X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিপাইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও ৮৭ কোটি ডলার জব্দ

ফাহমিদা উর্ণি
০৯ মার্চ ২০১৬, ১৮:৫৭আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৬, ২০:০৩
image

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকারদের চুরি করা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার (৮৭ কোটি ডলার) মূল্যের তহবিল ফিলিপাইনের ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। অবশ্য এ ঘটনার মাত্র ক’দিন আগে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সমমূল্যের টাকা একই উৎস থেকে ফিলিপাইনের স্থানীয় ব্যাংকিং সিস্টেমে ঢুকেছিল এবং তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি) নামের স্থানীয় এক ক্লায়েন্টের হাতে চলে গিয়েছিল। সে ঘটনায় তদন্ত চলছে। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ফিলিপাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনকোয়ারার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ফিলিপাইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও ৮৭ কোটি ডলার জব্দ

ইনকোয়ারার জানায়, গ্রাহকের হাতে চলে যাওয়া ৩৭০ কোটি ফিলিপাইনি মুদ্রা সমমানের সেই অর্থ একটি ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারের কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং পরে তা সিটি অব ড্রিমস ও মিদাসের সোলেয়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনোতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সে অর্থগুলোকে জুয়ার চিপস (বাজির কয়েন) হিসেবে রূপান্তরিত করে বাজি ধরার উপযোগী করা হয়। আর শেষ পর্যন্ত আবার সেগুলোকে নগদ অর্থে রূপান্তরিত করে হংকংয়ের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তবে ৮৭০ কোটি ডলারের তহবিল জব্দের পর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফিলিপাইনের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা।

সবই জানতেন আরসিবিসি শাখার কর্মকর্তারা

ইনকোয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাকাতি সিটির জুপিটার স্ট্রিটে অবস্থিত আরসিবিসি শাখায় মূল লেনদেনের ঘটনা ঘটেছিল। শাখাটির প্রধান এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিষদ বরাবর দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইয়ুচেংকো পরিবার পরিচালিত ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারা লেনদেনের একেবারে আদি-অন্ত জানতেন।’

জুয়ার চিপস বা কয়েন

আর এর পর ব্যাংকের আভ্যন্তরীণ তদন্তের স্বার্থে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ব্যবসায়ী থেকে জুয়ার আসর
কয়েক মাস আগে সৃষ্ট ৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তহবিলগুলো জমা করা হয়েছিল এবং তা পেসোতে রূপান্তরিত করতে ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্রোকার ফিলরেমে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এরপর তা আরসিবিসি বরাবর স্থানান্তর করা হয় এবং তা চীনা বংশোদ্ভূত এক ফিলিপিনো ব্যবসায়ীর নামে রাখা হয়। আর সেখান থেকেই সেগুলো ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়। ফিলিপাইনের এক সরকারি সূত্রের বরাতে ইনকোয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় ক্যাসিনো হয়ে অর্থগুলো হংকংয়ে জমা করতেন চীনা বংশোদ্ভূত ওই ফিলিপিনো ব্যবসায়ী।

ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের প্রতিনিধির দাবি, ২০১৫ সালের মে মাসে ম্যানেজারকে ৫টি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারাই এ আদেশ দেন। এ ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো খুলতে গিয়ে আরসিবিসি ব্রাঞ্চের ম্যানেজারকে ৫টি আইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়। তবে কার্ডগুলোতে যেসব পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে তার সবগুলোই কাল্পনিক। ঘটনা প্রকাশের পর এখন ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এ ব্যাপারে মুখ খোলার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছে ইনকোয়ারার। কারণ তার আশঙ্কা, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সব দায় তার গায়ে দিয়ে দিতে পারে।

জড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকও
নিজেদের হাতে আসা নথির বরাতে ইনকোয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮ কোটি ১০ লাখ সমমূল্যের তহবিলের আভ্যন্তরীণ লেনদেন ৫ ফেব্রুয়ারি হয়েছে। ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের প্রতিনিধির দাবি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক করেসপন্ডেন্ট ব্যাংক ব্যাংক অব নিউইয়র্ক, সিটি ব্যাংক এবং ওয়েলস ফার্গোর মতো ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে তহবিল ক্লিয়ার করা হয়েছিল। এরপর সুইফট ম্যাসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিনিধিরা আগত তহবিলের ব্যাপারে সংকেত পান।

পদ্ধতিগত ব্যর্থতা
কর্মকর্তাদের মতে, ‘এ লন্ডারিংয়ের ঘটনায় ক্যাসিনোকে যে লেনদেন চক্রের একটি অংশ করা হয়েছিল তা সত্য। কিন্তু তার আগেও লেনদেনের জন্য ব্যাংকিং সিস্টেমে অনেকগুলো পর্যায় বা লেয়ার থাকে। আর সেগুলোর মধ্য দিয়ে সন্দেহজনক তহবিল শনাক্ত করে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। মূল কথা হলো এক্ষেত্রে সিস্টেম ব্যর্থ হয়েছে।’

মানি লন্ডারিং

আরবিসি থেকে অর্থগুলো ক্লায়েন্টের হাতে ছাড়ার পরই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরাবর সুইফট সিস্টেমের মাধ্যমে ‘এমটি১০৩’ নামের তথাকথিত একটি বার্তা আসে। তাতে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের লেনদেনের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয় এবং আরও ৮৭ কোটি ডলার অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের কথা বলা হয়। ব্যাংকের একটি সূত্র ইনকোয়ারকে জানান, বার্তাটি পাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ৮৭ কোটি ডলার স্থানান্তর বন্ধ করা হয় কিন্তু বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার নিয়ে কিছু করার ছিল না, কারণ সেগুলো আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সে সময় থেকে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়।

তহবিল ফেরতের দাবি বাংলাদেশের

তহবিল ফেরতের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাও ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংকো সেনট্রাল এনজি পিলিপিনাস’ পরিদর্শন করেন বলে উল্লেখ করেছে ইনকোয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে চীনা হ্যাকাররা যে অর্থ চুরি করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে সেগুলোই ফেরত চাইতে যান বাংলাদেশি কর্মকর্তারা। আরসিবিসি ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের প্রতিনিধি জানান, ‘ব্যাংকো সেনট্রাল এনজি পিলিপিনাস’ তাকে ব্যাংকিং নীতিমালা ভঙ্গের জন্য ‘অরেঞ্জ লিস্ট’ নামের তথাকথিত অপরাধী তালিকায় ফেলে দেয় কিনা তা নিয়ে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার শঙ্কিত।

নির্দেশ এসেছিল উপর থেকে
ম্যানেজারের প্রতিনিধির দাবি, সত্যিকার অর্থে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশেই ম্যানেজার কাজটি করেছেন। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত রয়েছেন যে তিনি কোনও ধরনের ব্যাংকিং নীতিমালা কিংবা লন্ডারিংয়ের আইন লঙ্ঘন করেননি। এ ব্যাপারে ১৪ মার্চ সিনেট ব্লু রিবন কমিটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আর সে পর্যন্ত ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও তার প্রতিনিধির নাম অপ্রকাশিত থাকছে।

সিনেটের পাশাপাশি, ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট অ্যান্ড গেমিং কর্পোরেশন ও ঘটনাটির ব্যাপারে তদন্ত চালাচ্ছে। সূত্র: ইনকোয়ারার.নেট

/এফইউ/বিএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!