সৌর বিদ্যুতের কাজ পেয়ে এখন আর নিয়মিত সমন্বয় সভায়ও আসছেন না অনেক কোম্পানির প্রতিনিধিরা। কোনও কোনও কোম্পানির নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো হচ্ছে সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে। রবিবার (১৯ মে) সৌরবিদ্যুৎ বাস্তবায়নে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এরপর উদ্যোক্তা মালিকদেরই বৈঠকে আসতে হবে।’
বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন সৌরবিদ্যুতের মোট এক হাজার ৪৬৭ মেগাওয়াটের প্রকল্প সরকারের হাতে রয়েছে। এরমধ্যে ক্রয় চুক্তি সই হয়েছে ৫৮৫ মেগাওয়াটের ১০টি কেন্দ্রের সঙ্গে। আর ছয়টি কোম্পানির ৪৩০ মেগাওয়াট কেন্দ্রকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির হাতে রয়েছে আরও সাতটি কেন্দ্র। যেগুলো সম্মিলিতভাবে উৎপাদন করবে ৪৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, যদিও কাজ পাওয়া বেশিরভাগ কোম্পানিই বসে আছে। মাত্র একটি কেন্দ্র ছাড়া আর কোনও কোম্পানি এখনও কাজ শুরু করতেই পারেনি। তবে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে এই বেহাল দশা হতাশ করেছে সংশ্লিষ্টদের।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে অনেক দূরে রয়েছে দেশ।
রবিবার সৌরবিদ্যুতের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে সানএডিশন হোল্ডিংস নামের একটি কোম্পানি যে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন, তারা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাছাড়া তারা নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ সচিব।
প্রসঙ্গত,গত বছরের নভেম্বরের বৈঠকে সুনামগঞ্জে ৩২ মেগাওয়াট কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধি বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন না। সে সময় প্রতিনিধি না পাঠানোর জন্য কোম্পানিটির কাছে জবাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ।
সচিব আজকের বৈঠকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। আমার সঙ্গে বৈঠক করতে কাদের পাঠাতে হয়, সেটা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বৈঠকে আসতে হবে।’
এ সময় সচিব বলেন, ‘আমার কাছে খবর রয়েছে, অনেকে পিপিএ (বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি) বিক্রির চেষ্টা করছেন। কোনোক্রমেই কাজ নিয়ে তা বিক্রি করা যাবে না। উদ্যোক্তা পরিবর্তনের সুযোগ নেই।’
অভিযোগ উঠেছে, কোনও কোনও কোম্পানি বছরের পর বছর ধরে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ নিয়ে বসে রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তারা আবার সময় বাড়িয়ে নিচ্ছে, কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে না। এদের কেউ কেউ নিজেদের পিপিএ অন্যের কাছে বিক্রির চেষ্টাও চালাচ্ছে। তবে সচিব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘এভাবে পিপিএ বিক্রি করতে দেবে না বিদ্যুৎ বিভাগ।’
জানা যায়, প্রথম দিকে প্রতি কিলোওয়াট ১৮ সেন্টে ক্রয় চুক্তি করা হয়। এখন সরকার এই বিদ্যুতের দাম এক অংকে নামিয়ে আনতে চায়।