X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নস্টালজিক মানিপ্ল্যান্ট

রাশেদা রওনক খান
১৮ মে ২০১৬, ১৪:২৭আপডেট : ১৮ মে ২০১৬, ১৫:৪০

রাশেদা রওনক খান ছোটবেলায় মানিপ্ল্যান্ট গাছকে আমি টাকার গাছ বলে ডাকতাম।  মনে আছে- ছোটবেলায় মা প্রথম যেদিন বললেন, এই গাছটির নাম মানিপ্ল্যান্ট। আমি অনেক চিন্তা করে বলেছিলাম, 'মা এই গাছটি কি অনেক টাকা দেয়?' মা হেসে উত্তর দিলেন, 'দেবে, যদি যত্ন নাও!' সেই থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন খেলায় টাকা দরকার হলেই মানিপ্ল্যান্ট হতে পাতা ছিড়ে টাকা বানাতাম! অনেকদিন পর মাকে বললাম, 'মা কই, এই গাছ তো টাকা দেয় না!' মা আবারও রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন, 'তুমি গাছের পাতা ছিড়ে টাকা বানাবে, আর ও তোমাকে টাকা দেবে?' সেদিন হতে কোনও গাছের পাতা ছিড়তে গেলেই মায়ের কথা মনে পড়ে যেত, পাতা আর ছেড়া হতো না কখনই!
আমার ছোটবেলা কেটেছে কুমিল্লা শহরে। কলেজ শিক্ষক মা কলেজ হতে ফেরার পথে প্রায়ই বিভিন্ন গাছ নিয়ে আসতেন লাগানোর জন্য। আমাদের কুমিল্লার বাসাটির সামনে দিয়ে পথচারী যাবেন, আর একবার-দুবার তাকিয়ে দেখবেন না, তা হবার নয়! এই নিয়ে একবার আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম ছাদে দাঁড়িয়ে। পথচারীরা যখন হেঁটে যান, আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গুনবো কতজন বাসার সামনে দিয়ে যান, কিন্তু আমাদের বাসার দিকে না তাকিয়ে চলে যান! দেখা গেলো, যিনিই যান বাসার দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই যান! এর কারণ হলো, গেট হতে বাসা পর্যন্ত যে লন, এই লনটি ভরে থাকত আমার মায়ের নিবিড় পরিচর্যা আর পরম যত্নে বেড়ে ওঠা একঝাক বাগান বিলাস আর অন্যপাশে মানিপ্ল্যান্ট গাছে! এই দুটো গাছ দিয়ে ঢেকে থাকত আমাদের বাসার বারান্দা!  

আরও পড়তে পারেন: সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রশ্নফাঁস চলছেই
আমাদের বাসার পেছনে যে বারান্দা, সেটি জুড়েও ছিল মানিপ্ল্যান্ট গাছ, বাসার চারপাশে যে দেয়াল তা জুড়েও আমার মায়ের লাগানো কমপক্ষে ২০-২৫ টির  মতো মানিপ্ল্যান্ট এর লতা বেয়ে গেছে দেয়াল জুড়ে! মনে আছে, মা অন্যান্য গাছের যত্ন একটু বেশি করতেন, মানিপ্ল্যান্টগুলোকে একটু কম যত্ন করতেন। বলতেন, ওদের অন্য গাছের মতো অত চাহিদা নেই! অল্প যত্নেই ওরা বেড়ে ওঠে! আর লতা বেশি লম্বা হলেই কেটে নিয়ে বোতলে ভরে ঘরের কোনে রেখে দিতেন, ক'দিন পর এগুলোও লম্বা হয়ে দেয়াল বেয়ে উপরে উঠে যেত। আর তখন মায়ের চোখে দেখতাম তৃপ্তির হাসি! আমি প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখতাম আমার পড়ার টেবিলে রাখা মানিপ্ল্যান্টটা আজ কতটুকু লম্বা হলো! যেন, তার সঙ্গে পাল্লা চলত আমার বড় হয়ে ওঠা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হলাম, হলে সিট পেতেই মা আমার মানিপ্ল্যান্ট নিয়ে হাজির এবং আমার পড়ার টেবিলটা ছিল জানালার ঘেষে, তাই জানালার পাশ ধরে ঝুলিয়ে দিলেন। পড়ালেখার মাঝে হটাৎ মাকে অনুভব করলেই, গাছটির দিকে তাকাতাম, কথা বলতাম আপন মনে মায়ের সঙ্গে, গাছটি আমার সেই কথা শুনত চুপটি করে। পরীক্ষার সময় পড়তে পড়তে ক্লান্ত লাগলে গাছটির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতাম। ছোটবেলায় মা শিখিয়েছিলেন, চোখে ক্লান্তি এলে টেবিলের গাছ বা বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকাবে, দেখবে চোখ কেমন আনন্দিত হয়ে ওঠে, ক্লান্তি চলে যাবে!
আমেরিকায় গিয়ে প্রথমেই একটা মানিপ্ল্যান্ট কিনে ঘরের কোনে রাখি। সুদূর আমেরিকায় বসে পিএইচডি'র কোর্সওয়ার্কের কঠিন পড়াশুনা যখন আর ভালো লাগত না, মনে মনে স্থির করতাম, পড়াশুনা ছেড়ে চলে যাবো মায়ের কাছে, তখন এই গাছটিই আমাকে দিয়েছিল সান্তনা। মা যখন আমেরিকায় আমার বাসায় গেলেন, দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলেন গাছটি। মা যেন যা বোঝার বুঝে নিলেন। আমি জানি, মা আমার মতো করেই দেশকে মিস করলে ওকে যত্ন নিতেন, হয়ত আমার মতো করে গাছটির সঙ্গে কথাও বলতেন! আমি অবশ্য ওই সময়গুলোতে আর দেশকে মিস করতাম না। মা আছে পাশে- মানে দেশ আছে আমার কাছে, পুরো পৃথিবীই আমার!

আরও পড়তে পারেন: অভিযুক্ত দুই পরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
দেশে ফেরার পর বিভিন্ন ঝুট-ঝামেলা-ফিল্ড ওয়ার্ক সব মিলিয়ে  ভুলে গেছি মানিপ্ল্যান্টের কথা! হটাৎ সেদিন ১৩ মে বাংলা ট্রিবিউন তার জন্মদিনে উপহার দিল সেই ভালোবাসার মানিপ্ল্যান্ট! পথে যেতে যেতে ভাবছিলাম, এই প্রথম এখনও আমার পড়ার টেবিলটায় কোনও মানিপ্লান্ট নেই! কয়েকমাস হয়ে গেল আমি দেশে ফিরেছি, নানা ব্যস্ততায় খেয়ালই করিনি!
বাংলা ট্রিবিউন আমার অযথা ব্যস্ততাকে ছুটি জানিয়ে মনের জানালায় এনে  ছোটবেলার অনেক কথা- সেই টাকার গাছ, ছোটবেলার সেই বাগান-বিলাস আর মানিপ্ল্যান্ট গাছে ভরা ঝাউতলার বাসাটির কথা, বাবার মুখের সেই 'রণ' ডাক, মায়ের অনেক আদর-অনুশাসনের কথা, সব কিছু! আমার ঘরের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা আমার পড়ার  টেবিল, সেটা আবারও তার মানিপ্ল্যান্ট ফিরে পেল!
টেবিলের কাছে এলেই নস্টালজিক হয়ে যাই, মনে পড়ে সেই ছোটবেলার স্মৃতি! ধন্যবাদ বাংলা ট্রিবিউন! এভাবেই বাংলা ট্রিবিউন ভালবাসায় সিক্ত করুক সবার হৃদয়, আর কৃতজ্ঞতা নিয়ে আবদ্ধ হই আমরা, পাঠককূল!

লেখক: শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ