X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস

গোলাম মওলা
২২ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:৫৫আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:০৯





সঞ্চয়পত্র জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। একক মাস হিসেবে গত সেপ্টেম্বরে এর বিক্রি সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। এই মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯৮৫ কোটি টাকা, আগের বছরের একই মাসে যা ছিল ৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ৩ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, নানাভাবে কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান—বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘ঋণের বোঝা কমাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে টিআইএন এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করায় অনেকেই সঞ্চয়পত্রে আগের মতো বিনিয়োগ করতে পারছেন না।’ তার মতে, আগে কালো টাকাও সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ হতো। এখন সেটা হচ্ছে না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে মন্দা দেখা দিয়েছে।
জায়েদ বখত বলেন, ‘এখনও সবাই সঞ্চয়পত্র খাতকেই বিনিয়োগের নিরাপদ জায়গা মনে করে। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে অনলাইন পদ্ধতি চালুর পাশাপাশি নিয়মকানুন কঠোর করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।’
আগে কালো টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হওয়ার কারণে সরকারের সুদ ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন আগের মতো কালো টাকা সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। এখন সীমিত আয়ের মানুষরাই সঞ্চয়পত্র কিনছেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এ অর্থবছরের প্রথম তিনি মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ৮ হাজার ৭১৪ কোটি টাকার।
প্রসঙ্গত, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত তিন মাস ধরে অব্যাহতভাবে কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে নিট ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আগস্টে হয়েছে ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, আর সেপ্টেম্বরে হয়েছে মাত্র ৯৮৫ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ১ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই ব্যক্তির একাধিক জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ঠেকাতেও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া দুর্নীতি কিংবা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে। ফলে অনেকেই আর আগের মতো সঞ্চয়পত্র কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফা বা সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ পড়ছে। ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে সরকারকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাতে সুদ-আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ৩৮ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি পূরণে প্রতিবছরই দুইভাবে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। এর একটি হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তা, অন্যটি অভ্যন্তরীণ উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়। এই অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে এই খাত থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকায়, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছরমেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছরমেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছরমেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। এগুলোর গড় সুদের হার ১১ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো অফিস ও পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ম্যাককিনি‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
তৃতীয় ওয়ানডেশ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার