‘নগদ’ নামে ডাক অধিদফতর ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু করলেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। থার্ড ওয়েব টেকনোলজিস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছে ‘নগদ’ এর কার্যক্রম। অন্যদিকে, ডাক অধিদফতরের সেবা হলেও দেশের সব পোস্ট অফিসে নেই নগদ-এর সেবা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আদলে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও অনুমোদন না নেওয়ায় আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ২৬ মার্চ ‘নগদ’-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর গ্রাহক সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আদলে ডাক বিভাগ এই কার্যক্রম চালু করলেও দেশের সব ডাক ঘরে এই সেবা নেই।
জানতে চাইলে মিরপুর পোস্ট অফিসের সাব পোস্ট মাস্টার মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ‘নগদ’-এর কার্যক্রম নেই। এজেন্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এটি পরিচালনা করছে।’’
সূত্র জানায়, ‘নগদ’-এর কার্যক্রম পরিচালনা করছে বনানীতে অবস্থিত ‘থার্ড ওয়েব টেকনোলজিস’। ‘নগদ ডট কম ডট বিডি’ নামে একটি ওয়েব সাইটও চালু করা হয়েছে। সেই ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, ‘নগদ’-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির এ মিশুক।
থার্ড ওয়েব টেকনোলজিস লিমিটেডের করপোরেট, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ও পাবলিক রিলেশন হেড সোলাইমান সুখন বলেন, ‘‘ডাক বিভাগের সঙ্গে আমাদের লাইসেন্সিং পার্টনারশিপ রয়েছে। সেই অনুযায়ী ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা আমরা করবো। আমাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়।’’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র বলেন, ‘‘থার্ড ওয়েব টেকনোলজিসের সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ারিং মডেলে চুক্তি হয়েছে। তারা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ‘নগদ’ আলাদা কোনও প্রতিষ্ঠান নয়, ডাক অধিদফতরের একটি সার্ভিস। ‘নগদ’-এর কোনও চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেই। ওয়েব সাইটে এমন তথ্য থাকলে সেটি ভুল। তাদের অনেকগুলো ভুল আছে, সেগুলো সংশোধন করতে জানিয়েছি। মাঝে তারা একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল, সেটি আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।’’
সুধাংশু শেখর ভদ্র আরও বলেন, ‘আমরা কোনও টাকা বিনিয়োগ করিনি। এখানে মুনাফার ৫১ শতাংশ ডাক অধিদফতরের, বাকি ৪৯ শতাংশ থার্ড ওয়েবের। এ চুক্তিরও সময়সীমা আছে। ওই সময়ের পর আমরা নিজেরাও পরিচালনা করতে পারবো অথবা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে পারবো।’
ডাক অধিদফতরের মাধ্যমে ‘নগদ’ পরিচালনা না করা প্রসঙ্গে সুধাংশু শেখর ভদ্র বলেন, ‘এ জাতীয় সেবা আরও যেসব প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে, তারা গ্রাহকের দোরগোড়ায় সেবা দেয় ২৪ ঘণ্টা। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছ। তবে, আমাদের জনবল প্রস্তুত হলে আমরাও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো।’
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে ‘নগদ’-এর কার্যক্রম পরিচালনা করায় আপত্তি জানিয়েছে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ)। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় প্রচলিত মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবার মতো ডাক অধিদফতরের নগদ পরিচালনা নিয়ে আলোচনা হয়। সে সভার অভিমত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, মানি অর্ডার ও ডাক জীবনবীমা ছাড়া অন্যান্য আর্থিকসেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন/অনাপত্তি নিতে হবে। এ ধরনের নতুন আর্থিক সেবা তদারকি বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাভুক্ত হতে হবে। এজন্য ডাক বিভাগ যদি অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে করতে চায়, তবে সেই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক বিভাগের ৫১ শতাংশ শেয়ার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে আইনগতভাবে ‘নগদ’-এর কার্যক্রম পরিচালনায় পোস্ট অফিস আইন সংশোধনের পরামর্শও দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) গত ৩১ মার্চ ‘নগদ’ ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দেয়। সেখানে ‘নগদ’-এর কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুসারে পরিচালনা করতে বলা হয়।
গত ৩০ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে। সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘নগদ’ যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির আওতায় না থাকে, তাহলে দেশের বিদ্যমান সমগ্র পেমেন্ট সিস্টেম তদারকির ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ‘নগদ’ চলছে। তবে, তাদের এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। এ বিষয়ে ডাক অধিদফতেরর সঙ্গে আলাপ চলছে।’’
জানতে চাইলে ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র বলেন, ‘ডাক বিভাগ একটি আইনে পরিচালিত হয়। এ উপমহাদেশে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে থেকে ‘পোস্ট অফিস আইন ১৮৯৮’ অনুযায়ী ডাক বিভাগ আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আইন অনুযায়ী, ডাক বিভাগ ব্যাংকিং সার্ভিস, পোস্টাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রেমিটেন্স ট্রান্সফার সার্ভিস পরিচালনা করতে পারে। ডাক বিভাগ আর্থিক যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা আইন অনুযায়ীই করছে।’ বিদ্যমান আর্থিক সেবামূলক অন্যান্য কাজে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলাদা করে অনুমোদন নিতে হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।