X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বাঁশের সাঁকো মুক্ত’ হচ্ছে বাংলাদেশ

শফিকুল ইসলাম
০১ মার্চ ২০১৬, ১৭:২৪আপডেট : ০১ মার্চ ২০১৬, ২২:১৭

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভা ‘বাঁশের সাকো মুক্ত’ হচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে গ্রামীণ রাস্তায় ছোট-ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প নামের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল  এ তথ্য জানান।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কোনও বাঁশের সাঁকো থাকবে না। আমরা সে জন্যই প্রকল্পটি নিয়েছি। প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে।  প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তাবায়িত হলে দেশের জলাবদ্ধতাও দূর হবে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি ও এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট-এর মাধ্যমে নির্মিত মাটির রাস্তার গ্যাপে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ করা হলে কোথাও আর পানি জমবে না। জলাবদ্ধতাও থাকবে না।  
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে দেশের স্বাধীনতা লাভের পরপরই গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছর থেকে ইউএসএইড-এর পিএল-৪৮০ টাইটেল-২ এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আওতায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ায় এ সমস্ত রাস্তায় বিদ্যমান সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা যায়নি। ফলে সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। তাই ১৯৮২ সাল থেকে পিএল-৪৮০ টাইটেল-২-এর আওতায় প্রদত্ত গমের বিক্রয়লব্ধ অর্থে সীমিত আকারে গ্রামীণ সড়কে কেয়ার বাংলাদেশ-এর তত্ত্বাবধানে অনূর্ধ্ব ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ কার্যক্রম ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়। পরবর্তী সময়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় নির্মিত রাস্তায় ছোট-ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৪ সালে জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ৬১টি জেলার ৪৫৯টি উপজেলায় ৩৭ হাজার ৩৮১ মিটার সেতু বা কালভার্ট মোট ৪৭০ কোটি ২ লাখ টাকা সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে জুলাই ২০০৯ হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬১টি জেলার ৪৫৯টি উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৯৬ মিটার সেতু বা কালভার্ট মোট ৩১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়।

জানা গেছে, মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ ১২ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৬৫০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ৬৯৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৯৫৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার জোগান দেওয়া হবে।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে—এক হাজার ৫৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প। ৩৯৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। ২৭৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প। ২৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভূলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস) পিপিপি প্রকল্প। ১০৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় মহাসড়ক এন-৮ এর ভূরঘাটা-বরিশাল-লেবুখালী সেতু পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ প্রকল্প। ৫৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে মাদারীপুরে সরকারি অফিসগুলোর  জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প। ২২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স স্থাপন প্রকল্প। ১৯৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে জাতীয় ল্যাবরেটরি মেডিসিন ও রেফারেল সেন্টার স্থাপন প্রকল্প। ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প। ৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে লালকুঠি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অসম্পূর্ণ কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প ও ২১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে (বরিশাল ও পটুয়াখালী) ব্রিজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্প।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছর থেকে বহুবার সরকারের পক্ষ থেকে গ্রামীণ মাটির রাস্তা উন্নয়নের অনেক প্রকল্প নেওয়া হলেও রাস্তাগুলোয় নির্মিত কালভার্ট বা সাঁকোগুলো উন্নয়নে তেমন কোনও প্রকল্প ছিল না। আবার কখনও এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হলেও তা আংশিক ছিল। এ কারণে  শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি। অনেক সময় প্রকল্পগুলো নানা কারণে আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে দেশের পার্বত্য রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান—এই ৩টি জেলা ছাড়া ৬১টি জেলার ৪৯০টি উপজেলায় ৪৬ হাজার ২৯৫ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের লক্ষ্যে মোট ১০৮ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে।

২০১২ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৬ সালের ৩০ জুন। এ প্রকল্প ছাড়াও পার্বত্য তিন জেলার ২৫টি উপজেলায় আট হাজার ৮৭৯ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের লক্ষ্যে মোট ২৪২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। চলমান প্রকল্পটি ইতোমধ্যে আইএমইডি কর্তৃক মধ্যবর্তী মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন করা হয়েছে। এটিও বাস্তবায়নাধীন।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়