X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

চাহিদামতো আমানত পাচ্ছে না ব্যাংক, আগ্রহ সঞ্চয়পত্রে

গোলাম মওলা
১৯ জুন ২০১৯, ১১:৪৯আপডেট : ১৯ জুন ২০১৯, ১২:৩২

 




টাকা

চাহিদা অনুযায়ী আমানত না আসায় রীতিমতো আগ্রাসী আচরণ করছে বেশ কিছু ব্যাংক। কোনও কোনও ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েও আমানত পাচ্ছে না। বরং আমানতের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে মাত্র চার হাজার ১৭ কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার। 







এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখছি। এই সংকট ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। কারণ, ব্যাংকগুলোতে আগের মতো এখন আমানত আসছে না।’ তার মতে, আমানতের প্রবৃদ্ধি এখন অনেকখানি কমে গেছে। তিনি আরও  উল্লেখ করেন, জাতীয় সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি হওয়ার কারণে ব্যাংকে আমানত না রেখে অনেকেই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে ব্যক্তি খাতে ঋণ বিতরণও কমে গেছে।
ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকের হাতে বিনিয়োগ করার মতো টাকা নেই। এমন পরিস্থিতিতে তারল্য সংগ্রহে আগ্রাসী আচরণ করছে কোনও কোনও ব্যাংক। কেউ কেউ ১৪ শতাংশের বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। কোনও কোনও ব্যাংক পাঁচ বছরে টাকা দ্বিগুণ করার আশ্বাসে আমানত সংগ্রহ করছে। বছরখানেক আগেও আমানতে সুদের হার ছিল সর্বোচ্চ ৮ থেকে ৯ শতাংশ। অধিকাংশ ব্যাংক আমানত বাড়াতে অনেক কর্মকর্তাকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে। এরপরও আশানুরূপ আমানত বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। 
এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, বেশি সুদের কারণে সবাই ঝুঁকছেন সঞ্চয়পত্রে। তারল্যের ২৫-৩০ শতাংশ সঞ্চয়পত্রে চলে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, যে হারে আমদানি বাড়ছে, সেই হারে রফতানি বাড়েনি। আমদানির জন্য ডলার কিনতে গিয়ে টাকার একটা বড় অংশ আটকা পড়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণের কারণেও অনেক টাকা আটকা পড়েছে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাসের শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২০ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা। তিন মাস আগে অর্থাৎ গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর কাছে  আমানত ছিল ১১ লাখ ১৬ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। এই তিন মাসে আমানত বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা টাকার অংকে চার হাজার ১৭ কোটি টাকা। অথচ ২০১৮ সালের প্রথম ৬ মাসে আমানত বেড়েছিল ৫৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা এবং পরের ৬ মাসে বেড়েছিল ৫৬ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংকসহ (সাবেক ফারমার্স) বেশ কিছু ব্যাংক আমানতকারীদের জমানো টাকা ফেরত দিতে না পারার ঘটনায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। আবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও বেশি থাকায় অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন।’  
জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে সম্প্রতি কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও বিক্রি কমছে না। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে ৬৮ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ১৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। আর অর্থবছরের ৯ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। এখন সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৭ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোতে আমানত ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোতে আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এই তিন মাসে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের আমানতও কমে গেছে। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরের শেষে এই ব্যাংকগুলোতে আমানত ছিল ৫৪ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। মার্চ মাসের শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরের শেষে যেখানে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। মার্চের শেষে আমানতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। 
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমানতের পাশাপাশি ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধিতেও ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। গত ডিসেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। মার্চে এই ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.০৭ শতাংশ, যা গত ৫৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শহীদকন্যাকে ধর্ষণ মামলার পলাতক সেই আসামি গ্রেফতার
শহীদকন্যাকে ধর্ষণ মামলার পলাতক সেই আসামি গ্রেফতার
আ.লীগ নিষিদ্ধে বিলম্ব হলেও আমরা খুশি: নজরুল ইসলাম খান
আ.লীগ নিষিদ্ধে বিলম্ব হলেও আমরা খুশি: নজরুল ইসলাম খান
কাশ্মীর বিরোধ সমাধানে কাজ করতে চান ট্রাম্প
কাশ্মীর বিরোধ সমাধানে কাজ করতে চান ট্রাম্প
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখবে এই ১০ খাবার
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখবে এই ১০ খাবার
সর্বাধিক পঠিত
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আরও কমলো স্বর্ণের দাম
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার বার্তা
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে