X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আমনের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি

শফিকুল ইসলাম
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৫৯আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৫৯

আমন ধান কাটা চলছে (ফাইল ছবি) এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। মূল্যও পাচ্ছেন কৃষকেরা। তাই কৃষকের মুখে হাসি। বড় ধরনের কোনও আপদ না এলে কৃষকের এই হাসি অমলিন থাকবে। সম্প্রতি দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে আমন ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা কো হলেও তা সেভাবে হয়নি। যা হয়েছে, সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তারা। দেশের বিভিন্ন এলাকার আমন চাষকারী কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

কৃষি সম্প্র্সারণ অধিদফতর ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আমন ধান চাষ করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৯৪ হাজার হেক্টর জমিতে। আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৫৮ লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১ কোটি  ৪০ লাখ টন আমন ধান। ধারনা করা হচ্ছে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আমনের এমন ভালো ফলনে খুশি সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। তারা জানিয়েছেন, কৃষকের আগ্রহ, সরকারের নজরদারি, পৃষ্ঠপোষকতা এবং সরকারের দেওয়া ভর্তুকিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ফলেই এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তারা আশা করছেন, আমনের পর আগামী বছর বোরোর উৎপাদনও ভালো হবে।

সূত্র জানায়, সারাদেশে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৩ শতাংশ জমির আমন ধান কাটা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে এবার ধানের উৎপাদন গড়ে ২ দশমিক ৮৯ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে এরই মধ্যে ৪৬ লাখ হেক্টর জমির ধানা কাটা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টন। তবে এই মৌসুমে আমন ধানের পুরো উৎপাদন সম্পর্কে তথ্য জানতে আরও কিছু সময় লাগবে। কারণ এখনও দেশের সর্বত্র আমন ধান কাটা শেষ হয়নি। কৃষকের ক্ষেতে এখনও আমন ধান রয়েছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, এবছর আমনের ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যেই বাজারে যারা আমন ধান বিক্রি করতে নিয়েছেন তারা ভালো দাম পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সরকার নিজের জন্য আমন ধান ও চাল কেনার যে দাম দিয়েছেন, সে কারণেই এবার আমনের ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। 

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার গত নভেম্বরের ২০ তারিখ থেকে দেশের প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন আমন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর থেকে ৩৬ টাকা দরে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ আমন ধানের চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আমন ধানের আতপ চাল কেনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, এ বছরও ১ কোটি ৫৩ লাখ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। গতবছরও দেশে ১ কোটি ৫৩ লাখ টন আমন ধান উৎপাদিত হয়েছিলো।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। ফসল পুরোপুরি উঠে গেলে দেখা যাবে এ বছরও অতীতের ন্যায় আমনের ফলন ভালো হবে। আশা করছি গতবছরের বোরোর মতো এবার আমরা আমনেও ভালো ফলন পাবো। কৃষকরা যাতে লাভবান হয় সেজন্যই এ বছর মধ্যস্বত্ত্বভোগী বাদ দিয়ে সরাসরি প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ৬ লাখ টন আমন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অতীতে যা হয়নি। আগে চাল কেনা হতো বেশি। সরকারের এই সিদ্ধান্তে কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন।’
এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০১৭ সালের বাজে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উৎপাদনে সচেষ্ট ছিলাম বলেই এ বছর আমনের ভালো ফলন হয়েছে। এ সময় ধানের উৎপাদন ঠিক রাখতে কৃষকদের সব ধরনের সুবিধা দিয়েছে সরকার। সরকারের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। কৃষকেরাও আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি মনোযোগী ফসল উৎপাদনের বিষয়ে। ফলে গতবছরের বোরো ফসলের মতো এবছর আমনের ভালো ফলন হয়েছে।’ তিনি জানান, ধানের বা চালের অতিরিক্ত উৎপাদন অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ হয়। এ বছর যা আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি জানিয়েছেন, এবছর চাহিদা মিটিয়ে চাল রফতানি করা যেতে পারে। এতে কৃষক লাভবান হবে। সেক্ষেত্রে কৌশল কি হতে পারে, তা নিয়ে সরকারের ভেতরে আলাপ-আলোচনা চলছে।

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া গ্রামের কৃষক আসলাম মিয়া জানান, আমন ফসল ভালো হয়েছে। দামও ভালো। প্রতিমণ আমন ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬শ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে। তিনি জানান, দেশের দক্ষিনাঞ্চলের তুলনায় উত্তরাঞ্চলে বেশি পরিমাণ জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। শুনেছি এবছর সেখানেও ভালো ফলন হয়েছে আমনের। এ বছর এ অঞ্চলের এক বিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৩ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসলাম মিয়া। 

জয়পুরহাটের সদর উপজেলার কৃষক হেমায়েত হোসেন জানিয়েছেন, ফসল পুরোপুরি ওঠেনি। এখনও মাঠে আছে। কাটতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। প্রতিমন ধান বিক্রি করছি ৭০০ টাকা দরে। জয়পুরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রতি বিঘা জমিতে ১৩ থেকে ১৪ মণ ধান পাওয়া গেছে বা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী