X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেলুনে ‘নিষিদ্ধ হাইড্রোজেন’, ঘটছে প্রাণহানি

সঞ্চিতা সীতু
৩০ অক্টোবর ২০১৯, ২২:১২আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:৪৩

বুধবার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত শিশুদের স্বজনদের আহাজারি
নিরাপদ হিলিয়ামের পরিবর্তে ‘নিষিদ্ধ’ হাইড্রোজেন ব্যবহারের কারণে বছরের পর বছর ঘটছে গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। এতে বাড়ছে শিশুদের প্রাণহানিও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০ বছর আগে বিশ্বের অন্যান্য দেশে হাইড্রোজেন দিয়ে বেলুন ফোলানোর ঝুকিপূর্ণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ দেশে প্রক্রিয়া বন্ধ করার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তারা বলছেন, শিশুদের সবচেয়ে পছন্দের এই খেলনাপণ্য এই বিপজ্জনক পদ্ধতিতে ফোলানো নয়।

আজ বুধবার মিরপুরের রূপনগরে বেলুনে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৬ শিশু মারা যায়। এ সময়  আরও ১৫ জন আহত হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে হাইড্রোজেন দিয়ে বেলুন ফোলানো বন্ধ হয়েছে ২০০ বছরের আগে। হিলিয়াম আবিষ্কারের পর নিরাপদ এই গ্যাস দিয়েই তারা বেলুন ফোলায়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি।’ আসলে এসব যাদের দেখার কথা, তারা দেখছেন না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এদিকে, কারখানায় হাইড্রোজেন তৈরি করে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে সরবরাহ করা কথা থাকলেও অনেক সময় সিলিন্ডারের ভেতরেই হাইড্রোজেন তৈরি করে বেলুনে গ্যাস ভরা হয়। এতে সিলিন্ডার ফেটে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের গ্যাস তৈরি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছে বিস্ফোরক পরিদফতর।

এই সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান  পরিদর্শক সামসুল আলম  বলেন, ‘এটি আসলে সিলিন্ডার নয়, গ্যাস প্রডিউসিং রিয়েক্টর। গ্যাস সিলিন্ডরকে মডিফাই করে সিলিন্ডারের ভেতরেই হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করার পদ্ধতি বানিয়েছে। সিলিন্ডারের ভেতরে কস্টিক সোডা ও অ্যালুমিনিয়াম পাউডার দিয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করতে থাকে। এর সাহায্যে বেলুন ফোলাতে থাকে। এরমধ্যে কিছুক্ষণ ফোলানোর পরে কোনও কাস্টমার না থাকলে সাধারণত সিলিন্ডারের নবটি বন্ধ করে রাখে। এই সময়ের মধ্যে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি হতে থাকে। এতে সিলিন্ডারের ওপর গ্যাসের চাপ বাড়তে থাকে। আর তাতে ভেতরে ক্ষয় হতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্যাসের চাপ বেশি বেড়ে গেলে সিলিন্ডারটি গরম হয়ে নরম হয়ে যায়। এই অবস্থা যখন আবার বেলুনে গ্যাস ভরার জন্য নব খোলা হয়, তখনই বিস্ফোরণ ঘটে।’

বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান  পরিদর্শক আরও বলেন, ‘এই ধরনের রিঅ্যাক্টর একেবারে নিষিদ্ধ। এই ধরনের সিলিন্ডার যার কাছে দেখবে, তাকেই পুলিশের ধরা উচিত। পুলিশ প্রশাসনকে আমরা বহুবার চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানিয়েছি। কিন্তু পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে না।’ তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী কোনও কারখানায় হাইড্র্রোজেন তৈরি হলে সিলিন্ডারে ভরে তা সরবরাহ করতে হবে। সিলিন্ডার থেকে বেলুন ফোলাবে। তারা তা না করে সরাসরি সিলিন্ডারের ভেতরেই হাইড্রোজেন তৈরি করে, যা খুবই বিপজ্জনক।’  

এদিকে, সিলিন্ডার কেন বিস্ফোরিত হয়, জানতে চাইলে বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহম্মদ এহসান বলেন, ‘সাধারণত দুই কারণে আগুন ধরে যেতে পারে। প্রথমত, সিলিন্ডারটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে, দ্বিতীয়ত বেলুনে গ্যাস ভরার সময় অসাবধানতাবশত লিকেজ হলে।’ তিনি বলেন, ‘যে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়, সেটি গ্যাস ভরার সময় ফুলে যায়, আবার গ্যাস বেলুনে ভরার সময় সিলিন্ডারটি সংকুচিত হয়। বারবার এই সংকুচিত ও সম্প্রসারিত হওয়ার বিষয়টি খালি চোখে দেখা যায় না। সিলিন্ডার মাপলে বোঝা যায়। প্রতিটি সিলিন্ডারের একটা মেয়াদ থাকে। মেয়াদ থাকা অবস্থায় যদি সিলিন্ডারটি ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে সংকোচন বা সম্প্রসারণের ফলে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু যদি সিলিন্ডারটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই গ্যাসের চাপ সিলিন্ডার নিতে পারে না। তখনই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য প্রতিবছর হাইড্রোলিক টেস্ট করা জরুরি।’ পাশাপাশি সিলিন্ডারের গায়ে মেয়াদের তারিখও লিখে দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

গ্যাসের বিষয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য ও বুয়েটের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘হাইড্রোজেন গ্যাস হিলিয়ামের চেয়ে হালকা। বেলুনে গ্যাস ভরার ক্ষেত্রে হিলিয়াম গ্যাস ভরার কথা থাকলেও এটি খুবই দামি। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হয়। আর হাইড্রোজেন গ্যাস যখনই বাতাসের সংস্পর্শে আসবে, তখনই বিস্ফোরণ ঘটবে।’ তিনি বলেন, ‘যদি সিলিন্ডারের কোনও মেয়াদ না থাকে অথবা সিলিন্ডারের কোনও লিকেজ থাকে, তাহলে আগুন লাগতে পারে। আর যদি হাইপ্রেসারে থাকা কোনও সিলিন্ডারে এই লিকেজ থাকে, তাহলে সিলিন্ডার টুকরো টুকরো হয়ে ফেটে যেতে পারে। যারা এই ধরনের সিলিন্ডার ও গ্যাস সরবরাহ করে, অনেকখানি দায় তাদের।’ নিয়মিত সিলিন্ডার পরীক্ষা করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা