X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে ৩০ পরিচালকের পদ শূন্য, নিয়োগ পাচ্ছেন আমলারা

গোলাম মওলা
০৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১২:২১আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০১৬, ১২:২৫

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

সমস্যা পিছু ছাড়ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। অনিয়ম দুর্নীতি থেকে ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পর নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ৬ ব্যাংকে শূন্য হয়ে পড়েছে ৩০ জনেরও বেশি পরিচালকের পদ। পরিচালক সঙ্কটে কোনও কোনও ব্যাংক বোর্ডসভা করতে পারছে না। ঝুলে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ১৩ সদস্যের পর্ষদ থাকার কথা থাকলেও ৭ জনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৯ ডিসেম্বর। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোরাম সঙ্কটের কারণে বোর্ডসভা সম্ভব হচ্ছে না। কোরাম পূরণ করতে কমপক্ষে ৭ জন পরিচালক দরকার। আছেন মাত্র ৫ জন।

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে আরও কয়েকজনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী দু-মাসের মধ্যেই। এই শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে আমলাদের। এরইমধ্যে অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাসকে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অতিরিক্ত সচিব মুসলিম চৌধুরী ও ফজলুল হককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সোনালী ব্যাংকে। অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে নিয়োগ পেয়েছেন জনতা ব্যাংকে।

সূত্রমতে, তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা ও অগ্রণীতে ২১ পরিচালকের পদ শূন্য আছে। এর বাইরে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে (বিডিবিএল) ৯ পরিচালকের পদ শূন্য।

ব্যাংকগুলোতে নতুন পরিচালক নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাংকগুলোতে বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যাদের অধিকাংশই আমলা ও ব্যাংকার। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচালক নিয়োগ দিয়ে আসছে সরকার।

অগ্রণী ব্যাংকে ১২ সদস্যের পর্ষদের ৮ জনেরই মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। এর মধ্যে ৬ সদস্যের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এই মাসে আরও একজন এবং আগামী মার্চে আরেকজন পরিচালকের মেয়াদ শেষ হবে। চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত ছাড়া মাত্র তিনজন পরিচালক রয়েছেন ব্যাংকটিতে। এদের মধ্যে পরিচালক নিয়াজ রহিমের মেয়াদ শেষ হবে এই মাসের ৯ তারিখে। কেএমএন মনজুরুল হক লাবলুর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ মার্চ। শুধু থেকে যাচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আরাস্তু খান। এক সপ্তাহ পরে পরিচালক নিয়াজ রহিমের মেয়াদ শেষ হলে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যানসহ পরিচালকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪ জনে।

এ প্রসঙ্গে ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ৪জন পরিচালক নিয়ে বোর্ডসভা করে বড় বড় প্রকল্প পাস করার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও ছোট ছোট প্রকল্পে কোনও সমস্যা নেই। তিনি বলেন, যে সব পরিচালকের মেয়াদ একবার পুর্ণ হচ্ছে তারা আরেকবার থাকার সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, অগ্রণী ব্যাংকে এক মেয়াদে পরিচালক ছিলেন এমন অনেককে দ্বিতীয় মেয়াদে রাখা হতে পারে। কারণ তাদের পারফরমেন্স ভাল। এসব পরিচালককে দ্বিতীয়বার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বেশি সময় লাগারও কথা নয়।

বর্তমান মহাজোট সরকারের পরপর দুই মেয়াদেই ব্যাংক খাতে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের মতো বহুল আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে তর্জনি তোলা হয়েছে ওই সব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দিকে। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে একাধিক পরিচালককে দুর্নীতি দমন কমিশন তলবও করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

সরকার ২০০৯ সাল থেকেই রাজনৈতিক বিবেচনায় এই ব্যাংকগুলোতে পরিচালক নিয়োগ শুরু করে। সমালোচনা হচ্ছিল তখন থেকেই। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল অর্থমন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, অর্থনীতিবিদ, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, আর্থিক বাজার, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি, সাবেক ব্যাংকার, আইনজ্ঞ, ব্যবসায়ী এবং কমপক্ষে একজন নারী পেশাজীবীকে ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য করা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এইসব ব্যাংকে রাজনৈতিক পরিচয়েই নিয়োগ পেয়েছেন অধিকাংশ পরিচালক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের পর্ষদে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়ার কারণেই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা বেশি ঘটেছে। অথচ কোনও শাস্তি হয়নি। এ কারণে ব্যাংক চালানোর মতো দক্ষতা যাদের আছে কেবল তাদেরই পরিচালক বানানো উচিত। এক্ষেত্রে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যাংকার হলে সবচেয়ে ভাল হয়। এর বাইরে শিক্ষক, ভালো ব্যবসায়ী বা অন্য পেশাজীবীদের পরিচালক করা যেতে পারে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত এ সব ব্যাংকে শুধু পরিচালনা নয়, ব্যবস্থাপনার উন্নয়নও জরুরি।

জনতা ব্যাংকের পর্ষদে শূন্য পদ রয়েছে ছয়টি। আগে এসব পদে দুই দফায় ছিলেন অর্থ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইমদাদুল হক, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক নাগিবুল ইসলাম দীপু, সাবেক ডিআইজি সৈয়দ বজলুল করিম, সাবেক ব্যাংকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক রমণী মোহন দেবনাথ এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন। বিডিবিএলে শূন্য পদ রয়েছে পাঁচ পরিচালকের। বিকেবি ও রাকাবের ১৩ সদস্যের পর্ষদে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মশিউর রহমান হুমায়ুনের পরিচালক পদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়ার। 

জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল ৮৯টি। তিন মাস পর সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০টিতে। একইভাবে লোকসানি শাখা বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য তিন বাণিজ্যিক ব্যাংক- জনতা, অগ্রণী ও রূপালীরও। সব মিলিয়ে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এ চার ব্যাংকের লোকসানি শাখা ২৪৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০৩টি। এ সময়ে অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে। মূলধন ঘাটতি বেড়েছে জনতা ব্যাংকের। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সার্বিক পারফরম্যান্সে অবনতি হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর কয়েকদিন পর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকেও পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

/এফএ/

আপ-এসটি

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা