X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

মন ভালো করা একটি খবর, আশঙ্কা নেইতো!

হারুন উর রশীদ
২৫ মে ২০১৬, ১৫:৫৭আপডেট : ২৫ মে ২০১৬, ১৬:৫৩

হারুন উর রশীদ বাংলাদেশের সুপ্রিমকোর্ট মঙ্গলবার সকালে একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। এই রায়টি আসলে হাইকোর্টের একটি রায় বহাল রাখার। আর এই রায়ের ফলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ পুলিশি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের আইনি হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন বলে আশা করা যায়।
সুপ্রিমকোর্ট বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৫৪ এবং ১৬৭ ধারা নিয়ে আগে হাইকোর্টের দেওয়া একটি রায়কে বহাল রেখেছেন। আর এর  ফলে এখন থেকে মোটাদাগে সরকার ও পুলিশকে তিনটি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
১. ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নেওয়া যাবে না।
২. পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না।
৩. সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা যাবে না।
মোটাদাগে এই তিনটি বিষয়ের আরও বিস্তারিত নির্দেশনা আছে।
পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামিম রেজা রুবেল নিহত হওয়ার পর ২০০৩ সালে সিআরপিসি’র ৫৪ এবং ১৬৭ ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।

আরও পড়তে পারেন: বাঁশখালীর কান্না: ‘খুব জুলুমে আছি, খুব নির্যাতনে আছি’
২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই রিটের ওপর রায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার ৫৪ এবং ১৬৭ ধারার ওপর বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে রিট নিষ্পত্তি করেন । কিন্তু সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। আর মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্ট আরও  কিছু নির্দেশনাসহ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলেন। এই মামলার আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে সবকিছু জানা যাবে। তবে হাইকোর্টের সব নির্দেশনা স্পষ্টতই বহাল আছে।’

আমি নিজে এই রায়টিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি ঐতিহাসিক রায় বলে মনে করি। কারণ, এই রায় মেনে যদি সরকার ও পুলিশ কাজ করে তাহলে সন্দেহজনক আটকের নামে হয়রানি, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, বিনা বিচারে আটক, সাদা পোশাকে গ্রেফতার বন্ধ হয়ে যাবে। আর বন্ধ হবে এসব ব্যবহার করে পুলিশের ‘ঘুষ বাণিজ্য’ এবং সরকারের প্রতিপক্ষকে নির্যাতনের ঐতিহাসিক প্রবণতা। 

হাইকোর্ট ২০০৩ সালে আদেশে বলেছেন-

১.পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় সন্দেহজনকভাবে আটক করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ দিতে পারবে না।

২. কাউকে সাদা পোশাকে আটক করা যাবে না। আটকের সময় অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।

৩. আটকের তিন ঘণ্টার মধ্যে যাকে আটক  করা হয়েছে তাকে আটকের আইনগত কারণ জানাতে হবে।

৪. আটকের এক ঘণ্টার মধ্যে তার আত্মীয়-স্বজনকে জানাতে হবে এবং যিনি আটক হয়েছেন তার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হবে আইনি সহায়তা নেওয়ার জন্য।

৫. পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া যাবে না। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে কারা হেফাজতে। একটি কাঁচের ঘরে কারা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কক্ষের বাইরে আটক ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন এবং আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারবেন।

৬. আদালতের অনুমতি না নিয়ে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার কোনও ব্যক্তির জন্য রিমান্ড আবেদন জানাতে পারবে না পুলিশ।

৭.  রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে আটক ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

৮. রিমান্ডে কোনও শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণ হলে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে আরপিসি’র ৩৩০ ধারায়। 

এছাড়া হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোনও আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না। আর যাকে আটক করা হবে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।

হাইকোর্টের এইসব নির্দেশনা মেনে ৫৪ এবং ১৬৭ ধারাসহ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৬ মাসের মধ্যে।

আরও পড়তে পারেন: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সব জামায়াত নেতাকে ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ খেতাব দেওয়ার প্রস্তাব

সিআরপিসি’র ৫৪ ধারা মূলত সন্দেহজনক আটকের। আর ১৬৭ ধারা পুলিশ রিমান্ড সংক্রান্ত। আর এই দুইটি ধারা মূলত নাগরিক এবং মানবাধিকার পরিপন্থী। বিনা কারণে আটক, প্রতিশোধমূলক আটক, বিনাবিচারে আটক, বিনা মামলায় আটক, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যু এসবের উৎসই হচ্ছে এই দু’টি ধারা। যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আটক ও নির্যাতনে এই দু’টি ধারা ব্যবহার করেন। আর পুলিশ ব্যবহার করে প্রধানত- উৎকোচ আদায়ে।

এরইমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল পুলিশকে ৫৪ এবং ১৬৭ ধারা সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। আর না মানলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

আর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আপিল বিভাগের আদেশ মেনে প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনে পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন।

আইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমাদের এখন দাবি হলো, ৫৪ ধারায় যারা এখন পর্যন্ত আটক আছেন তাদের বিষয়গুলো আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে পর্যালোচনা করা হোক। আর আজ  থেকে কাউকে যেন পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে না নেওয়া হয়। কারাগারে কাঁচের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ বানাতে সময় লাগবে এই অজুহাতে যেন আবারও রিমান্ডের আসামিকে থানায় পাঠানো না হয়।

আমরা আশাবাদী আপিল বিভাগের এই রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। তাহলে সংবিধানের আলোকে মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। নাগরিকদের আর পুলিশ, রাষ্ট্র বা পুলিশি ‘বেআইনি’ আচরণের শিকার হতে হবে না।

তারপরও আমরা ঘরপোড়া। তাই আশঙ্কা করি, নিশ্চয় এমন হবে না যে  কেউ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার হবেন না; কিন্তু তাদের আর অজ্ঞাত কারণে খুঁজে পাওয়া যাবে না। জানা যাবে না তাদের কে নিয়েছে, কোথায় নিয়েছে, কেন নিয়েছে!

লেখক: সাংবাদিক

ইমেইল: [email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি স্থাপনায় আগুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
আজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
হৃদয় বিদারক সেই ঘটনার ১১ বছরআজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ