X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিট কি বর্ণবাদের জন্যে?

নাদীম কাদির
০১ জুলাই ২০১৬, ১৪:৪০আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৬, ১৪:৪৭

Nadeem Qadirইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার গণভোটের সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ব্রিটেনে চলছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নেতৃত্বহীন রাষ্ট্রে বর্ণবাদী হামলা বেড়ে যায়।
এই কনজারভেটিভ পার্টির কোনও ধারণা নেই ক্যামেরনের পর তাদের নেতৃত্ব কে দেবে। জেরেমি করবিন নির্লজ্জভাবে সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ও লেবার পার্টির নেতৃত্বের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও বেশিরভাগ পার্টি সদস্যই চান তার অপসারণ।
বর্ণবাদের প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে ব্রেক্সিট লড়াইয়ের আরেকটি দিক উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি।
ব্রিটেন যদি ছোট ইংল্যান্ডে পরিণত হতে চায় সেক্ষেত্রে স্কটল্যান্ড ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থাকছে কিনা, ব্রেক্সিট এই প্রশ্নকে সামনে এনেছে। গণতন্ত্রের নামে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে এবং ভেঙে পড়ছে।
ইইউ নেতৃত্ব দৃঢ়- ব্রিটেন বের হয়ে যাওয়ায় ও আমাদের বৃহত্তর ইইউ এর জন্য পরিকল্পনা করতে দাও। কিন্তু অন্যরাও যদি ব্রিটেনকে অনুসরণ করে?- এই প্রশ্ন থেকেই যায়। এই নাটক ব্রিটেনে অনেক বড় ইস্যু তবে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করা হচ্ছে।
কিছু গণমাধ্যম তেমন গুরুত্বের সঙ্গে না হলেও হামলা সম্পর্কে প্রতিবেদন করছে। এই সব হামলার লক্ষ্যবস্তু কেবল কৃষ্ণাঙ্গরা নয়, বরং যাদের শরীরে নীল রক্ত নেই, যারা ব্রিটিশ নয়।
আমি বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার পথে এফএম রেডিও শুনছিলাম। এক বয়স্ক নারীর কথা শুনে আমি আতঙ্কিত বোধ করেছি। ওই জার্মান নারী যিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্রিটেনে বাস করছেন ও এক ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করেছেন, তাকে বলা হচ্ছে, ‘যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফিরে যাও, আমাদের মুক্তি দাও।’ তিনি কাঁদছেন ও বলছেন, তিনি এখন কোথায় যাবেন, এখন তো তার দেশ এটাই।
এক টিভি উপস্থাপক বলছেন তিনি লন্ডনে বাজারে যাওয়ার পথে এ ধরনের বর্ণবাদী শ্লোগান শুনেছেন।
দ্য গার্ডিয়ানকে এক নারী বলছেন, গণভোটের কারণে ‘বিদ্বেষবাষ্প’ সৃষ্টি হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘কিছু নির্বোধ লোকের কর্মকাণ্ড আমাকে বিরক্ত করছে, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে পরিস্থিতি আরও অনেক খারাপ হবে- এই চিন্তাতেই অস্থির লাগছে।’

পুলিশের পৃষ্ঠপোষকতায় বিদ্বেষমূলক অপরাধ প্রতিবেদনের ওয়েবসাইট ট্রু ভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার থেকে রবিবারের মধ্যে সহিংসতার অভিযোগ ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি কোনও নির্দিষ্ট জাতীয় পরিসংখ্যান নয়। অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি থানায় ও কমিউনিটিতে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। কিন্তু দাতব্য সংস্থা স্টপ হেট ইউকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ীও অভিযোগ বেড়েছে। ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলাকারী সংগঠন টেল মামার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগে যেখানে মাসে ৪০-৪৫ টি অভিযোগ দায়ের হতো, সেখানে ৪৮-৭২ ঘণ্টায় অভিযোগ এসেছে ৩৩টি।  

বর্ণবাদের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিদেশিভীতিও। একটি হালাল কসাইখানায় বোমা হামলা লন্ডনের একটি পুলিশ আবাসে গ্রাফিতি এবং ইমিগ্র্যান্টদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে লেখা ব্যানার থেকে তা স্পষ্ট।

বিশ্বের এ প্রসঙ্গে নিরব থাকা উচিত নয়, প্রতিবাদ জানানো উচিত। ৬ লাখ ব্রিটিশ বাংলাদেশি কি বাংলাদেশে ফিরে যাবেন? এটাই কি ব্রেক্সিটের গোপন লক্ষ্য?

বাংলাদেশি গোষ্ঠীও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত এবং আশা করছেন বিশ্ববাসী সময় থাকতে এ বিষয়ে সরব হবে। শুধু সংসদের সংখ্যালঘুরাই নয়, ব্রিটিশ অহমিকা বজায় রাখতে হলে মুণ্ডুহীন ব্রিটিশ সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করতে হবে।

 লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।

আরও পড়তে পারেন: দেশের বাইরে দেশের মাটি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ