X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়কে জয় করে উৎকর্ষতা অর্জন

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:৫৪আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:৫৪

নৈরাজ্যবাদ বা এনারকিজমের শৈল্পিক প্রতিফলনে নির্মিত টড ফিলিপসের ‘জোকার’ চলচ্চিত্রে অসম্মান, অসংলগ্নতার মনস্তত্ত্ব থেকে নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং সমাজকে চ্যালেঞ্জ করা প্রতিরূপায়িত হয়েছে। যদিও নৈরাজ্য বা অস্থিরতা শিল্পে যতটা নান্দনিক বাস্তবে সেটা ততটাই বীভৎস ও ক্ষেত্র বিশেষে মারাত্মক অপ্রাসঙ্গিক। তাছাড়া নৈরাজ্যবাদের সংজ্ঞায় রাষ্ট্রবিহীন সমাজ বা কর্তৃপক্ষবিহীন ব্যবস্থার কথা থাকলেও খোদ নৈরাজ্যবাদীরাই একে বাস্তবায়নের স্পষ্ট রূপরেখা দিতে পারেনি।

একসময়ের বিরোধীদল বিএনপির রাজনৈতিক পথরেখাও এই নৈরাজ্যবাদীদের মতোই ধ্বংসযজ্ঞে ভরা এবং অপ্রাসঙ্গিক। আরও স্পষ্ট করে বললে, গন্তব্যহীন।

বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করতে গিয়ে জনগণের প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনগুলোকে উপেক্ষা করেছে। ফলাফল, এরা আরও অপ্রাসঙ্গিক ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিএনপি নৈরাজ্যবাদীদের মতোই এলোমেলো আগুন-সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা করছে। অথচ এরা জনগণের প্রয়োজনে জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। করোনার মতো বৈশ্বিক দুর্যোগে এদের জনগণের ধারে-কাছে দেখা যায়নি। প্রতিবেশীর লাশ দাফন, খাদ্য সহায়তা কোনও কিছুতেই এরা জনগণের পাশে ছিল না। বরং দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতায় আসার জন্য আগের মতো আগুন-সন্ত্রাস শুরু করেছে।

এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরা ২২ হাজার ৪০৬ জন মানুষকে পুড়িয়ে আহত করেছে। প্রায় ৫০৬ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এদের আগুনসন্ত্রাসে গণমাধ্যমকর্মী, পথচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছিল। দেশ যেখানে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে মজবুত করে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে চেষ্টা করছে সেখানে এরা রেলের কোচ, রেললাইন ও বাসে আগুন দিচ্ছে, ধ্বংস করছে জনসম্পদ। উন্নয়নমুখী রাজনৈতিক বাস্তবতায় যা একেবারেই মূল্যহীন।

ক’দিন আগেও বিএনপির নেতাকর্মীদের দেওয়া আগুনে একজন মা ও তার সন্তান দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। জানা যায়, মৃত্যুর সময়ও সেই মা তার সন্তানকে কোলে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন।

এবারে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি তার কৌশলের পরিধি বাড়িয়েছে। দেশের ব্যবসার বাজার ধ্বংস করতে লবিস্ট নিয়োগ করে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার জন্য চেষ্টা করছে। কোন দল তার দেশের জনগণের পেটে লাথি মারার জন্য এমন আচরণ করতে পারে, এমন নজির বিশ্ব এর আগে দেখেনি। বিএনপি সেই নজির তৈরি করেছে। অর্থাৎ আগামীতে দেশের জনগণকে মোটা দাগে দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এক. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, দুই. জঙ্গি কায়দায় জানমালের ক্ষতি রোধ করা।

ভৌগোলিক রাজনীতি বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। বিশেষ করে তার সমুদ্র পথের জন্য। গোটা এশিয়ায় বাজার ব্যবস্থাপনা ও নজরদারির জন্য বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমার গুরুত্ব সীমাহীন। তাছাড়া এখানকার জনগণ বিগত ১৫ বছরে যে অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন অর্জন করেছে তা এই অঞ্চলের দিকে বিশ্বব্যবস্থাকে ভাবতে ও ঝুঁকতে বাধ্য করেছে। এর বাইরে, বৈশ্বিক রাজনীতির বাজারে সাহায্যের আদলে যে শোষণ সেই ব্যবস্থা থেকেও বাংলাদেশ বেরিয়ে আসছে। অর্থাৎ শোষকদল একজন শোষণক্ষেত্র হারাচ্ছে। যা তাদের জন্য বেদনার ও অমর্যাদার!

বাংলাদেশ বিগত ১৫ বছরে তার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিতে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। উপমহাদেশীয় রাজনীতির যে রক্তপাতের ইতিহাস সেটাকে কবর দিয়েছে। যার প্রমাণ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর সরাসরি গ্রেনেড হামলার পরও বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনা প্রতিশোধের নয়, বরং বিচারিক প্রক্রিয়ায় এগিয়েছেন। দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন।

এরপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর কেউ কেউ বিরক্ত। কারণ, কিছু দিন আগেও ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের ‘দীর্ঘ যানজট’কে ঘিরে ভ্রাম্যমাণ পানির ব্যবসা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জনদুর্ভোগ ঘোচাতে ঢাকা-উত্তরবঙ্গগামী সড়ককে চার লেনে উন্নীত করেছেন। পদ্মা সেতুর কারণে রাত-দিনের ফেরি পারাপারের অমার্জনীয় কষ্ট দূর হয়েছে। এই ভোগান্তিকে নিয়েও রমরমা ব্যবসা ছিল। বর্তমান সরকার সেই ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছে। অর্থাৎ যারা জনভোগান্তিকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করতেন তারাই দেশের উন্নয়ন-অর্জনের সমালোচক।

১৫ বছর আগেও এ দেশের শিক্ষার্থীরা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় বেড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার সেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে প্রায় শতভাগে উন্নীত করেছে। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮.৭ শতাংশ করেছে। সামাজিক নিরাপত্তাসহ মৌলিক উন্নয়নের কারণে গড় আয়ু ৫৯ বছর থেকে ৭২.৮ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৮৪ জন থেকে কমে ২০ জনে নামিয়ে নিয়ে এসেছে। মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৩৭০ জন থেকে কমে ১২৩ জন হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ৫৪ শতাংশ থেকে ৯৮.২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে শতভাগ আবাসনের পরিকল্পনা নিয়েছে। তৃণমূল পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবাকে পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থা করেছে। যা বিশ্বে প্রথম। তবে আশঙ্কার কথা, এত কিছুর পরও দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অর্জনের চালিকা বা মিত্রশক্তি ‘একক’ হলেও অক্ষশক্তি ঘরে-বাইরে। এরপরও এরকম এগিয়ে চলা সত্যি প্রেরণার।

ভিনদেশি একটা গল্প আছে। ভরা বাজারে একজন ব্যক্তি হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় লোকজন তাকে ঘিরে পথ্যের আয়োজন শুরু করে। হঠাৎ সে ব্যক্তি নেশাগ্রস্ত কণ্ঠে বললেন, আরেকটু ‘সারাপ’ হবে। লোকজন নচ্ছার ব্যক্তিকে ফেলে যে যার কাজে চলে যায়। বিএনপিকে ঘিরে যারা এই মুহূর্তে খানিক আগ্রহ দেখাচ্ছে তাদের অবস্থাও ওই ব্যক্তিকে ঘিরে থাকা জনগণের মতো হবে। অর্থাৎ সত্য জানার পর সবাই সরে যাবে। কারণ, বাঙালির আপনজন শেখ হাসিনা আগুন-সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের বিপরীতে জনগণকে ভালো থাকা শিখিয়েছেন, অন্ধকারকে জয় করা শিখিয়েছেন।

লেখক: মহামান্য রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব।

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে
শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে
ডিবি পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
ডিবি পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
ভুয়া মৃত সনদ নিজেই তৈরি করতো মিল্টন: হারুন অর রশীদ
ভুয়া মৃত সনদ নিজেই তৈরি করতো মিল্টন: হারুন অর রশীদ
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ