X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ

সঞ্চিতা সীতু
০৩ মার্চ ২০২০, ০৭:৫৬আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২০, ১৭:১৭

ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ গ্রিড সংযুক্ত এলাকায় জুনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হলেও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে (অফ গ্রিড) কীভাবে সংযোগ দেওয়া যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সরকারের পরিকল্পনা বলছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সারাদেশের অফগ্রিড এলাকাকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা হবে। এজন্য দেশের চারটি বিতরণ কোম্পানিকে অফগ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মধ্যে ঢাকার দুটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি বাদে অন্য চারটি কোম্পানি অর্থাৎ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো), নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ওজোপাডিকো) ডিসেম্বরের মধ্যে অফগ্রিড এলাকাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ৯৬ ভাগ এলাকায় এরইমধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। আর বাকি আছে চার ভাগ। তবে এই চার ভাগই সবচেয়ে কঠিন। কারণ এই বিদ্যুৎ দিতে হবে অফগ্রিড এলাকায়। অফগ্রিড এলাকাগুলোতে যেসব দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে, সেখানে বিদ্যুৎ দিতে আলাদা কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য এরইমধ্যে আরইবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাদের কাজের অগ্রগতি ভালো, তবে পিছিয়ে আছে পিডিবি। কারণ প্রাথমিকভাবে পার্বত্য এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ দেওয়া হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে। কিন্তু তারা যে পরিকল্পনা করেছে তাতে কাজ শেষ হতে ২০২১ সাল হয়ে যাবে। তাই নতুন করে পিডিবির অধীনে স্রেডা ও ইডকলের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের অফগ্রিড এলাকায় সোলার হোম সিস্টেম বা সোলার মিনি গ্রিড বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যেই আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে পারবো বলে আশা করছি।

তিনি আরও জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে গতি বাড়ানোর জন্য চারটি বিতরণ কোম্পানিকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অফগ্রিড এলাকাগুলোর মধ্যে আছে পিডিবির পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৬টি উপজেলা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া ও আশুগঞ্জ (চর সোনারামপুর), আরইবির রাঙ্গাবালি উপজেলাসহ এক হাজার ৫৯টি গ্রাম, নেসকোর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চারটি চর এবং ওজোপাডিকোর ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার মনপুরা ও চর কলাতলি।

দেশের সবচেয়ে বড় এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কোম্পানি আরইবির অধীনেই আছে সবচেয়ে বেশি অফগ্রিড এলাকা। তাদের অধীন এক হাজার ৫৯টি গ্রামকে আলোকিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে তারা। সব গ্রামকে একইসঙ্গে আলোকিত করার কাজ শুরু করা যাবে না বলে প্রতিষ্ঠানটি তিনটি ফেজে এলাকা ভাগ করে কাজ শুরু করেছে। সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক মালামাল সংগ্রহ, শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে অফগ্রিড এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন আরইবির কর্মকর্তারা।

আরইবির প্রথম ফেজে আছে মোট ৬৪৬টি গ্রাম। এই ফেজে তুলনামূলকভাবে কম প্রত্যন্ত এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এ এলাকায় অবস্থিত ৩৫টি স্থানে কমবেশি দুই কিলোমিটার পর্যন্ত সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে নদী অতিক্রম করে গ্রামগুলোতে গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। চলমান প্রকল্পে লাইন ও উপকেন্দ্র নির্মাণের সংস্থান বৃদ্ধি এবং আরইবির অর্থায়নে প্রথম ফেজের কাজ চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে শেষ করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দ্বিতীয় ফেজে আছে ৩৮৪টি গ্রাম। এই ফেজে অপেক্ষাকৃত দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত গ্রামগুলোকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকার ৫০টি স্থানে সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নদী বা চরের প্রশস্ততা ক্ষেত্রবিশেষে ১০ বা ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত হওয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের স্পেসিফিকেশন হালনাগাদ করে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে গ্রিড লাইনের বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

তৃতীয় ফেজে প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার ২৯টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে। এসব গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহকের জন্য সোলার হোম সিস্টেম বা সোলার মিনি গ্রিড স্থাপনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে আরইবি।

বিপিডিবির আওতায় পার্বত্য জেলাগুলোর ২৬টি উপজেলা এবং সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া ও আশুগঞ্জের চর সোনারামপুরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে। এরমধ্যে পাঁচটি উপজেলা ওভারহেড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা হবে। বাকি ২১টি উপজেলার ৪৫ ভাগ ওভারহেড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। বাকি অংশে প্রায় এক লাখ ৭৮ হাজার সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছে পিডিবি। সোলার হোম সিস্টেম পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, স্রেডা ও ইডকলের মাধ্যমে স্থাপন করা হবে বলে জানায় তারা।

এদিকে চরগুলোর মধ্যে পিডিবির চলমান প্রকল্পের আওতায় আশুগঞ্জের চর সোনারামপুর ও সন্দ্বীপ উপজেলায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন শেষ হবে। আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পিডিবির নিজস্ব অর্থায়নে বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ এবং হাতিয়া, কুতুবদিয়া দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্রেডা ও ইডকলের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করার কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

নেসকোর অফগ্রিড এলাকাগুলো হচ্ছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চারটি চর। এরমধ্যে রাজশাহী জেলার চর মাজার দিয়া, চরখিদিরপুর, চর আশারিয়াদহ এবং চর আলাতুলি এলাকায় সোলার হোম সিস্টেম বা সোলার মিনি গ্রিড স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে। এসব এলাকায় ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুতায়নের কাজ শেষ হবে আশা করছে নেসকো।

ওজোপাডিকোর অধীন আছে ভোলা জেলার মনুপুরা উপজেলার মনপুরা ও চর কলাতলী। সেখানে ২ মেগাওয়াট জেনারেটর স্থাপনের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

/টিটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!