X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুন সমস্যা, অসংবেদনশীলতা আরও বড় সমস্যা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৮ জুন ২০১৬, ১৪:০৪আপডেট : ০৮ জুন ২০১৬, ১৪:১৭

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনলে মনে হয় আমরা আমেরিকায় বাস করি। কোনও ঘটনা ঘটলেই আশ্চর্য হয়ে আমরা দেখি সাংবাদিকদের তিনি বয়ান করে বলছেন- আমেরিকায় এর চেয়ে কত বেশি খুন হয় বা টার্গেট কিলিং হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের চূড়ায় বসে এমন অসংবেদনশীল কথাবার্তা সত্যিই ভাবা যায় না। কিন্তু তিনি বলে চলেছেন অবিরাম।
একথা সত্য যে দুনিয়ার কোনও প্রশাসনের পক্ষেই হয়তো হত্যা জিনিসটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। সে বাংলাদেশ হোক বা আমেরিকা বা ইউরোপ হোক। কিন্তু প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষে যেটা সম্ভব, তা হলো খুনের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে একটা দ্বিধাহীন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে খুনিরা বোঝে, যে মাটিতে দাঁড়িয়ে তারা এ কাজ করছে, সে মাটির সরকার দ্বিধাহীন নয়, দুর্বল নয়।
যারা তর্ক করেন, বিশেষ করে দলকানা লোকজন, তারা হয়তো বলবেন- কড়া পদক্ষেপ নিলেই কি ম্যাজিকের মতো অপরাধটা উবে যাবে? না যাবে না। কিন্তু রাষ্ট্রকে কি ক্রমেই বিপজ্জনক হতে দেবো আমরা? ধর্মের নামে এসব খুন বড় সামাজিক বিকার। চট করে প্রতিকার সম্ভব নয়। কিন্তু খুনিরা যদি ধরা পড়ে, কড়া শাস্তি পায় তাহলে নাগরিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা উন্নত হয়। মানুষ বাঁচার আশায় বুক বাঁধতে পারে। বুক বাঁধার মতো আশা যদি না-ই পাওয়া গেল তাহলে কিসের দেশ, কিসের আইন, কিসের শৃঙ্খলা? উপর্যুপরি অন্যায় ঘটে গেলেও যদি প্রশাসন নিরব থাকে, আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাবর কাটেন কিংবা অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার ফন্দিফিকির চলতে থাকে, তাহলে বলতেই হবে আমাদের দেশ অপেক্ষায় রয়েছে ত্রাসের প্রবল বিস্ফোরণ দেখার। ক্রমাগত উদাসীনতায় বিষফোঁড়ার মতো উদিত হয়েছে এক নতুন দুর্ভাগ্য- ভিন্নমত মানেই খুন, সৎ চিন্তা মানেই খুন, মানব কল্যাণে নিবেদিত থাকা মানেই খুন।
একটার পর একটা ঘটনায় মানুষ বিপর্যস্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোথায় পান যে মানুষ শান্তিতে ঘুমাচ্ছে? একদিকে নিরাপত্তার চরম অভাব, অন্যদিকে সরকারের উচ্চ মহলের এমন অসংবেদনশীলতা। খুনের চেয়েও ভয়ঙ্কর এই দ্বিতীয় সমস্যা। এর ফল বিষম। হত্যাকারীরা আস্কারা পায়, যারা এসব দমনে কাজ করবেন, তারা সংশয়ে নিপতিত হন। খুনিরা যে নেশায় মেতে উঠেছে তা দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সমস্যা। কিন্তু অসংবেদনশীলতা মনে হচ্ছে সরকারের চলতি সমস্যা। মানুষের জেগে ওঠার সময় এখন দুটির বিরুদ্ধেই।

বাংলাদেশে সবকিছুর জন্য যেমন প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, মনে হচ্ছে এখানেও তাই। প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকেই। কোনও বিকল্প নেই। এবং প্রধানমন্ত্রী যখন শেখ হাসিনা তখন প্রত্যাশা আরও বেশি। তার সামনে দুটো কাজ। প্রথম কাজ, দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা অর্থাৎ ধর্মীয় এই সহিষ্ণুতার কারণে জন নিরাপত্তার ব্যবস্থা। দ্বিতীয় কাজ নিজের দলের ভেতরে যে অসহিষ্ণু শ্রেণি বা গোষ্ঠী আছে তাদের চিহ্নিত করা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো অতি ও অসহনীয় কথা যারা বলেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা। এ কাজটা তিনি নিজে ছাড়া কেউ পারবে না। দ্বিতীয় কাজটাই আগে করা দরকার, কেননা সেটা তুলনায় সহজ।

দ্বিতীয় সমস্যা বড় ক্ষতি করছে, কারণ যারা অপরাধীর শাস্তি চায়, তারা তার সরকারের ওপর আস্থা হারাচ্ছে এ ধরণের বক্তব্যের কারণে। আর যারা অপরাধকারী, তারা তার সরকারকে দুর্বল মনে করছে। খুনিরা ভাবছে তারা পেয়েছে এমন কিছু মানুষ যারা ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে কথায় মনোযোগী। বলা যায় না হয়তো খুনিরা স্বস্তি পাচ্ছে যে এমন প্রশাসন আর মন্ত্রী থাকলে কিসের চিন্তা?

আরও পড়তে পারেন: কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরীই আইএস-বাংলাদেশের আবু ইব্রাহিম!

সত্যি বলতে গেলে প্রথম কাজটা ভালোভাবে করতে হলে প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিতীয় কাজটা আগে সেরে নিতে হবে। প্রশাসনের সর্বত্র কড়া বার্তা যেতে হবে যে অপরাধীর কোনও ছাড় নেই। খুনের ধরন, কারা করছে এসব নিয়ে আর রাখঢাক করে লাভ হবে না। দেশি বিদেশি রাজনীতি হচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে। তাই রাজনীতির খাতিরেই বুঝতে হবে যে সময় এখন আর ধামাচাপা দেওয়ার নয়। কারা করছে, কেন করছে ধরে ধরে জাতিকে পরিষ্কার করতে হবে।

কে সমকামী ছিল, তা কতটা সমাজের সঙ্গে মানানসই, কিংবা কে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করছিল, এসব অর্থহীন তর্ক ছেড়ে প্রতিকারটাই ভাবার সময় এখন। প্রতিটি থানাকে সতর্ক রাখা, সাড়াশি অভিযানে বিশেষ বাহিনীকে নামানোর এখনই সময়। অনুভূতিওয়ালাদের সঙ্গে সমস্ত আপোষের রাস্তা বন্ধ করা, অপরাধীর  রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আর কোনও বিকল্প নেই। বেশি অপরাধ-প্রবণ এলাকাগুলোতে শুরু হোক চিরুনি মহড়া। সরকার ছাড়া কে করবে এসব কাজ?

প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নামানোর পাশাপাশি কাজ আরও আছে। ভাবতে হবে এটি একটি বড় সামাজিক সমস্যা। তাই সরকার যেমন নামবে, নামতে হবে শাসক দলকেও। যেসব সামাজিক শক্তি নেমেছে প্রতিকারের পথে তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারে সরকারি দল। সব প্রগতিপন্থি, মুক্তিযুদ্ধপন্থিদের যুগলবন্ধনই পারে সমাজটাকে টেনে তুলতে।

আর মানুষকে রোদে পুড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজিয়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড় করিয়ে যে তাদের মোবাইল সিম বায়োমেট্রিক করানো হলো, তার ফলাফল দেখতে চায় এবার মানুষ। তারানা হালিম খুব বড় গলায় বলেছিলেন- জঙ্গিদের ধরতে মানুষের এই নতুন মেট্রিক পাস বড় ভূমিকা রাখবে। পুলিশ কর্তার স্ত্রী আর ঝিনাইদহের মঠের পুরোহিত খুন হয়েছেন সব সিম বায়োমেট্রিক নিবন্ধিত হওয়ার পর। পুলিশ কর্তার স্ত্রী মিতুর মোবাইলে আসা একটি এসএমএস নিয়ে কথা হচ্ছে। মানুষ বলতে শুরু করেছে- ‘কে এসএমএস দিয়েছিলো এটা বের করতে না পারলে বায়োমেট্রিক পাস করে কার কী লাভ হলো?’ বায়োমেট্রিক নিশ্চয় করা হয়নি খালেদা জিয়ার ফোন আছে কী নেই সেই বিতর্ক করার জন্য।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টেলিভিশন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ