X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারে উত্তাপ ও ক্রেতা উভয়ই বেড়েছে

শফিকুল ইসলাম
১০ মার্চ ২০২০, ১৫:৫৯আপডেট : ১১ মার্চ ২০২০, ০০:৪৯

বাজারে উত্তাপ ও ক্রেতা উভয়ই বেড়েছে

করোনা ভাইরাসের অজুহাতে শুধু মাস্কই নয়—বেড়েছে ডেটল, স্যাভলন, হেক্সিসল, হ্যান্ডওয়াশ, সাবানসহ বিভিন্ন প্রকার জীবাণু ধ্বংসকারী পণ্যের দাম। যে যেভাবে পারছে সেভাবেই বেশি দামে বিক্রি করছে এসব পণ্য।  সোমবার (৯ মার্চ) ওষুধ প্রশাসন থেকে এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা মানছে না কেউ।

এদিকে করোনার কারণে প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দামেও। বিশেষ করে যেসব খাদ্যপণ্য আমদানিনির্ভর, সেসবের দাম বাড়ছে ক্রমাগত। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকান ও বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। 

অপরদিকে দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার সংবাদে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, হয়তো সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে। এই ভয়ে অনেকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল, ডাল, তেল পেঁয়াজ কিনে রাখছেন। এতে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। একারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

রাজধানীর কোনাপাড়া বাজারে আসা মোবারক হোসেন বলেন, ‘একটু বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা কিনলাম। যেন আগামী ২/৩ মাস সংসার চালানো যায়। যেহেতু এসব পণ্য আমদানিনির্ভর, করোনার প্রভাবে দাম বাড়তে পারে।  তাই ঝুঁকি নিলাম না।’ 

অপরদিকে একই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, ‘বেশি করে চাল ও ডাল কিনে রাখলাম। আর যাই হোক যেকোনও দুর্যোগে ছেলেমেয়ে নিয়ে যেন অন্তত দুটো ডালভাত খেতে পারি।’ তিনি জানান, প্রতিমাসে তার পরিবারে ২০ কেজি চাল ও দেড় কেজি ডাল লাগে। কিন্তু এবার ৫০ কেজি চাল ও চার কেজি ডাল কিনে রেখেছেন। যেন বাড়তি দেড়-দুই মাস চলা যায়।’   

বাজারে উত্তাপ ও ক্রেতা উভয়ই বেড়েছে

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোনাপাড়া বাজারের দোকানিদেরও একই বক্তব্য—‘সাপ্লাই কম’। আর সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাফ কথা—এসব পণ্যের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ওষুধের দোকানগুলোতে মাস্ক, হেক্সিসল, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ জীবাণুনাশক উপাদান কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কেউ চাহিদামাফিক পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।  কোনও কোনও দোকানে দাম বেশি চাইলেও ক্রেতারা তা হুমড়ি খেয়ে কিনছেন। 

বিদেশ থেকে আমদানি করা গুঁড়াদুধের দাম বেড়েছে সম্প্রতি।  সুযোগ পেয়ে দেশে উৎপাদিত গুঁড়াদুধের দামও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে গুঁড়াদুধের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন—গুঁড়াদুধ আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে। এ কারণে পণ্যটির দামও বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে গুঁড়াদুধ আমদানি করা যাচ্ছে না।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে নিউজিল্যান্ডে তৈরি ডিপ্লোমা গুঁড়াদুধের দাম ছিল প্রতিকেজি ৫৯০ টাকা। এখন  তা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬৩০ টাকায়। একইভাবে ৫৮০ টাকা কেজির ডানো বিক্রি হচ্ছে ৬৪০ টাকায়। কোয়ালিটি, ফ্রেশ, মার্কসসহ অন্যান্য গুঁড়াদুধের দামও কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। 

বাজারে উত্তাপ ও ক্রেতা উভয়ই বেড়েছে

অন্যদিকে কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, চায়না আদা, আমদানি করা রসুন, পাকিস্তানি কক প্রজাতির মুরগির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচামরিচ  প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, যা আগে ছিল ৬০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, যা আগে ছিল ১২০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাওরানবাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে সেভাবে ক্রেতা বাড়েনি। তবে শুনেছি, খুচরা পর্যায়ে ক্রেতা বেড়েছে। তাছাড়া, পাইকারি বাজারে কোনও পণ্যেরই দাম বাড়েনি। আগের মতোই আছে সব ধরনের পণ্যের দাম।’ এই মুহূর্তে কোনও কিছুরই দাম বাড়ার কোনও কারণ নাই বলেও জানান তিনি। 

এদিকে কোনাপাড়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী মাল পাচ্ছি না। বাজারে ক্রেতা বেশি। তাই চাহিদাও বেশি। কোম্পানির কাছে চেয়েও মাল পাচ্ছি না। আর পেলেও বেশি দাম দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে। তাই দাম না বাড়িয়ে বেচবো কীভাবে?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘কোনও কারণেই এখন এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে না। এমন কোনও পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। আর করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক পরার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ, করোনা ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত রোগীর স্পর্শে এ ভাইরাস ছড়ায়।’ 

জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বাজারে মাস্কসহ ডেটল, সেভলন, হ্যাক্সিসলের দাম বেড়েছে শুনেছি। তবে এসব পণ্যের দাম বাড়ার কোনও কারণ দেখি না। কী কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে, কারা বাড়িয়েছে, সেই বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অবশ্যই এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।’  

 

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ: ২ আসামির স্বীকারোক্তি
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ: ২ আসামির স্বীকারোক্তি
‘সাংগ্রাই জলোৎসব’ যেন পাহাড়ে এক মিলন মেলা
‘সাংগ্রাই জলোৎসব’ যেন পাহাড়ে এক মিলন মেলা
পাঁচ উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা
বাজেট ২০২৪-২৫পাঁচ উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’
‘মাঠে আমার শরীর কেউ স্পর্শ করতে পারেনি’