X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিজামী, পাকিস্তান ও বিএনপি- একই চক্র

নাদীম কাদির
১৬ মে ২০১৬, ১৬:৫৭আপডেট : ১৬ মে ২০১৬, ১৭:১২

নাদীম কাদির যখন বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের প্রগতিশীল মানুষরা ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় আনন্দ করছে, সে সময় পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির দিক থেকে আসা উল্টো হাওয়া একটি দুষ্টচক্রকে দৃশ্যমান করে তুলছে। চক্রটি মিথ্যা ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি প্রতারণার।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটা অত্যন্ত শান্তির কথা যে নিজামীসহ আরও চার যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয়েছে, এদের মধ্যে বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও রয়েছেন।
প্রথমত, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও পাকিস্তান তাদের ‘সহানুভূতি’ দেখিয়ে গিয়েছে, যতবার কোনও যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, ততবারই ইসলামাবাদ থেকে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে প্রমাণিত হয়, ১৯৭১ এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কেবল বাংলাদেশে গণহত্যাই পরিচালনা করেনি, বরং নিজামীর নেতৃত্বে আল-বদরের মতো মিলিশিয়া বাহিনীও চালিয়েছে।
নিজামীর মতো লোকেরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে ষড়যন্ত্র করেছে, পাকিস্তানের মদদে ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে।
পাকিস্তান এখনও মানতে পারে না যে, বাংলাদেশ এখন আর পূর্ব পাকিস্তান নেই, বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের উপদেশ শুনতে বাধ্য নয়।
এতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল নিজামী ও তার মতো মানুষরাই।
যদি তাদের এসব কার্যকলাপ সত্যি না হতো, তাহলে পাকিস্তান এদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এত ‘দুঃখিত’ হতো কেন, যদি পাকিস্তান, যাকে অনেকেই ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ বলে থাকে, কেন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করা এই নেতাদের নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হতো!

আরও পড়তে পারেন: ‘আইএস নয়, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে জামায়াত শিবির জড়িত’
প্রতিটা বিবৃতিতেই এই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়েছে, পাকিস্তান এমন এক রাষ্ট্র যারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি না করে উল্টো যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন দিয়েছে।
সরকারের এক মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে পাকিস্তান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কমনওয়েলথে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলামাবাদ কেন বিএনপি ও খালেদা জিয়ার বিষয়ে এত স্পষ্ট অবস্থানে আছে!
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ কমনওয়েলথে বিএনপির প্রসঙ্গটি তোলেন। তার কথায় মনে হয়েছিল তিনি বিএনপির একজন মুখপাত্র।
প্রথমত, জামায়াতসহ সকল ধর্মভিত্তিক সংগঠনকে বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ও জামায়াত-ই-ইসলামীর মতো রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর জন্য বাংলাদেশের দরজা খুলে দেন। বিএনপির ওপর পাকিস্তানের প্রভাব বোঝা যায় যখন বেগম জিয়া পাকিস্তান সফর করে মাঝারি মাপের এক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুতে সহানুভূতি প্রকাশ করেন, যে সেনা কর্মকর্তা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।

আরও পড়তে পারেন: আইএস’র দায় স্বীকারের নেপথ্যে সন্দেহ করা হচ্ছে আসলামকে

দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়া তার সমস্ত কর্মকাণ্ডে ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়ে ঢাকাকে ইসলামাবাদের কাছাকাছি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন, যে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, যে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন খালেদার স্বামী জিয়াউর রহমান নিজেও।

তৃতীয়ত, খালেদা জিয়া ও তার বিএনপি দুই জামায়াত নেতাকে মন্ত্রিসভায় শিল্প ও সমাজকল্যাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে যুক্ত করেছিলেন। এতে জামায়াতের শক্তিবৃদ্ধি হয়, বিশেষত এনজিও খাতে শত শত ইসলামি সংগঠনের জন্ম হয় ২০০১-২০০৬ সময়কালে।

চতুর্থত, বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি ও শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশে তালেবান কর্মকাণ্ডের সূচনা করে।

পঞ্চমত, বিএনপির ভুয়া ইসলামি বাণী প্রমাণিত হয় ইসরায়েলের মোসাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগে।

ষষ্ঠত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এমপি মাহজাবিন খালেদ, মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফের কন্যা, আবিষ্কার করেছেন জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। জিয়া ক্ষমতায় আসার পর এমন কথাও বলেছিলেন।

সম্প্রতি আমার কিছু ব্রিটিশ সহকর্মী আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু কী? আমার জবাব ছিল- আমাদের প্রধানমন্ত্রীর গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইসলামি উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে মুক্ত সমাজ নির্মাণের প্রচেষ্টা।

পরের প্রশ্ন ছিল- ‘তুমি কি জিতবে?’

আমার উত্তর ছিল- ’৯৯ শতাংশ বাংলাদেশি শেখ হাসিনার পক্ষে, অন্তত এই ইস্যুতে তো বটেই, বাংলাদেশিদের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। জয় বাংলা।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।         
লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ