X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ বেড়েছে মিষ্টির দোকান, মান কি বেড়েছে?

সাদ্দিফ অভি
২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৫:০০আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৫:০০

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আহসান সাব্বির পদোন্নতি পেয়েছেন। খবর পেয়েই ছুট লাগিয়েছেন মিষ্টির দোকানে। সামনে পড়লো কয়েকটি মিষ্টির দোকান। সাধ্যের কথা ভেবে কম দামেই একটি দোকান থেকে রসগোল্লা কিনে ফেলেন। পরে বুঝতে পারলেন টাকাটাই জলে। দাম কম হলেও মিষ্টির মান ভালো ছিল না মোটেও।

মিষ্টি মানেই এখন রসগোল্লা বা চমচম নয়। চাহিদার সঙ্গে বেড়ে চলেছে পদের সংখ্যা। রাজধানীর অলিগলিতে বসেছে মিষ্টির নতুন নতুন পসরা। ক্রেতার কাছাকাছি সহজে পৌঁছাতে অনেকেই মানের কথা না ভেবে লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে চলেছেন আউটলেট। আর মানহীন মিষ্টির ব্যাপক প্রসারে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন মানসম্মত মিষ্টি ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর প্রতিটি এলাকাতেই মিষ্টির একাধিক দোকান দেখা যাবে। কোনও মিষ্টির দোকান চেইনশপের ধারণা অনুসরণ করলেও অনেকে এখনও নির্দিষ্ট কিছু এলাকার মধ্যেই সীমিত রেখেছেন। কেউ কেউ সীমিত রেখেছেন রাজধানীতেই। আবার কেউ করোনার কারণে কমিয়েছেন আউটলেটের সংখ্যা। এর মধ্যে অনেকেই আবার মিষ্টির দোকানের সাইনবোর্ডে বিক্রি করছেন অন্যান্য পণ্য। বিভিন্ন সময়ে এসব দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেও খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। এসব মানহীন মিষ্টির দোকানের আউটলেট খোলার তুমুল প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন তারাই, যারা মান নিশ্চিত করে ব্যবসা করতে নেমেছেন।

বাংলাদেশ মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই মুহূর্তে আউটলেট খুব বেশি বাড়ছে না। আমি আমার মুসলিম সুইটস অ্যান্ড বেকারির দুইটা আউটলেট বন্ধ করে দিয়েছি। কিছু বন্ধ হয়েছে আবার কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন হচ্ছে। এর পেছনে কারণ হতে পারে, আমাদের দেশে বেকার বেশি। এ ব্যবসায় পুঁজি অল্প লাগে। আবার যেগুলো বাড়ছে সেগুলোতে দেখা যায় খুব একটা ব্র্যান্ডের দোকান না। তারা করছে যাতে অল্প পুঁজি দিয়ে কিছু একটা করা যায়। মিষ্টির সঙ্গে বেকারি, গ্রোসারি সবই চালায় তারা।

মিষ্টির বর্তমান বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পচনশীল পণ্য হওয়ায় এর বাজার সম্পর্কে বলা মুশকিল। এখন করোনার কারণে মানুষ মিষ্টি কম খাচ্ছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে বিক্রি ২০-২৫ শতাংশে নেমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, একাধিক পণ্য নিয়ে গোঁজামিল দিয়ে নকল একটা নামে মিষ্টির ব্যবসা করে অনেকে। মুসলিম সুইটস-এর নামেই অনেক দোকান খোলা হচ্ছে। নামের আগে ‘দ্য’ বা ‘আদি’ লাগিয়ে লাইসেন্স নেয়। ক্রেতারা দ্বিধায় পড়ে যায়। আমরা নিজেরাও এ নিয়ে বিপদে আছি। মানুষ যেভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করছে, তাতে মামলা করা ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছি না।’

মীনা সুইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাঈদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আউটলেট বাড়ালে স্বাভাবিকভাবেই কাভারেজ বাড়ে। সঙ্গে আয়ও বাড়ে। যেসব জায়গায় গ্যাপ আছে সেখানে যদি নতুন দোকান হয়, বিক্রি কিছুটা বাড়ে। সব জায়গায় যে বাড়ে তা অবশ্য নয়।’

যারা মানসম্মত মিষ্টির ব্যবসা করেন না তাদের কারণে মানসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় বলে মনে করেন সাঈদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যারা মান বজায় রাখে না তারা কিন্তু অনেক কম দামে পণ্যটি বিক্রি করে। মিষ্টিতে কম মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার করলেই দাম কম রাখা যায়। আমাদের যে মিষ্টির দাম ৪০০ টাকা, সেটা যদি অন্যরা ২৫০ টাকায় বিক্রি করে তাহলে অনেক ক্রেতা সেদিকে ঝুঁকবে। ক্রেতারা কম দামের আশায় মানহীন পণ্যের দিকে ঝুঁকলে সেটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।’

জয়পুর সুইটসের স্বত্বাধিকারী আসিফ ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একটা সময় যে মিষ্টির আউটলেট গুলশানে ছিল, ধানমণ্ডির ক্রেতার কাছে তিনি পৌঁছাতে পারতেন না। সবাই কাস্টমারদের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য আউটলেট বাড়িয়েছে। তবে এখন যেহেতু সব অনলাইন নির্ভর, বেশকিছু সাপোর্ট আমরা পাচ্ছি। সেজন্য আউটলেট না বাড়ালেও কিন্তু কাভারেজ থাকছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আউটলেট বাড়িয়েছিল, কিন্তু আবার কমিয়ে ফেলছে। কারণ যে আশা নিয়ে বাড়ানো হয়, দেখা যায় সেটা পূরণ হয় না। আমার ক্ষেত্রেও এটি হয়েছে।

‘মিঠাইওয়ালা’র অপারেশনস ম্যানেজার মোহাম্মদ মুস্তাকিন বলেন, ‘আমরা যে কয়টা দিয়ে শুরু করেছি সে কয়টা আউটলেট আছে এখনও। আমাদের যদি শুধু গুলশানে আউটলেট থাকে, তবে উত্তরার সেল পাবো না। মিষ্টি কিনতে কেউ তো উত্তরা থেকে গুলশান আসবে না। সেই হিসেবে আউটলেট করার উপকারিতা আমরা পাচ্ছি।’

দেশের যত বিখ্যাত মিষ্টি

মিষ্টির কারণে দেশের অনেক জেলাই প্রসিদ্ধ। এর মধ্যে আছে টাঙ্গাইলের চমচম, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মণ্ডা, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, গাইবান্ধার রসমঞ্জুরি, নওগাঁর প্যাড়া সন্দেশ, মেহেরপুরের রসকদম্ব, যশোরের রসগোল্লা, সাতক্ষীরার সন্দেশ, রাজবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, রাজশাহীর রসকদম। এছাড়া বিক্রমপুর ও কলাপাড়ার রসগোল্লা, শাহজাদপুরের রাঘবসাই, যশোরের খেজুরের গুড়ের সন্দেশ, মাদারীপুরের রসগোল্লা, সিরাজদিখানের পাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জের পান্তুয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চমচমেরও বেশ সুনাম আছে।

/এফএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
ওয়ারীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ একজনের মৃত্যু
মানবিকতায়ও নজির স্থাপন করেছে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন
সর্বশেষ খবর
অবৈধ অটোরিকশা-ইজিবাইককে লাইসেন্সের আওতায় আনার দাবি
অবৈধ অটোরিকশা-ইজিবাইককে লাইসেন্সের আওতায় আনার দাবি
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক সই
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি এবং ৫টি সমঝোতা স্মারক সই
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্সেলে তরুণদের কাছে আসছে কোটি টাকার মাদক
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্সেলে তরুণদের কাছে আসছে কোটি টাকার মাদক
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা