X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

জি-সেভেন সম্মেলনে শেখ হাসিনা

আনিস আলমগীর
২৯ মে ২০১৬, ১২:১৪আপডেট : ২৯ মে ২০১৬, ১৪:৪০

আনিস আলমগীর সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের ছবি ফেইসবুকে প্রায় ভাইরাল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তার আন্তরিক আলাপ-আলোচনার ছবিগুলো জানান দিচ্ছিলো- বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে কতটা সমাদৃত। বাংলাদেশের মর্যাদা। বাংলাদেশ কতটা সমাদৃত বলছি এই কারণে যে, প্রধানমন্ত্রী সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ নেত্রী নন, সমগ্র বাংলাদেশের নেত্রী। তিনিই সমগ্র বাংলাদেশ। সে কারণেই একজন বাংলাদেশী হিসেবে এই ছবিগুলোর দিকে যে কারও দৃষ্টি পড়লে আনন্দিত হওয়ার কথা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্থলে সেখানে বাংলাদেশের আর কোনও নেতা নেত্রী যদি নেতৃত্ব দিতেন, এভাবে সমাদৃত হতেন- আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দলীয় অন্ধত্ব যাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়নি তাদের ছাড়া সবার সেটাও ভালো লাগতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে বিগত বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, অন্য কোনও সরকার প্রধান সেটা দিতে পারেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্র নায়করা যেমন তার আমলে বাংলাদেশ সফর করেছেন, দ্বিপাক্ষিক সফরে তিনিও সেসব দেশে গেছেন।আন্তর্জাতিক ফোরামে গৌরবময় উপস্থিতিতে তিনি দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অবশ্য জি-সেভেনে বাংলাদেশের কোনও নেতার অংশগ্রহণ এই প্রথম নয়। ১৯৮৮ সালে ফ্রান্স যখন এই বৈঠকের আয়োজক, তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পার্থক্য এটাই যে, তিনি যেখানে শেখ হাসিনার মতো মর্যাদা পাননি, অর্থাৎ বাংলাদেশ সেই মাত্রায় সম্মানিত হয়নি, সমাদৃত হয়নি। সে কারণে দেশের অবস্থান কোথায়, নেতৃত্ব কে দিচ্ছেন- ঘুরে ফিরে বিশ্ব দরবারে রাষ্ট্রের সম্মানের প্রশ্ন আসলে এই প্রশ্নও আসে।
জি-সেভেন সম্মেলনে শেখ হাসিনা গত প্রায় ৩৫ বছর শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বকে দেখে দেখে বড় হয়েছি আমাদের প্রজন্ম। এ বিষয়টা উপলব্ধি করেছি যে, তার কব্জির জোর পুরুষের চেয়ে বেশি। তার সাহস দ্বিগবিজয়ী বীরের মতো অটল। তার মাঝে দেখেছি, সংসারে যা আছে তা দিয়ে সুন্দরভাবে সুশৃঙ্খলার সঙ্গে চলার সুনিপুণ গৃহিনীর অভ্যাস।এ করে করে একটা জাতিকে তিনি একটা স্তরে এনে উপস্থিত করেছেন, যারা একদিন উন্নত জাতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিটার নির্মাণের কাজ আরম্ভ করতে পারেননি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত  অবস্থাটা কেটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হত্যা করা হয়েছিলো।বঙ্গবন্ধুর পরে যারা জাতিটার নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মাঝে শেখ হাসিনাই জাতিটাকে একটা মজবুত ভিত্তি প্রদানের চেষ্টা করেছেন।বঙ্গবন্ধুর পরে শেখ হাসিনাই এখন পর্যন্ত  প্রথম ও শেষ নির্মাতা। বিশ্বসভা তার রাষ্ট্র পরিচালনার কলাকৌশলে সন্তুষ্ট।
সম্পদশালী শিল্পোন্নত সাত জাতির সংস্থা হলো জি-সেভেন। বাংলাদেশ এ সংস্থার কোনও কিছুই নয়। তবু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে সাত জাতির জি-সেভেন সম্মেলনে যোগদান করার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিয়েছেন। জি-সেভেন এর নেতারা তাকে খুবই আহল্লাদে নিজেদের মাঝে বসিয়েছেন। আর বাংলাদেশকে তিনি কিভাবে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন তার কাহিনী শুনেছেন। সম্মেলনে জি-সেভেন এর নেতারা যারা উপস্থিত হয়েছেন তারা কেউ তাদের স্ব স্ব জাতির নির্মাতা নন। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছেন এবং বহু পূর্ব থেকে তাদের রাষ্ট্রগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত। সুতরাং একটা নির্মিয়মান জাতির যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার কথা শুনার তাদের আগ্রহ অস্বাভাবিক নয়। তাকে যে সম্মান দেখানো হয়েছে তাও অস্বাভাবিক নয়। এ সম্মান বিশ্বসভায় তার পাওনা।
কোনও পরিশ্রম কোনও ত্যাগ বৃথা যায় না। শেখ হাসিনার ত্যাগ, বাঙালি জাতিকে নিয়ে তার পরিশ্রম- তাকে আজ বিশ্বসভায় সম্মানের পাত্রী করে তুলেছে। জাতি হিসেবে এটা বাঙালি জাতিরও গর্বের, গৌরবের বিষয়।
গ্রিক জাতির নাকি পতন হয়েছিল স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান না হওয়ার কারণে। শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি তার জাতির প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি হেলথকেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি বিশ্ব ব্যবস্থায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য তার পরিকল্পিত ও প্রতিষ্ঠিত এ ব্যবস্থাটাকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কেও তিনি সম্মেলনে কথা বলেছেন। তিনি নারীর উন্নয়নে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তাও বলেছেন এবং বিশ্ব নারী সমাজের সব পর্যায়ের কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি ফেরাতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আহ্বানও জানিয়েছেন।এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সুনাম-সুখ্যাতির সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে দাবি করেছেন।
G7

পৃথিবীটা এক জায়াগায় দাঁড়িয়ে থাকে না। বিশ্ব চলমান। এ চলমান বিশ্বে কোনও জাতি স্থবির হলে বিপদ। আমাদের দেশে কিছু ধর্মান্ধ লোক চলমান বিশ্বকে আটকে দিতে চান। এতে তারা বিভিন্নভাবে ধর্মকে ব্যবহার করেন, অথচ রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, এক চিন্তা চেতনায় কারও তিন দিনের অবস্থান বিনাশের লক্ষণ। পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি কত সজাগ ছিলেন। চিন্তার উন্নয়নকে তিনি কীভাবে উৎসাহিত করেছেন- দেখার মতো।

হেফাজতে ইসলাম ও চরমোনাই -এর পীর সাহেব এখন স্কুল-কলেজের পাঠ্য বিষয়ের প্রতি নজর দিয়েছেন। হেফাজততো অন্য ধর্মের লেখকের বই বাতিলেরও দাবি তুলেছে। ইংরেজি সাহিত্যে যারা এমএ পড়েন সেখানে বিধর্মী ছাড়া কারও বই নেই। তাদের দাবি মানতে গেলে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। হেফাজতিরা আরবী সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করেন। তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলব, পয়গম্বর  (সঃ)  নিজেও জাহেলিয়া যুগের সাহিত্যকে বাতিল করেননি। জাহেলিয়া যুগের কবি সাহিত্যিকেরা মজবুত সাহিত্য সৃষ্টি করে আরবী ভাষাকে ওজনদার করেছিলেন বলে কোরানের মত শক্তিশালী আসমানী গ্রন্থ আরবী ভাষায় নাজেল হতে পেরেছিলো। আরবী ভাষা তখন কোরানে করিমের মত ওজনি গ্রন্থের ভার বহন করার মত সক্ষমতা অর্জন করেছিলো। এটা জাহেলিয়া যুগের কবি সাহিত্যিকদের অবদান।বারাক ওবামার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
চরমোনাই পীর সাহেব যুবক মানুষ। ইনস্টিটিউট হিসেবে তিনি পীরের গতিতে বসেছেন। এলমে শরিয়তে বা এলমে মারেফতে এখনও  তার পিতা ও পিতামহের মতো মহিরুহ হয়েছেন বলে দাবি করতে পারবেন না। সুতরাং তাকে অনুরোধ করবো, এমন কথা বলা থেকে তিনি যেন বিরত থাকেন, যে কথায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দারিদ্র্যতা কোনও গৌরবের বিষয় নয়। বেশি দিন দারিদ্র্য থাকলে ঈমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ  সম্পর্কে পয়গম্বর (সঃ ) -এর হুঁশিয়ারি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কিছু কিছু সফলতাও দেখা দিয়েছে।সে কারণে যখন দেখি পার্বত্য একটি জনগোষ্ঠী খাদ্য সংকটে ভুগছে, সেখানে খাদ্য পৌঁছাতে সরকারের দ্বিতীয় চিন্তা করতে হয় না। শেখ হাসিনার এই নেতৃত্বগুণের কারণে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তার মূল্যায়ন করছেন। আমাদের উচিত শান্তিপূর্ণভাবে এই নেতৃত্বকে উত্তরণের সুযোগ দেওয়া।এর ফলে বিশ্ব দরবারে আগামীর বাংলাদেশ হবে আরও উজ্জ্বল- তাতে আমার সন্দেহ নেই।
লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
লিটারে ১০ টাকা বাড়লো সয়াবিন তেলের দাম
লিটারে ১০ টাকা বাড়লো সয়াবিন তেলের দাম
কোপেনহেগেনের ঐতিহাসিক স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে আগুন
কোপেনহেগেনের ঐতিহাসিক স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে আগুন
ঈদের ছুটি শেষে ফিরছিলেন ঢাকায়, পথেই শেষ ৪ সদস্যের পরিবার
ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩ঈদের ছুটি শেষে ফিরছিলেন ঢাকায়, পথেই শেষ ৪ সদস্যের পরিবার
কাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
সিনেমা সমালোচনাকাজলরেখা: ঘোড়া, গরু, হাতিগুলো স্বাস্থ্যবান নয়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ