X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি নির্বাচনের ময়নাতদন্ত

তুষার আবদুল্লাহ
০৪ জুন ২০১৬, ১৩:১১আপডেট : ০৪ জুন ২০১৬, ১৩:১৯

তুষার আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, তফসিল ঘোষণারও আগে। সেই শঙ্কার প্রমাণ রেখেই নির্বাচন শেষ হতে যাচ্ছে। এবার নির্বাচন ঘিরে হতাহতের সংখ্যাও শতক ছাড়িয়ে গেল। চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে নির্বাচিত হবেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ভোটের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির পূর্বাভাস কোনও ঝুঁকি না নিয়েই করা গেছে। কারণ এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীও লড়াইয়ে নেমেছিলেন দলের পরিচয় এবং প্রতীকে। তখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বদলে নিজ দলেই প্রতিপক্ষের আর্বিভাব ঘটে। পৌরসভায় যেমন বিরোধী দলের প্রার্থীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা বিরল ছিল, একই বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও। মূলত সরকারি দলের প্রার্থীদেরই নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনে তৃণমূল থেকে যাদের ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই কেন্দ্রের কাছে এসে মনোনয়ন পাননি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সেই একই অভিজ্ঞতা। বরং এখানে এসে তৃণমূলের সুপারিশ আরও উপেক্ষিত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মনোনয়ন বাণিজ্যের। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীর বদলে বহিরাগতরা মনোনয়ন পেয়েছেন। তখন দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র পরিচয়ে। যিনি কেন্দ্রের মনোনয়ন পেয়েছেন টাকা বা লবিং এর মাধ্যমে, তিনি ধরেই নিয়েছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ দখলের মূল দাবিদার তিনি। তাই প্রশাসন ও দলীয়কর্মী তিনি ব্যবহার করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে আবার দলের সাধারণ সমর্থকদের দেখা গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার আভাস পাওয়া মানে বিদ্রোহী প্রার্থীর জয় নিশ্চিত হওয়া। সেই জয়কে রুখে দিতেই কেন্দ্র দখল, প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া বা ভোটের পর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে সংঘর্ষের শঙ্কা শুরুতে থাকলেও, প্রাণহানী শতক পেরোবে এতোটা ভাবা হয়নি। ভোট যে প্রক্রিয়ায় হয়েছে স্থানীয় সরকারের এমন নির্বাচন দেখার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ছিল না।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু থেকেই বলা যায় নির্বাচন কমিশন নিজেদের শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন তাদের কথা শুনছেন না। এমন অজুহাত যেমন ছিল, তেমনি প্রকাশ্যে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট শুরুর আগে ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারে ভরে যাওয়া এবং হতাহতের ঘটনার পরেও নির্বাচন কমিশন বলেছে- ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তৃতীয় দফা নির্বাচনে ভোটের মাঠে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাত ব্যবহার করতে হয়েছিল। ওই দফায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও কারচুপি দখল ও ব্যালট বাক্স ভরার ঘটনা ঘটেছে আগের মতোই। আসলে পুরো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশনের এক অসহায় রূপ দেখা গেল। তবে নির্বাচনের এই কুৎসিত রূপ দেওয়ার দায় কেবল নির্বাচন কমিশনের নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এর দায় নিতে হবে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এবং বিরোধীদল উভয় দিকেই মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। তবে বরাবরের মতোই দায় ক্ষমতাসীন দলের দিকেই বেশি যায়। তারা চাইলে তৃণমূলের সুপারিশকে শ্রদ্ধা জানাতে পারতো। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করার লোভ সংবরণ করা যেতো। তারা সেই লোভ সংবরণ করতে পারেনি। বিরোধী দল তৃণমূলকে সংগঠিত করে সরকারি দলকে মোকাবেলা করতে পারেনি। তাদের তৃণমূলের সংগঠনকে গোছাতে না পারার ব্যর্থতাও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রক্তাভ চেহারার জন্য দায়ী।

আরও পড়তে পারেন: গণমুখী বাজেট, গণবিরোধী বাজেট!

রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ইতিবাচক সুযোগটি হারিয়েছে। পৌর নির্বাচনে যেমন এর ফায়দা নিতে পারেনি, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তাই হয়েছে। অথচ এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে সংগঠিত করার সুযোগ ছিল। তৃণমূলে সরকারি ও বিরোধী দলের বিভক্তি ছিল বরাবরই। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরনির্বাচনের কাউন্সিলর পদে খানিকটা ব্যক্তি ও এলাকা ইমেজ কাজ করতো অবশ্য। কিন্তু ভোটে দুটি পক্ষ স্পষ্টই থাকতো। সেই বিবেচনায় দলীয় প্রতীক দিয়ে সেই আনুষ্ঠানিকতা বা সত্যায়িত সীলমোহর দেওয়া হয়। তৃণমূলের মানুষেরা বলছেন-

বলছেন- বিভেদ, সংঘর্ষ তাদের উঠোনে, পারিবারিক বৈঠকখানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামাজিক সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ হতে শুরু করেছে তৃণমূলে।

তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের। তাদের দলের অভ্যন্তরে বিভেদ তৈরি হয়েছে। এই বিভেদ কেবল তৃণমূলে আটকে নেই। কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যার ফলাফল কখনও জাতীয় নির্বাচন হলে সেখানে দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনেরতো সর্বস্বই গেছে। তারা ব্যবহৃত হতে হতে নিজস্বতা রক্ষা করতে পারেনি।

সবকিছুর পরও বলতে ইউনিয়ন পরিষদ সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমেরও তৃণ ভিত্তি। তাই চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে যারা নির্বাচিত হয়ে এলেন সবশেষে তাদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে যে যেই পরিচয়েই নির্বাচিত হয়ে এলেন, তাকে সরিয়ে রেখে তৈরি করতে হবে উন্নয়ন বান্ধব পরিবেশ। যদি না পারা যায়, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ নামের প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হবে না।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছক্কায় মুশফিকের ‘আউট’ নিয়ে যা বললেন রনি
ছক্কায় মুশফিকের ‘আউট’ নিয়ে যা বললেন রনি
ফাইনালে ১১ মিনিট লড়াই, জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ
ফাইনালে ১১ মিনিট লড়াই, জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ
বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের
বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের
ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রাথমিকের প্রশ্নের সমাধান!
ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রাথমিকের প্রশ্নের সমাধান!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ