্যের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক। এরপরও সব জিনিসের দাম বাড়ছে হু হু করে। পণ্যের দাম ঠিক রাখতে এ বছরও সরকারের কোনও উদ্যোগই কাজে আসেনি। এজন্য অনেকে ব্যবসায়ী, আড়তদার, পাইকারি বিক্রেতাদের দায়ী করলেও বিক্রেতারা উল্টো দায়ী করছেন রমজান উপলক্ষে ক্রেতাদের অধিক পরিমাণের পণ্য একসঙ্গে কেনার মানসিকতাকে।

সব ধরনের সবজির কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা

শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ী বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন রাজধানীর সরকারি একটি হাসপাতালের হিসাবরক্ষক তরিকুল ইসলাম। জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘রোজায় সব জিনিসের দাম বাড়বে এই আশঙ্কায় রোজা শুরুর আগে একদফা বাজার করেছিলাম। আজ আবারও করছি, কারণ সামনে ঈদ। ঈদ উপলক্ষে আরেক দফা দাম বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় আগেই যা যা প্রয়োজন কিনে রাখছি।’ গত সপ্তাহে যা কিনেছেন, তা কি সব শেষ হয়ে গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘না, শেষ হয়নি। তবুও কিনে রাখলাম আর কী। বোঝেনই তো। সামনে ঈদ, রোজারও তো অনেক বাকি আছে। লাগবে তো।’ একসঙ্গে বেশি পরিমাণ না কিনে অল্প অল্প করে কিনলে হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অল্প পরিমাণে কিনলে মন ভরে না। একসঙ্গে বেশি পরিমাণ কিনতে মজাই আলাদা।’

ক্রেতাদের বেশি পরিমাণ পণ্য কিনতে চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী বাজারের মুদি দোকানদার মোবারক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পেছনে ক্রেতাদের এমন মনোভাব অনেকটাই দায়ী। মানুষ বাজারে এসে অহেতুক আতঙ্কের সৃষ্টি করে। দরকার নাই, তারপরেও অপ্রয়োজনে বাজার করা এক শ্রেণির মানুষের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মানুষের লাগে এক কেজি, কেনে পাঁচ কেজি। এমন মনোভাবের কারণে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। অথচ দোষ হয় ব্যবসায়ীদের।’

এ বছর সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে— এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। অন্যদিকে, ‘রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হবে না’ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির এমন ঘোষণার পরও শবেবরাতের আগেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে নিত্যপণ্যের বাজার। বিক্রেতাদের বক্তব্য— রোজায় একদিকে চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে সাপ্লাই কম। এর ওপর ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব, সবকিছু মিলিয়ে এ বছর বাজারে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের জোগান প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছিল না। তাই দাম বেড়েছে।

রাজধানীর সুপারশপ, কাঁচাবাজার বা পাইকারি বাজার কোথাও ক্রেতার কমতি নেই। দেখে বোঝার উপায় নেই— রোজার প্রায় এক সপ্তাহ চলে যাচ্ছে। বাজারে ক্রেতাদের ভিড় রোজার আগের মতোই। এ কারণেই পণ্যের দামের ক্ষেত্রে কোনও ইতিবাচক সাড়া পড়ছে না। এতে বিত্তবানদের সমস্যা না হলেও পুড়ছে নিম্নবিত্তের মানুষ। সবজি থেকে ফল-মাছ এবং মাংস, সবকিছুই বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। গরুর মাংসের দাম ৫২৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও একমাত্র রাজধানীর সুপারশপগুলো ছাড়া কোথাও এদামে গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও সুপারশপের মাংস নিয়ে আছে ক্রেতাতের নানা অভিযোগ। রাজধানীর সব বাজারেই গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজিদরে। খাসির মাংস ৭৫০ টাকা কেজিদরে নির্ধারণ করা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।

রোজায় বেড়েছে সবজির দামও

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অতীতের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ ছোলা, খেসারি, মসুর ডাল, বুট, পেঁয়াজ। ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম আনুপাতিকহারে কিছুটা কম। তবে ফলমূল বিশেষ করে তরমুজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে শসা ও লেবুর দামও।

রাজধানীর কাওরানবাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। পেঁপে ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০, শসা ৬০, টমেটো ৪০ ও করলা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কাঁকরোল ৬৫ টাকা, পটোল ৬০, বরবটি ৬০, কচুরলতি ১৩০ ও কাঁচামরিচ মানভেদে ৭০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ড্রামে সাঁতার কাটা জীবন্ত রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০-৩৬০ টাকায়। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০, আইড় ৪০০-৬০০ টাকা, মেনি মাছ ৪৫০-৫০০, বেলে মাছ প্রকার ভেদে ৪০০-৬০০, বাইন মাছ ৪০০-৬০০, গলদা চিংড়ি ৫০০-৮০০, পুঁটি ২০০-২৫০, পোয়া ৪০০-৬০০, মলা ৪০০-৫০০, চাষের পাবদা ৪০০-৬০০, মৌসুম না হলেও চাষ করা বোয়াল ৪৫০-৬০০, শিং ৪০০-৭০০, দেশি মাগুর ৫০০-৭০০, চাষের পাঙ্গাস ১৫০-১৮০, চাষের কৈ ২০০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।

দ্রব্যমূল্য ও ক্রেতাদের বেশি কেনার প্রবণতা প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। কেউ যাতে বাজার অস্থির করতে না পারে, সেজন্য সরকারের একাধিক সংস্থার মাধ্যমে বাজার মনিটরিং চলছে। তবে ক্রেতাদেরও উচিত সহনীয় পর্যায়ে বাজার করা।’ অস্থির হয়ে বাজার না করার জন্য আবারও ক্রেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।’

আরও পড়ুন:

নিত্যপণ্যের বাজার চড়া, অজুহাত রোজা ও ফণী

 

 

/এফএস/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
বেসিস নির্বাচনের ৩৩ প্রার্থী
বেসিস নির্বাচনের ৩৩ প্রার্থী
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক