সরকার দেশি পেঁয়াজের মূল্য কমানোর ঘোষণা দিলেও এই নিত্যপণ্যটির মূল্য কমেনি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এছাড়া, মূল্য বেড়েছে বেশ কিছু সবজির। প্রতিকেজি এখন ১০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। রাজধানীর, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মালিবাগ বাজার ও মানিকনগর কাঁচাবাজার ঘুরে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়া, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্যানে করে সবচেয়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।
অবশ্য সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি)ও বলছে, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর ) পেঁয়াজ (দেশি) প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে।
টিসিবির হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ১০৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। টিসিবি বলছে এক বছর আগে এই পেঁয়াজ ২৮ টাকা কেজি পাওয়া যেতো। আর গত এক মাসে এই পণ্যটির মূল্য বেড়েছে ৫৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এক মাস আগে ৩৫ টাকায় এক কেজি বাছাই করা পেঁয়াজ পাওয়া যেতো। দোকানদাররা বলছেন, মূলত গত এক সপ্তাহে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির মূল্য প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মূল্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে সরকারও চিন্তিত। এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে টিসিবি।
গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই দফা বৈঠকও করেছে। খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির পাশাপাশি মঙ্গলবার পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সরকারি বিভিন্ন দফতর, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের মূল্য কমে আসবে বলে ঘোষণা দেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি। অথচ এই ঘোষণার তিনদিন পরও পেঁয়াজের মূল্য কমেনি।
পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে কথা হয় মানিক নগর কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের মূল্য কমতে মাস খানেক লেগে যেতে পারে। কারণ, পেঁয়াজের মূল্য ভারতেই কমছে না। সেহেতু এখানেও এর প্রভাব পড়বে। তবে নতুন পেঁয়াজ আসলে তখন মূল্য কমে আসবে।’
এদিকে, মসলাজাতীয় এই পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হওয়ায় অনেকেই পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে মানিক নগর এলাকার গোলাম কিবরিয়া কামাল বলেন, ‘পেঁয়াজের মূল্য বেশি হওয়ার কারণে তিনি পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। আগে ২ কেজি করে পেঁয়াজ কিনলেও এখন তিনি ১ কেজির বেশি কেনেন না।’
এদিকে, ঢাকায় সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরাও বলছেন, পেঁয়াজের ঝাঝ আপাতত কমছে না। একইভাবে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও একই সুর। তারা জানান, শুক্রবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭২ থেকে ৭৫ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজের কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা দরে।
এদিকে, পেঁয়াজের মূল্য বাড়লেও দোকানদাররা বলছেন, কমতির দিকে রয়েছে রসুনের মূল্য। আমদানি করা রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এক মাস আগে একই ধরনের রসুন বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা দরে। আর দেশি রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এক মাস আগেও একই রকমের রসুন বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া হলুদ, আদা, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচের মূল্যও কমেছে।
বাজারগুলোয় শীতের আগাম সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলার সরবরাহ বেড়েছে। তবে এগুলো বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস। ছোট আকারের প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। বাঁধাকপিও বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। গাজর ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। করলা ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, চিচিংগা, ঝিঙা, ধুন্দল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভরা মওসুমে ইলিশ মূল্য কিছুটা কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছে, এক সপ্তাহ আগে যে ইলিশের কেজি সাড়ে ১১শ টাকা থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আজ সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। অন্যান্য মাছ পাবদা, রুই, কাতল, শিং, কই মাছের আগের মতই। রুই মাছ ৩৮০ টাকা থেকে কমে ৩২০ টাকায়, পাবদা মাছ ৩২০ টাকায়, কাতল মাছ সাড়ে তিনশ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম