X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে বাংলাওয়াচ!

ফজলুল বারী
১০ জুলাই ২০১৬, ২২:০৫আপডেট : ১০ জুলাই ২০১৬, ২২:১১

  ফজলুল বারী নয় বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া আছি। এদেশের চারটি নির্বাচন দেখার সুযোগ হয়েছে। এদেশে  একশ পঞ্চাশজন এমপি এবং ছিয়াত্তর জন সিনেটর নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে তিন বছর পরপর নির্বাচন হয়। একটি সরকার জনমত জরিপ দেখে জনপ্রিয় থাকতে থাকতে আগাম নির্বাচনও দেয়। সর্বশেষ গত দুই জুলাইয়ের নির্বাচনে ম্যালকম টার্নবুলের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে সরকার গঠনের ছিয়াত্তরটি আসন সংগ্রহের অবস্থায় পৌঁছেছে। এজন্য আগেভাগে নিতে হয়েছে তিনজন স্বতন্ত্র সদস্যের সমর্থন। যদিও শনিবার এ লেখা পর্যন্ত ভোটগণনা শেষ হয়নি! এক কোটি ষাট লাখের মতো ভোটার এদেশে। সাকুল্যে এই ভোটারদের এই ভোট গণনার কাজ এক সপ্তাহেও শেষ হয়নি! এর কারণ রেকর্ড সংখ্যক পোস্টাল ব্যালটের ভোট!
ভোট না দিলে এদেশে জরিমানা হয়। সে জন্য ঝুঁকি এড়াতে অনেকে আগেভাগে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়ে রাখেন। এই পোস্টাল ব্যালটের ভোট গণনায় যে সময় লাগে, সে জন্যে আগামীতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং সিস্টেম চালুর প্রস্তাব করেছেন প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের অনলাইন জরিপে অংশ নিতে গিয়ে দেখলাম, নব্বই ভাগ লোক এই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং সিস্টেমের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। এদেশের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে এসব জরিপের ফল বিশেষ প্রভাব ফেলে।
অনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই পরাজয় মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী টার্নবুলকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা বিল শর্টন। শতবর্ষ প্রাচীন অস্ট্রেলিয়ান গণতন্ত্রের এটিই সৌন্দর্য। মেলবোর্নে এক সংবাদ সম্মেলনে শর্টন বলেছেন, আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও আমরা নিশ্চিত হয়েছি টার্নবুল সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছেন। আমি তাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছি, জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করব। এর পরপর টার্নবুল সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, একটু আগে বিল শর্টন আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাকে কৃতজ্ঞতা। আমার পরিবারকেও ধন্যবাদ। এখন টার্নবুলের পরবর্তী কার্যক্রম হবে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পর তিনি গভর্নর জেনারেলের কাছে গিয়ে বলবেন সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তার আছে। গভর্নর জেনারেল তা নিশ্চিত হয়ে রানির পক্ষে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ করাবেন। এরপর শপথ করাবেন তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের।

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ অস্ট্রেলিয়ায়ও রানি। গভর্নর জেনারেল এখানে তার প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাদেশে যেমন রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়ান, রাষ্ট্রপতির নামে সব আইন পাস হয়, এদেশের সবকিছু হয় রানির নামে।

এবার এই নির্বাচন এবং অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচনের পর্যবেক্ষণগুলো বাংলাদেশি একজন সাংবাদিকের দৃষ্টিতে আলোকপাত করা যাক। ভোট নিয়ে অনেক দ্বন্দ্ব বাংলাদেশে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কিনা, নির্বাচনি আচরণবিধি মানা হচ্ছে কিনা,  এমন নানা ইস্যুতে বাংলাদেশ বরাবর উত্তপ্ত হয়! ভঙ্গুর,  পারিবারিক কর্তৃত্বের স্বেচ্ছাচারী গণতন্ত্রসহ নানা অবিশ্বাস থেকে সমস্যার সৃষ্টি। দীর্ঘদিনের বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো অস্ট্রেলিয়া পেরিয়ে এসেছে অনেক আগে। যেমন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার এদেশে নির্বাচনকালীন তত্তাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ করে। নির্বাচন ঘোষণার বছরে সরকার যে বাজেট ঘোষণা করে সেটিই কাজ করে ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনি মেনিফেস্টোর মতো। কিন্তু ভোটের প্রচারণায় গিয়ে ক্ষমতাসীন দল যদি দেখে তার নানা অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা ভোটাররা পছন্দ করছে না, তখন ওই অবস্থাতেই তারা সেগুলোর পরিবর্তন-সংযোজন করে নতুন প্রস্তাবনার প্রতিশ্রুতি-ঘোষণা দেয়। বিরোধীদল তখন সেটিকে নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে দেখে না। ক্ষমতায় গেলে তারা কী, করবে সেটির পাল্টা প্রস্তাবনা হাজির করে ভোটারদের সামনে।

এদেশ শতভাগ শিক্ষিত মানুষের দেশ। তাই কিছু চটকদার কথাবার্তায় এই করব, সেই করব, শুধু ঘোষণা দিলেই চলে না। ভোটারদের বিশ্বস্তভাবে ব্যাখ্যা করে বলতে হয় প্রস্তাবনার টাকাগুলো কোন খাত থেকে আসবে।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় রাজস্ব আয়ের বড় উৎস হচ্ছে মাইনিং তথা খনিশিল্প। সোনা, ইউরেনিয়াম থেকে শুরু করে মাটির নিচে যত রকমের সম্পদ থাকা সম্ভব সবই এদেশের আছে। আয়ের অন্যতম প্রধান খাত কৃষিখাত। ধান-গম, আঙুর-আপেলসহ নানান ফল, অস্ট্রেলিয়ান গরু-ভেড়া-ছাগল-দুধ-ঘোড়া এসব খাততো আছেই। পিয়াঁজ-আলুর বস্তাতেও তারা লিখে রাখে প্রাউডলি অস্ট্রেলিয়ান প্রডাক্ট! জিএসটিসহ নানাখাতের কর-জরিমানাও এদেশের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। বিদেশি ছাত্রদের তারা যে পড়াশুনার জন্য ওয়েলকাম করে, এটিও  রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস।

এবারের নির্বাচনে সরকারি জোটের প্রচারণার মূল ফোকাস ছিল আর কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির। ব্যবসায়ীদের আরও সুযোগ সুবিধা বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা খাত সোশ্যাল সিক্যুরিটি তথা সেন্টার লিংক ব্যবস্থার সংস্কারের প্রস্তাব ছিল সরকারের। উল্লেখ্য, কল্যাণ রাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকদের স্কুল পর্যন্ত পড়াশুনা, চিকিৎসা সেবার বেশিরভাগ ফ্রি। নাগরিকরা তাদের বাচ্চাদের সরকারি স্কুলে ফ্রি পড়াতে পারেন। মেডিকেয়ার কার্ড দেখিয়ে যেকোনও নাগরিক ফ্রি দেখাতে পারেন পারিবারিক ডাক্তার। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে বাচ্চাদের জন্য সরকার থেকে বিশেষভাতা দেওয়া হয়। বেকারদের দেওয়া হয় বেকারভাতা। বয়স্ক সিনিয়র নাগরিকদের, অসুস্থ শারীরিকভাবে কাজে অক্ষমদের পেনশনভাতা দেওয়া হয়। সরকারিদল সোশ্যাল সিক্যুরিটির এসব সুযোগ সুবিধা কমিয়ে আনার পক্ষে। করদাতাদের বড় একটি অংশ তাদের করের টাকায় এসব সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখার পক্ষে না। আর বিরোধী দলের মূল ফোকাস ছিল শিক্ষা ক্ষেত্রের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো এবং মেডিকেয়ার সুবিধা অক্ষুণ্ন রাখা। পারিবারিক ডাক্তারের কাছে গেলে রোগী প্রতি পাঁচ ডলার ফি রাখার একটি একটি চিন্তা বেশ কিছুদিন ধরে এখানকার সরকারি মহলে চলে আসছে। এখন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে রক্তপরীক্ষাসহ নানাকিছু যেমন ফ্রি করানো যায়, এসব ক্ষেত্রেও নানান সংস্কারের চিন্তা আছে।

নাগরিকরা যেসব ফ্রি সুবিধা পায়, সরকারের হিসাবে এসবও ফ্রি না। বাচ্চাদের যে পড়ানো হয়, এসব টাকার শোধ দিতে হয় শিক্ষা বাজেট থেকে। স্কুলের বাচ্চারা যে যানবাহনে ফ্রি স্কুলে যাতায়াত করে, পরিবহনখাত এসবের পেমেন্ট দেয় সরকারকে। ডাক্তার দেখাতে গেলেই ডাক্তার মেডিকেয়ার কার্ডের বিপরীতে সরকার থেকে পয়ত্রিশ ডলার নিয়ে নিয়ে নেয়, সরকারকে এটি দিতে হয় স্বাস্থ্য বাজেট থেকে। নিম্ন আয়ের পরিবার, বেকারসহ যাদের ভাতা দেওয়া হয় এর সবকিছু সরকারকে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বাজেট থেকে পরিশোধ করতে হয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকার বড় অংশ এই সোশ্যাল বেনিফিটখাতে ব্যয় হয়। এক সময় সমাজতন্ত্রের জোয়ার ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়ায় মতো দেশগুলোতে এসব ওয়েলফেয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এখন আর সমাজতন্ত্রের হুমকি প্রভাব নেই। কিন্তু ভোটারের হুমকিতে পড়ার ভয়ে তারা এখনও এসব ব্যবস্থা চালু রাখতে বাধ্য হচ্ছে।

গত নয় বছর ধরে দেখছি অস্ট্রেলিয়ায় ভোটাররা একটি সরকারকে কমপক্ষে দুই টার্ম ক্ষমতায় রাখতে চায়। কিন্তু শেষের টার্মের বৈতরণী তাদের পেরুতে হয় বেশ কষ্টে! জন হাওয়ার্ড কে সরিয়ে কেবিন রাডের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসে। এরমাঝে একটি পার্লামেনটারি ক্যু ঘটিয়ে রাডকে সরিয়ে ক্ষমতা নিয়ে নেন তার ডেপুটি জুলিয়া গিলার্ড! তিনি হন অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। এরপরের নির্বাচনে জুলিয়া গিলার্ড অনেক কষ্টে বৈতরণী পার হন। ভদ্রতা করে কেবিন রাডকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও করেছিলেন। সেই কেবিন রাড আবার আরেক পার্লামেন্টারি ক্যুতে জুলিয়া গিলার্ডকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন ঠিক, কিন্তু পরের নির্বাচনে আর দলকে জিতিয়ে আনতে পারেননি। ম্যালকম টার্নবুলকে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে নেতা হয়েছিলেন টনি এবোট। প্রথম নির্বাচনে জুলিয়া গিলার্ডের কাছে হেরে গেলেও পরের নির্বাচনে কেবিন রাডকে হারিয়ে দলকে তিনি ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। ভদ্রতা করে টার্নবুলকেও মন্ত্রিসভায় রেখেছিলেন এবোট। সেই এবোটকে লেবার পার্টির স্টাইলে পার্লামেন্টারি ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে টার্নবুল প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন ঠিক। কিন্তু সেটি নিশ্চিত হতে নির্বাচনের ফল পেতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগেছে!

এখন দেখা যাক ভোট গণনায় এত বেশি সময় লাগার কারণ কী? জরিমানার ভয়ে রেকর্ড সংখ্যক ভোটারের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার প্রবণতার কথা আগে উল্লেখ করেছি। ভোট গণনায় সময় লাগার আরেক কারণও হতে পারে। একজন ভোটার একই সঙ্গে সংসদ ও সিনেট নির্বাচনে ভোট দেন। দুটি ব্যালট পেপারে ছয়টি বক্সের ভেতরে ওয়ান-টু-থ্রি এভাবে সিক্স পর্যন্ত লিখতে হয়। মনে করুন আপনি লেবার পার্টির প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। তার নামের পাশের বক্সে লিখেছেন, ওয়ান। এখানে লেবার পার্টিকে ভোট না দিলে আর কাকে ভোট দিতেন, এমন বাকি পাঁচটি ঘরে টু-থ্রি-ফোর এভাবে সিক্স পর্যন্ত লিখে যেতে হবে। সিনেটর নির্বাচনের ব্যালট পেপারেও এভাবে আপনার পছন্দের সিনেটরের বাইরে আরও পাঁচজনের নামের পাশের বক্সে এভাবে লিখে যেতে এমন ছয়টি বক্স পূরণ করা না থাকলে সে ব্যালট পেপার তথা ভোট বাতিল! এভাবে তারা দলগুলোর আনুপাতিক সমর্থন হিসাব করে। ভোট গণনায় জড়িত কর্মকর্তাদের এসব খুঁটিনাটি দেখে গননা করতে বেশ সময় লাগে। পোস্টাল ব্যালটও খুঁটিনাটি দেখে হিসাব করতে হয়।

এবার শুরু থেকে সব জনমত জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দেওয়া হচ্ছিল। এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পোস্টাল ব্যালট। এদেশের আগের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা হচ্ছে যারা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেন তাদের বেশিরভাগ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের সমর্থক-ভোটার। এ দল দুটি লেবার পার্টি, তৃতীয় প্রধান দল অস্ট্রেলিয়ান গ্রিনসের চেয়ে রক্ষণশীল চিন্তাধারার। এ দুটি দলের সিংহভাগ সমর্থক অস্ট্রেলিয়ায় নতুন অভিবাসন বিশেষ করে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিপক্ষে। রেকর্ড সংখ্যক পোস্টাল ব্যালটের কথা শুনে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলা শুরু করেন, এই ভোটগুলোর বেশিরভাগ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশনের পক্ষে যাবে। ঘটনা তাই ঘটেছে। ভোট গণনায় যে সময় লেগেছে তাতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থার যে প্রস্তাব উঠেছে সে ব্যাপারেও এদেশের জনগণকে প্রস্তুত করতে সময় লাগবে। কারণ একটি ব্যালট পেপারে একজন ভোটারকে ছয়টি করে ভোট দিতে হয়।

নির্বাচনে হারলেও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বিশেষ নজর কেড়েছেন বিরোধীদলের নেতা বিল শর্টন। গত নির্বাচনে দলের পরাজয়ের পর এই সাবেক ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকে নেতৃত্বে আনা হয়। কিন্তু ম্যালকম টার্নবুল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে জনপ্রিয়তায় তিনি বেশ পিছিয়ে পড়ছিলেন! অবস্থা এমন দাঁডিয়েছিল সরকারি দলের নেতার জনপ্রিয়তা শুধু বাড়ছে আর বিরোধীদলের নেতার শুধু কমছে! কেবিন রাড বা জুলিয়া গিলার্ড দেখতে শুনতে যতোটা ইমপ্রেসিভ ছিলেন বিল শর্টন তা নন। কিন্তু  নির্বাচন ঘোষণার পর বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট! দলকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নিয়ে আসেন। এবার নতুন বেশকিছু প্রার্থী প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ নিউসাউথ ওয়েলস রাজ্যেও ভালো করেছে বিল শর্টনের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। ১৫০ আসনের সংসদে দলটির আসন শেষ পর্যন্ত ৬৯ টিতে দাঁড়াতে পারে। বিলের মতো ভাঙ্গাচোরা চেহারার এক নেতার নেতৃত্বে দল এতটা ভালো করবে তা শুরুর দিকে ভাবতে পারেনি অনেকে। কিন্তু দলতো জেতেনি। তাই আগামীতে অনেক সমস্যার সঙ্গে নেতৃত্ব ধরে রাখার পরীক্ষায়ও তাকে পাস করতে হবে।

আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন নির্বাচনে কে জিতলে বংলাদেশের লাভ? জবাবে বলেছি আর সব দেশের মতো এদেশেও নির্বাচন হয় এদেশের ভোটার-নাগরিকদের স্বার্থ দেখাশোনার জন্যে। কাজেই কে জিতলে বাংলাদেশের লাভ বা ক্ষতি এসব হিসাব এদেশে গুরুত্বহীন। বিদেশি স্টুডেন্টরা ওয়েলকাম করে এটি তাদের অন্যতম ব্যবসা। তাদের জব মার্কেটে বিদেশি স্টুডেন্টররা কম পয়সায় কাজ করবে। লেবার পার্টির নেতাদের সঙ্গে এদেশের প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক-যোগাযোগ বেশ পুরনো। অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত সিডনির লাকেম্বারকেন্দ্রিক ওয়াটসন এলাকায় এই প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি যুবককে প্রার্থী করেছে ক্ষমতাসীন লিবারেল কোয়ালিশন। এটি লেবার পার্টির একটি নিশ্চিত আসন। তাই এখানে লিবারেল কোয়ালিশনের বাংলাদেশি প্রার্থী মোহাম্মদ জামান পাস করতে পারেননি ঠিক, কিন্তু তার মাধ্যমে বাংলাদেশিরা এদেশের সংসদ নির্বাচনের মতো একটি মূলধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অভিষেক ঘটিয়েছে। এই নির্বাচনে এটিই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় অর্জন।

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ