X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারি ঋণে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি

গোলাম মওলা
০৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৭আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:০০

 

বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হতাশাজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে। আওয়ামী লীগের সরকারের দুই মেয়াদের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের আশানুরূপ ঋণ না পাওয়ার এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে অব্যাহতভাবে কমছে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে, যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে চাপে ফেলছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যাংক আমানত পাচ্ছে না বলেই তারা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিতে পারছে না। তবে অবকাঠামোগত সমস্যা ও ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণেও হয়তো অনেক উদ্যোক্তা ঝুঁকি নিয়ে ঋণ নিচ্ছেন না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে।’ তার মতে, বেসরকারি খাত চাঙা করতে হলে প্রথমে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

এদিকে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। অথচ সে সময়ের চেয়েও এখন খারাপ সময় পার করছে বেসরকারি খাত। কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কাজী সাজিদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঋণের উচ্চ সুদহার থাকার পরও ঋণের জন্য ব্যাংকে গেলে জানানো হয়, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।’ তিনি বলেন, তার ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তিনি দুটি বেসরকারি ব্যাংকের কাছে টাকা চেয়েছেন। কিন্তু পাচ্ছেন না।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও ব্যাংকে তারল্য সংকট এবং ঋণ ও আমানতের অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের চাপে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমিয়ে এনেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে। তবে উচ্চ সুদ ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ নিচ্ছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ের (২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত) কোনও একক মাসে এত কম প্রবৃদ্ধি ছিল না। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও (২০০৮) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল এখনকার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৬৫ শতাংশে। আর ২০১১ সালে মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১০ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে যা ছিল ৯ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ৯৭ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। এর আগে আগস্ট মাসে ঋণস্থিতি ছিল ১০ লাখ ৭ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। গত জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ২ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যেক মাসেই ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে। গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে। মার্চে আরও কমে ১২ দশমিক ৪২ শতাংশে নামে। এভাবে কমতে কমতে আগস্টে কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর শেষে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে আগামী মাস ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করা আছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতেও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছিল। যে কারণে ২০১৮ সালের শুরুতে ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে আনতে এডিআর কিছুটা কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। কয়েক দফা এডিআর সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো হলেও ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। বরং ঋণের নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে।

শুধু ব্যাংকই নয়, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও ঋণস্থিতি নাজুক। বাংলাদেশ ব্যাংক  বলছে, এই বছরের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ স্থিতি ছিল ৬৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা। জুন শেষে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাবে মার্চের তুলনায় জুনে ঋণ স্থিতি কমেছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্র ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে মাইক্রোক্রেডিটের হার ১১ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবিব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান