X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমালোচনা বন্ধ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন

নাদীম কাদির
১৯ জুন ২০১৬, ১০:৫৯আপডেট : ১৯ জুন ২০১৬, ১১:০৭

নাদীম কাদির ভয়ঙ্কর এক হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করলো বিশ্ববাসী। যুক্তরাষ্ট্রে সমকামীদের একটি ক্লাবে এক ধর্মান্ধ উন্মাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৫০ জন। এটা কোনও যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ঘটেনি।
এটা ঘটেছে সবচেয়ে দক্ষ ও আধুনিক গোয়েন্দা সক্ষমতার অধিকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে।
অরল্যান্ডোর সমকামী ক্লাবে হত্যাযজ্ঞ চালান ২৯ বছরের আফগান-আমেরিকান ওমর মতিন। খবরে বলা হয়েছে, তার জীবনে নানা সমস্যা ছিল এবং তার মানসিক অবস্থাও ছিল বিভ্রান্তিকর।
যাই হোক, গুলিবর্ষণের আগে তিনি পুলিশকে কল করে বলেন, তিনি ইসলামিক স্টেট (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদি’র সমর্থক।
এখন বিতর্ক দেখা দিয়েছে হামলাকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে। এমনকি তিনি নিজে সমকামী ছিলেন কিনা এমন বিতর্কও উঠেছে।
এর আগেও ক্লাবটিতে গিয়েছিলেন ওমর মতিন। অন্যদের সঙ্গে তার মেলামেশাও হয়েছে। সন্তানসহ তিনি স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছেন। তিনি ছিলেন এমন একটা চরিত্র যার সম্বন্ধে আগে থেকে বলা যায় না।
বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের এ হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করে আইএস বলেছে, ওমর মতিন তাদের লোক ছিল।
ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এর পরিচালক জেমস কোমি এখনও বলছেন, ওমর মতিন বিভিন্ন সশস্ত্র ইসলামপন্থী আন্দোলন এবং লোকজনের পক্ষে মন্তব্য করেছিলেন। এটা তার ‘উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে’। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে আখ্যায়িত করেছেন, ‘স্বদেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গিবাদী’ হিসেবে।
জেমস কোমি ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এমন কোনও ইঙ্গিত পাইনি যে এই চক্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে নির্দেশনা ছিল। আমরা এমন কোনও ইঙ্গিত পাইনি যে, তিনি এ ধরনের কোনও নেটওয়ার্কের অংশ ছিলেন। আমরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে, ইন্টারনেটের কিছু ক্ষেত্রের মাধ্যমে তাকে মৌলবাদী করে তোলা হয়েছে।’
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর অবস্থান কী? অবস্থানটা পরিষ্কার। এখানে কোনও আইএস নেই। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে স্বদেশে বেড়ে ওঠা কোনও চরমপন্থী।
এই স্বদেশে বেড়ে ওঠা চরমপন্থী কারা? পুলিশের তদন্তে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বা জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। এই জেএমবি’র জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্র জামায়াতে ইসলামীর আমলে।

ঢাকার পক্ষ থেকে যখন বলা হয়েছে, এই সন্ত্রাসের পেছনে রয়েছে বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াত তখন এটাকে রাজনৈতিক বিবৃতি হিসেবে ধুয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেন তারা এটা ভাবছে না যে; কারা এর সুবিধাভোগী। জেএমবি’র মতো স্বদেশে বেড়ে ওঠা চরমপন্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল? ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের খুনের উদ্দেশে চালানো গ্রেনেড হামলায় কারা স্পন্সর করেছিল?

যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে কিন্তু দৃঢ়ভাবে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অস্তিত্ব আছে। বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতাও জারি করেছে দেশটি। এমনকি ইউএসএআইডি’র সাবেক কর্মকর্তা এবং সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নানের খুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে এর নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। নিহত জুলহাজের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা; যেটা ছিল বেশ প্রশংসনীয়।

তাদের এটার দিকে তাকানো উচিত যে, শেখ হাসিনা একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। একমাত্র নেত্রী হিসেবে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি নিয়েছেন। পুরো দুনিয়াকে এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তিনিই বাংলাদেশের ভরসাস্থল; যিনি নির্বাচনি ওয়াদা অনুযায়ী তার অঙ্গীকারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আজকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের এই বেদনাজনক সময়ে আমরা কি একটা ভ্রমণ সতর্কতা দিয়েছি? অথবা দেশটিতে ইসলামিক স্টেটের উপস্থিতি স্বীকারের জন্য জোরাজুরি করেছি! এটা তাদের বিচার বিবেচনার বিষয়। বাংলাদেশের ব্যাপারেও তার নিজের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার তারই বিচার বিবেচনার বিষয়।

অর‍ল্যান্ডো হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। এর মানে হচ্ছে, আমি যেমনটা বলেছি বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিও একইরকম কথা বলছেন।

অর‍ল্যান্ডো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিন্দা জানিয়েছেন। হতাহতের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন।

প্যারিস বা লন্ডন কি ইসলামি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরাপদ? প্যারিসেও হামলা হয়েছে এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এটা নিয়ে আমি লিখেছি। লন্ডনে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।

সুপার পাওয়ারগুলোর যেটা করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ‘বসিং’ বন্ধ করা। তাদের উচিত এসব দেশকে গোয়েন্দা কিংবা অন্য কোনও যথাযথ সহায়তা প্রদান করা। অন্য দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করা বা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে তার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার পরিবর্তে বিশ্বকে অবশ্যই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।

আরও পড়তে পারেন: অরল্যান্ডো হামলায় নিহতদের শেষকৃত্যে সমকামবিরোধীদের বাধা

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ