X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

আসামে বিজেপির জয় কি সংকটে ফেলবে বাংলাদেশকে?

আনিস আলমগীর
১০ মে ২০১৬, ১২:১৬আপডেট : ১০ মে ২০১৬, ১২:১৮

Anis Alamgirভারতের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা মিজোরাম- ভারতের এ পাঁচটি রাজ্যের সীমানা রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। বহুবিদ সমস্যাও আছে। ভারতের সংবিধান মতে বিদেশিদের সঙ্গে কোনও চুক্তি করতে চাইলে চুক্তিভুক্ত বিষয়টি যদি কোনও রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয় তবে সে রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে সে রাজ্যের যথাযত সম্মতি নিয়ে চুক্তি করতে হয়। এটা ভারতীয় সংবিধানের বাধ্যবাধকতা। আমাদের ৫৪টি নদীর উৎস মূখ ভারতে। আর এই ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এ পাঁচটি রাজ্যের কোনও না কোনও রাজ্য হয়ে। সুতরাং ভারতের এ পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন হলে বাংলাদেশের মানুষের খোঁজখবর রাখা স্বাভাবিক-- কোন দল কোন রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে।
মনমোহন সিং-এর সরকার চেষ্টা করেছিলেন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত সমস্যা  সমাধান করতে আর তিস্তা নদীর পানিবণ্টন এর বিষয়টা চূড়ান্ত করতে। কিন্তু মনমোহন সরকারের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি কারণ বিজেপির বিরোধিতার কারণে শাসনতন্ত্র সংশোধন করা যায়নি। আর পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অসম্মতির কারণে তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়েও কোনও মীমাংসা সম্ভব হয়নি। মনমোহন সিং এর শেষবারে বাংলাদেশ সফরের সময় এই দুই চুক্তি করার কথা ছিল কিন্তু তিনি বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত বাঁধ রক্ষার চুক্তি করে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন।
ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনের পর নরেন্দ্র মোদি যখন সরকার গঠন করেন তখন কংগ্রেস পঞ্চদশ লোকসভায় শাসনতন্ত্রের যে সংশোধনী এনেছিলো সেই সংশোধনীই লোকসভা ও রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশনে পাস করিয়ে  নেন। বাংলাদেশে তার প্রথম সফরের সময় সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং ছিটমহলও বিনিময় করেন। কিন্তু মমতা ব্যানার্জীর বিরোধিতার কারণে তিস্তার পানিচুক্তি সম্পাদন করা সম্ভব হয়নি। অথচ বামফ্রন্ট যখন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল আর জ্যোতি বসু পশ্চিম বাংলার মূখ্যমন্ত্রী তখন তার আন্তরিক সহযোগিতার কারণে ত্রিশ  বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছিল।

বৃহত্তম রংপুর জেলায় তিস্তায় পানি প্রবাহ না থাকায় পানির অভাবে সেচ প্রকল্পগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং আবাদ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে-  ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিকতা থাকার পরও। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতার কারণে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদন করা এখনও সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিপরীতে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এ পাঁচ রাজ্যকে আন্তরিক সহযোগিতা করে আসছে।

ত্রিপুরা রাজ্যে দরাটানা বিদ্যুৎ প্রজেক্ট করা কখনও সম্ভব হতো না যদি ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর ব্যবহারের অনুমতি না দিত এবং আখাউড়া হয়ে স্থল পথে ত্রিপুরায় যন্ত্রপাতিগুলো পরিবহনের জন্য সহযোগিতা না করতো। অবশ্য এতে বাংলাদেশও উপকৃত হয়েছে। ত্রিপুরা সরকার দরাটানা প্রজেক্ট এর উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করেছে এবং আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব করেছে। ৭৫ কি.মি. গ্রিড লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার কাজও সম্পন্ন হয়েছে।

ভারতের পার্বত্য রাজ্যগুলোতে কোনও ভারী উন্নয়ন সম্ভব হবে না যদি বাংলাদেশ আন্তরিকতার সহিত সহযোগিতা না করে। পার্বত্য রাজ্যগুলোতে শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে বাংলাদেশের সহযোগিতা ছাড়া ওই রাজগুলোর বহিঃবাণিজ্য সম্প্রসারণের কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ এ রাজ্যগুলোর নিকটবর্তী কোনও বন্দর নেই যেখান থেকে বিদেশে মালামাল যাওয়া আসা করবো। তাদের জন্য সহজ এবং নিকটবর্তী বন্দর হচ্ছে চট্টগ্রাম বা মংলাবন্দর। আখাউড়া থেকে আসাম পর্যন্ত রেল-লাইন স্থাপন সহজ। আর তামাবিল হয়ে স্থলপথ রয়েছে। এ সব কিছু বিবেচনা করেই ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার দিল্লী গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন যুক্তি সম্পাদনের তাগিদ দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।

এখন বাংলাদেশের অনেক মানুষ উন্মুখ হয়ে চেয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে কোন দল জিতে আসে। বাম-কংগ্রেস জোট জিতে আসলে বাংলাদেশের জন্য সুবিধা হবে সহসা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটা সম্পাদন হবে। তৃণমূল কংগ্রেস জিতলে মমতা ব্যানার্জী মূখ্যমন্ত্রী হলে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। পশ্চিমবঙ্গে এবার রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বাম-কংগ্রেস ফ্রন্টের মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। অর্ধেক নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস মাস্তানী করতে পরেছে। মাস্তানী করতে না পারলে বলা যেত বাম-কংগ্রেস ফ্রন্ট জিতে আসবে। এখন সেরূপ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

আসাম নিয়েও বাংলাদেশের মাথা ব্যাথা কম নেই। এবার আসাম রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেস, বিজেপি জোট এবং বদরুদ্দীন আজমল এর এআইডিইউএফ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। আসামে কংগ্রেস গত ১৫ বছরব্যাপী ক্ষমতায়। অরুন গৈগি মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কংগ্রেস কারও সঙ্গে জোট করেনি। কিন্তু বিজেপি আসাম গণপরিষদসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করছে। আর নরেন্দ্র মোদি তাসের কোনওটাই হাতে রাখেননি, সবই খেলেছেন। ১৫ দিনে ১৪টি জনসভা করেছেন। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ আসামেই পড়ে আছেন।

কংগ্রেস একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় প্রতিষ্ঠানিক বিরোধিতার মূখে পড়েছে আসামে। এআইডিইউএফও কম শক্তিশালী নয়। গত লোকসভা নির্বাচনে তারা তিন আসন পেয়েছিল। কংগ্রেসও পেয়েছিলো তিন আসন আর বিজেপি পেয়েছিলো সাতটি আসন। কংগ্রেস, বিজেপি জোট উভয়ে বিজয়ের দাবী করছে। আবার বদরুদ্দীন আজমলের দাবি সরকার গঠনের চাবি তার হাতে। অবশ্য কোনও দল যদি ৬৩ আসনের কম পায় তবে বদরুদ্দীন আজমলের এআইডিইউএফ- এর কাছে ধর্না দিতে হবে।

এবারের নির্বাচনে বিজেপি জোট বলেছে তারা সরকার গঠন করতে পারলে বাংলাদেশি মুসলমান তাড়িয়ে দেবে। আসামীদের এই দাবি বহুদিনের। মওলানা ভাসানীর হাত ধরে হাজার হাজার মুসলমান আসামে বসতি স্থাপন করেছিল। ভাসানী তখন ভাসান চরে থাকতেন। আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি। বাংলার মুসলমান নিয়ে আসামের মূখ্যমন্ত্রী স্যার সা’দুল্লাহ্ এবং গোপীনাথ বরদুলুইর সঙ্গে মওলানার বহু বিবাদ হয়েছে। বহুদিন এ বিষয়টা নির্জীব ছিলো। আসামগণ পরিষদ একবার এ দাবি তুলে ক্ষমতায় এসেছিল তবে কোনও কিছু কার্যকর করতে পারেনি। অবশ্য আসাম গণপরিষদের দাবি ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু-মুসলমান উভয়কে তাড়ানো হবে। কিন্তু এবার বিজেপির দাবি হলো শুধু মুসলমানকে তাড়িয়ে দেবে। এটা অনেকটা সাম্প্রদায়িক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। অমিত শাহকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো কোথায় তাড়াবেন তখন অমিত শাহ বলেছেন- সরকার গঠন করার পর এ বিষয়টা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা আরম্ভ করবো। লক্ষ লক্ষ লোক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসলে বাংলাদেশের অবস্থাটা কী হবে? ৭০/৮০ বছর পর এটা কি অদৌ সম্ভব? তখন এক দেশ ছিলো সর্বত্র বসতির অধিকার ছিল।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ