X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যা নিজের ঘরেও

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৫ জুন ২০১৬, ১২:০৩আপডেট : ১৫ জুন ২০১৬, ১২:১৮

ইশতিয়াক রেজামার্কিন মুল্লুকের আরল্যান্ডো থেকে ফ্রান্স, গে ক্লাবে গণহত্যা থেকে ফরাসি পুলিশ দম্পতি খুন। ওমর মতিন নিজে মরার আগে মেরেছে আরও ৫০ জনকে আর লারসি আবাল্লা পুলিশ কর্মকর্তা আর তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে যখন ফ্রান্সে চলছে ফুটবল উৎসব ইউরো।
ফ্লোরিডা, ফ্রান্স আর বাংলাদেশ, কিংবা সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন। বিশ্ব আজ দেখছে রাজনৈতিক আর গোষ্ঠীগত সন্ত্রাসের ভয়ানক চেহারা। কোনও দেশ বা জনপদ নয়, সভ্যতাই যেন আক্রান্ত। কথা বলার অধিকার, মুক্তির অধিকার হরণের তীব্র লড়াই।
তাহলে বলতে হচ্ছে সারা বিশ্বই আজ সন্ত্রাসী থাবায়। বাংলাদেশ তার থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। কিন্তু এখানে এই বলে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই যে এই সমস্যা কেবল আমাদের নয়। চিন্তা আরও বেশি, কারণ আমাদের দেশ মাত্র উন্নয়নের বড় রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছে, আমাদের অনেকদূর যেতে হবে, আমাদের এত সামর্থ্য নেই বেশি বেশি অর্থ উন্নয়নে ব্যয় না করে সন্ত্রাস দমনে খরচ করবো।
পুরো পৃথিবী নিয়ে ভাবতে হয়, কিন্তু বেশি ভাবতে হয় নিজের দেশকে নিয়ে। পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকেছে পুলিশ তখন সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। কেন জানান দিয়ে হলো এই প্রশ্ন যখন উঠছে তখন এমন অভিযোগও উঠছে যে বিরোধী দলের কর্মীদের হেনস্তা করতে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আবার অভিযোগ উঠছে যে, ঈদের আগে বড় বাণিজ্য করছে পুলিশ এই গ্রফতারের নামে।
যারা ব্লগার, লেখক, অধ্যাপক বা পুরোহিত থেকে সাধারণ মানুষকে খুন করে দেশে বা বিদেশে তাদের চাওয়ায় মিল রয়েছে। তারা চায় হানাহানিতে মজে থাকুক ছোট বড় সব দেশ। সন্ত্রাসীদের সত্যিকার পরিচয় জানা যায় না। কারা কিভাবে এদের উদ্বুদ্ধ করছে তাও অজানা।
রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা, কিংবা গোয়েন্দা সংস্থারা পড়েছে বিপদে। তাই আইএস দাবি করলেও শেখ হাসিনাকে যেমন বলতে হয় বাংলাদেশে আইএস নেই, তেমনি বারাক ওবামাকে বলতে হয়, আইএস’র সঙ্গে ওমর মতিনের সরাসরি যোগাযোগ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। বলছেন- অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কাউকে দায়ী করা যাচ্ছে না।
আইএস আছে কী নেই বা আইএস’র সঙ্গে যোগাযোগ কতটা সেই প্রশ্নের চেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে আমাদের সামাজিক স্থিতি। দীর্ঘ দিনের সম্প্রীতি, সহনশীলতা আজ বড় ঝুঁকির মধ্যে। জনসংখ্যার একটি অংশ এদেশে থাকবে কী থাকবে না এমন আস্থাহীনতায় পড়েছে।
এবছর ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সিনেটের এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জেমস ক্ল্যাপার বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন এখানে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ঝুঁকি বাড়ছে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছে এবং একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচারের বিষয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জেমস ক্ল্যাপারের এই বক্তব্য আমাদের বুঝিয়ে দেয় বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো অনেক বেশি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে ঘটছে যতটা না বৈশ্বিক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তবে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিস্তারের সুযোগ নিচ্ছে এদেশিয় সন্ত্রাসীরা, বিশেষ করে যারা অনেক আগে থেকেই সেই ধরনের রাজনৈতিক নেটওয়ার্কে বিচরণ করে আসছে।
বাংলাদেশে আইএস মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন আছে। এটা নিয়ে রাখঢাকের আর কোনও সুযোগ নেই, অস্বীকার করার উপায় নেই। নানা জঙ্গি গ্রুপ নানা নামে তৎপর বাংলাদেশে। তাই সরকারের উচিত হবে প্রকৃত তথ্য গোপন না করা।
জঙ্গিদের কাছে তাদের কাজটা কোনও পেশা নয়। আখেরাতে জান্নাতে যাওয়ার অঙ্গিকার। তারা যেসব নেতার নির্দেশে কাজ সম্পাদন করে সেখানে কোনও দলে বা গ্রুপের মতো নাম, ঠিকানা রাখে না। দীর্ঘ সময় ধরে জঙ্গিরা তাদের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে তাদের কাজের মাধ্যমে। বড় বড় বোমা ও গ্রেনেড হামলায় সফলতা পেয়ে আজ তারা নেমেছে টার্গেট কিংলিং-এ।
একসময় বলা হতো, কওমি মাদ্রাসাগুলোই জঙ্গিবাদের কারখানা। সেই বাস্তবতা মুছে যায়নি। তাই বলে জঙ্গিবাদের প্রচার, প্রসারের উদ্যোগ শুধু মাদ্রাসাতে আটকে নেই। যদি তাই হতো তাহলে প্রশ্ন ওঠে হিযবুত তাহরিরের জন্ম কোথায়? কেন রাজীব হায়দারের খুনের কারণে ধরা পড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী?
‘বাংলাদেশ: চিপ টি-শার্ট অ্যান্ড ফান্ডামেন্টালিজম', এমন শিরোনামে যখন বাইরের পত্র পত্রিকায় রচনা বের হয় তখন বুঝতে হয় বিষয়টি খুব বেশি সিরিয়াস। কেন একের পর এক জঙ্গি হানা, কেন বেছে বেছে সংস্কৃতিমনা, কিংবা ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা খুন হয় সেই উত্তর খোঁজা বেশি প্রয়োজন সমন্বয়হীন বড় অভিযানের চেয়ে। গ্রেফতার বাণিজ্যের সামান্য অভিযোগকেও দেখতে হবে ষড়যন্ত্র হিসেবেই।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান চায় মানুষ। কোনও ছাড় চায় না। কিন্তু তার আরও কথা আছে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে, হয়তো বলতে পারে না যে, শুধু মাঠে ময়দানে পুলিশের তৎপরতা নয়, কিংবা অন্য দলের সঙ্গে যুদ্ধ করলে হবে না, শাসক দল আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে সমস্যা আছে নিজের ঘরেও। তাই তার দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে যখন সংখ্যালঘুদের জমি দখল বা নারী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তাকে এড়িয়ে যাওয়া বা হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। শুধু দল থেকে বহিষ্কারের নাটক আসলে কোনও সমাধান দেয় না, সংখ্যালঘুদের আস্থাও দেয় না।
উদার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অনেকের মনেই সনাতনী ক্ষোভ কাজ করে। সাম্প্রতিককালে তা আরও বাড়ছে। বাংলাদেশের সমাজে ধর্মের সহাবস্থান যেমন অনেক দিনের, তেমনি বিরোধও বহু দিনের। একটি গোষ্ঠী ঐতিহাসিকভাবেই উদারতা বিরোধী। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্তে তারা আরও আস্কারা পাচ্ছে। কিন্তু বেশি পায় যখন শাসক দল দুর্বল থাকে, শাসক দলের নেতা-কর্মীরা অর্থ লালসায় ডুবে গিয়ে অবৈধ কাজ বাড়িয়ে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল ও সংগঠনের বৃহত্তর ঐক্যের যেমন খুব বেশি প্রয়োজন, তেমনি দরকার মানুষের জাগরণ। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে অগ্রসর হতে হবে। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। মানুষকে সঙ্গে রাখতে না পারলে শুধু পুলিশী ব্যবস্থা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না, নৈরাজ্যকে আরও উস্কে দেওয়া হবে সেই ভাবনা ভাবতে হবে। আশঙ্কা অনেক, কারণ দল এখন সাংগঠনিক কাজের চেয়ে সরকারে আর লোভ লালসায় বিলীন হয়ে আছে।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টেলিভিশন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
অস্ত্র লুটের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাসহ আরও ৭ জন কারাগারে
অস্ত্র লুটের ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতাসহ আরও ৭ জন কারাগারে
তিন গোলে জেতার আশা করেননি পুলিশের রোমানিয়ান কোচ
তিন গোলে জেতার আশা করেননি পুলিশের রোমানিয়ান কোচ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ