X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণে থাকে না

গোলাম মোর্তোজা
১৩ জুলাই ২০১৬, ১২:১১আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৬, ১২:৩০

গোলাম মোর্তোজা ১৯৭১ সালে ঢাকা শহরে একের পর এক গেরিলা আক্রমণ করে পাকিস্তানিদের ভিত নড়বড়ে করে দিয়েছিলেন 'ক্র্যাক প্লাটুনে'র গেরিলারা। খালেদ মোশাররফ, মেজর হায়দারের 'ক্র্যাক প্লাটুনে' বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রথম যারা যোগ দিয়েছিলেন, তাদের বড় অংশটি ছিল ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী।
গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছিল ইংরেজি মাধ্যম এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সাম্প্রতিককালের সফল ভ্যাটবিরোধী অভিনব সফল আন্দোলন করেছে।
শিক্ষার এত রকম বিভাজনের জন্যে দায়ী দেশ পরিচালনাকারীরা। শ্রেণি বৈষম্যমূলক মানসিকতায় তাদের অভিযুক্ত করা ঠিক না। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করছি এই কারণে যে, ঢালাওভাবে দায় চাপানো আমাদের একটা চিরন্তন সংস্কৃতি। আগে-পিছে চিন্তা করি না। যখন যে বিষয় সামনে আসে, সেটা নিয়ে মেতে থাকি। এতে সুবিধা হলো, ক্ষমতাসীনরা ইস্যু ডাইভার্ট করতে পারে তাদের ইচ্ছেমতো।
এখন যেমন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় মানেই জঙ্গি, এমন একটি প্রচারণায় মেতে আছি আমরা। আগে যেমন ছিলাম, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মানেই জঙ্গি। প্রচারণা চলছে, পিস টিভি- জাকির নায়েকের বক্তব্যের কারণেই জঙ্গিবাদ তৈরি হয়েছে। এসব প্রসঙ্গ আমাদের যেভাবে খাওয়ানো হচ্ছে, সেভাবেই খাচ্ছি। প্রশ্ন তুলছি না। প্রশ্ন তুললেই তাকে জামায়াত-রাজাকার বলছি।
জঙ্গি সংকটের গভীরে প্রবেশ করার মতো পরিবেশ যাতে তৈরি না হয়, সারাক্ষণ সেই প্রচেষ্টা। গভীরে প্রবেশ না করে, অথবা জিইয়ে রেখে, ভাসাভাসা অভিযোগ, ভাসাভাসা ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার ভয়ঙ্কর পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। কতটা ভয়ঙ্কর বিপদে যে বাংলাদেশ এখন আক্রান্ত, তা আদৌ অনুধাবন করতে পারছি কিনা, সন্দেহ হচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
১. জঙ্গিবাদের সঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততা জানা যাচ্ছে। সেটা কি এখনই প্রথম জানা গেল? আরও সাত আট বছর আগে থেকে যখন বলা হচ্ছিল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শেখ তৌফিকরা হিযবুত তাহরীরের মাধ্যমে জঙ্গি তৈরি করছে, তখন আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দাদের কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। সেখানে নিরাপদে জঙ্গি তৈরি হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী জঙ্গি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ই সবচেয়ে মানসম্পন্ন। দেশের বড় কোম্পানি ও মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আইবিএ’র পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা শিক্ষার্থীদের প্রায় সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।

আর একটি কথা মনে রাখা দরকার, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গি নেই, একথা জোর দিয়ে কেউ বলতে পারবে না।  নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। পক্ষপাতিত্ব আছে, একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি। জঙ্গি ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমরা যেন একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে না দেই। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, প্রতিষ্ঠানের ক্ষত চিহ্নিত করে সংশোধনের উদ্যোগ নেন, প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে দেবেন না।

২. প্রশ্ন হলো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সেটা আমরা নিতে চাই কি না? আন্তরিকভাবে চাই কিনা, ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে কিনা? ১৩ দিন হয়ে গেল। হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের কোনও কূল-কিনারা হলো? তদন্তের কোনও অগ্রগতি জানা গেল? পাওয়া গেল নেপথ্যের কোনও তথ্য?

সবকিছু এখনই প্রকাশ করে দেওয়া হবে, অবশ্যই তা চাইছি না। এত বড় ঘটনা যে চাপা পড়ে যাবে না, যাচ্ছে না, সন্দেহমুক্ত হতে পারছি না।

এত নিরাপত্তা বেস্টনি অতিক্রম করে অস্ত্র নিয়ে জঙ্গিরা কূটনৈতিক এলাকায় ঢুকলো কিভাবে? নিরাপত্তার ত্রুটি কোথায় ছিল, তা কি চিহ্নিত করা গেছে? জঙ্গিরা রাতের ঠিক কোন সময় হত্যা করেছে ২০ জন মানুষকে, পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়েছে কোন সময়? বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসব তথ্য জানা খুব সহজ ব্যাপার।

এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে তেমন কিছু জানা যাচ্ছে না।

তাছাড়া জীবিত যারা সকাল পর্যন্ত আটকা ছিল, তার মধ্যে একজন জাপানিজ, একজন শ্রীলঙ্কান ছিল। তাদের বক্তব্য জানাও জরুরি, প্রকৃত রহস্য উপলব্ধির জন্যে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম সেই রাতে আর্টিজানে ছিল। জঙ্গিদের সঙ্গে হাঁটতে, সিগারেট খেতে দেখা গেছে তাকে। এমনকি অস্ত্র হাতেও নাকি দেখা গেছে। জঙ্গিরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে দিয়ে কাজ করাতে পারে, তার হাতে অস্ত্র তুলে দেবে না। সত্যি যদি তার হাতে অস্ত্র দেখা যায়, অবশ্যই তাকে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।  আরেকজন শিল্পপতির ছেলে তাহমিদকেও সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। 'আমাদের হেফাজতে আছে -নাই, এই লুকোচুরি কেন? 'হার্ট অ্যাটাক' বা অন্য কোনও কারণে এরা আবার নিহত হবে না তো! প্রশ্নের জন্ম দেওয়ার দরকার পড়ছে কেন?

এখন জানা যাচ্ছে, পাঁচ মাস আগেই জঙ্গি নিবরাসের নামে আমলা হয়েছিল। বড় নাশকতা করবে, তাও জানা গিয়েছিল। অথচ গ্রেফতারের কোনও চেষ্টাই ছিল না। কেন? নিবরাস উচ্চবিত্তের সন্তান। তাদের ধরার ক্ষেত্রে পুলিশ যে কোনও কারণেই হোক তৎপর নয়। কখনও ধরলেরও সহজে যাতে জামিন পেয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তৎপর।

৩. বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সরকারের এমন কেউ নেই যিনি এই অভিযোগ করেননি। সরকার নিজে যে জঙ্গি নেতাদের বিচার করছে না, সে বিষয়ে কারও কোনও উদ্বেগ নেই। হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়কারী ও মুখপাত্র মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ'র সহযোগী অধ্যাপক। জঙ্গি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয় ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল। ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন ২০১১ সালের ৩ মে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকলেও থাকছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে। বেতনভাতা সবই পাচ্ছেন। তিনি ২০০৯ সালের ২ এপ্রিল ‘সাপ্তাহিক’-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়কারী এবং মুখপাত্র হিসেবে। হিযবুত তাহরীর কত মহান, বিস্তারিত বলেছিলেন।  ২০১৬ সালের ১১ জুলাই প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলছেন, হিযবুতের সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই!

জেএমবির শীর্ষ নেতা মাওলানা সাইদুর রহমান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিমউদ্দিন রাহমানি গ্রেফতার হয়েছেন, চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। সরকারের অনুমতি না পাওয়া মামলা চলছে না, বিচার করা যাচ্ছে না। মহিউদ্দিনের, মামলার ক্ষেত্রেও ঘটছে একই ঘটনা। সরকার জঙ্গি নেতাদের বিচারের অনুমতি দিচ্ছে না দু'তিন বছর ধরে!

৪. সরকারের এই আচরণের ব্যাখ্যা কী? আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন কিছু জানেন না, খোঁজ নেবেন! এসব কি স্বাভাবিক কথা? আইনমন্ত্রী ১৩ জুলাই রাতে বলেছেন, পরশু দিন বিষয়টি তার নজরে এসেছে। এত গুরুত্বপূর্ণ মামলা নজরে আসতে তিন বছর সময় লাগলো! আরও বলেছেন, কেন এই গাফিলতি তা খতিয়ে দেখে, দোষী চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবেন। আস্থা রাখা না গেলেও, অপেক্ষায় রইলাম।

জঙ্গিবাদ যে কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সরকার তা অনুধাবন করতে পারেনি। সরকারের নীতি যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে। নিয়ন্ত্রিত জামায়াত থাকবে। নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পার্টি থাকবে। নিয়ন্ত্রিত হেফাজতে ইসলাম থাকবে। নিয়ন্ত্রিত জঙ্গি থাকবে। বিএনপি থাকবে না। প্রমাণ করতে হবে যে, বিএনপিই জঙ্গি দল।

বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে রাজনীতি করলেও তারা জঙ্গিদল নয়। জঙ্গিবাদের জন্য যে আদর্শের কর্মী থাকতে হয় তা বিএনপির নেই, কোনও কালেই ছিল না। বিএনপি একটি এন্টি আওয়ামী মানুষের সমর্থনের রাজনৈতিক দল, একটি প্ল্যাটফর্ম। মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর বিরক্ত হয়ে বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে। এ রকম একটি রাজনৈতিক দলকে ‘জঙ্গি দল’ প্রমাণ করা খুব কঠিন। এই কঠিন কাজটি সরকার বাস্তবে করতে পারছে না, রাজনৈতিক অভিযোগে করছে। সরকারের এই নীতির সুযোগ নিয়ে নিয়ন্ত্রিত জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

৫. জঙ্গিদের ঘটানো একের পর এক হত্যাকাণ্ড থেকেই সরকারের কিছুটা বিচলিত হওয়া শুরু হয়েছে। ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা বলে চাপা দিতে চেয়েছে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া জঙ্গিরা হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি করেছে। ধরা পড়া জঙ্গিদের হত্যা করে জটিলতা মুক্ত হতে চেয়েছে। কিন্তু জঙ্গিদের ক্ষমতা যে এতটা বেড়ে গেছে, এরা যে আত্মঘাতী আক্রমণ করতে পারে, হলি আর্টিজানে এমন আক্রমণ করতে পারে- সরকার তা কল্পনা করতে পারেনি। এত সংখ্যক বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর সত্যি সত্যি সরকার বিপদে পড়েছে। এই দায় বিএনপির ওপর চাপানোর সুযোগ পায়নি সরকার। এখন পিস টিভি -জাকির নায়েক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পিস টিভি, জাকির নায়েক হয়তো জঙ্গিবাদের অনেকগুলো কারণের মধ্যে ছোট্ট একটি কারণ। পিস টিভি বন্ধ করা না করা দিয়ে, এই জঙ্গিবাদের খুব বেশি কিছু যায় আসে না। ভারতের মহারাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা আবার ইতিমধ্যে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে, জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৬. সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যে জঙ্গি বিষয়ে কতটা অজ্ঞ অবস্থায় আছে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে, পাঁচ জঙ্গির নাম প্রকাশের ঘটনায়। ‘আকাশ-বিকাশ-ডন-বাঁধন-রিপন’ এভাবে জঙ্গিদের নাম বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের হাস্যকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। বাহিনীর পক্ষ থেকে না হলেও, বাহিনীর একজন সদস্য ফেসবুকে এই নামের একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, জঙ্গিদের অনেক নাম থাকে, তারা বারবার নাম পরিবর্তন করে। হ্যাঁ, অনেক নাম থাকে, নাম বারবার পরিবর্তন করে- সবই সত্যি। কিন্তু পুলিশের তো আসল নাম জানা থাকতে হবে, তারপরে নাম পরিবর্তিত নামের প্রসঙ্গ আসবে। মূল নাম না জেনে, পরিচিতি না জেনে, যেভাবে নাম বলা হয়েছে, তা কোনও দায়িত্বশীল বাহিনীর কাজ হতে পারে না। ব্যাখ্যাও মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ বিষয়ে একটি পুরনো প্রসঙ্গ মনে পড়ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রুবেলকে ডিবি পিটিয়ে হত্যা করেছিল। রুবেল ছিল নিরপরাধ, তার নামে কোথাও কোনও মামলা ছিল না। হত্যার পর রুবেলকে অপরাধী প্রমাণ করার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে ডিবি। ঢাকার যেসব থানায় ‘রুবেল’ নামে যত মামলার আসামি ছিল, সবই নিহত রুবেল বলে ডিবির পক্ষ থেকে বলা শুরু হয়। পত্রিকায় ফ্যাক্স পাঠিয়ে তথ্য জানানো হয়। এই অসত্য, সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। পুরনো এই ঘটনাটি উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, অসত্য বলার ধারা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়নি।

৭. 'জঙ্গি আছে, আইএস আছে’- স্বীকার করা, না করাটা জরুরি নয়। জরুরি রাজনৈতিক অভিযোগ না করে ব্যবস্থা নেওয়া। আজ আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে জঙ্গি হিসেবে সামনে এসেছে, আওয়ামী লীগ নেতার জঙ্গি ভাইয়ের সন্ধান জানা যাচ্ছে, কাল হয়তো বিএনপি নেতার ছেলে-ভাই -ভাতিজা জঙ্গি হিসেবে সামনে আসতে পারে। কারণ জঙ্গিবাদ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। বক্তৃতা দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জায়গায় আর জঙ্গিবাদ নেই। ক্ষমতাসীনদের তা বুঝতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা বোঝাতে হবে।

আমেরিকা, ভারত, ইউরোপ কেউ এই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবে না। আমেরিকা নিজে অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। ভারত কাশ্মীর, মাওবাদী আন্দোলন মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। সেভেন সিস্টারস সমস্যার সমাধান করছে বাংলাদেশের সহায়তা নিয়ে, আলোচনা করে। ভারত এত বড় সমস্যা নিয়েও স্থিতিশীল অবস্থায় টিকে আছে, তার শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামোর কারণে। বিচার এবং নির্বাচনি প্রাতিষ্ঠানিক শক্ত ভিত্তির কারণে। বাংলাদেশও অন্যের সহায়তা নিতে পারে, ঠিক যতটা তার প্রয়োজন।

নিজেরা সততা -আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে, তারপর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। আবারও বলছি, সহায়তা নেওয়ার আগে নিজেদের ঠিক হতে হবে।

জঙ্গি সমস্যার সমাধান চাইলে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা বন্ধ করতে হবে। আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে প্রকৃত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। বিএনপিকে ‘জঙ্গিদল’ প্রমাণ করার নীতি পরিত্যাগ করে, বিএনপির সহায়তা নিয়ে জঙ্গি সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। সরকার আন্তরিকভাবে চাইলে জামায়াতকে বাদ দিয়ে এই ঐক্য অসম্ভব নয়।

সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগ নিতে হবে। সাংস্কৃতিক দালাল শ্রেণি তৈরি করে তা সম্ভব নয়। সমাধান না আরও জটিলতা- কোন পথে হাঁটবে বাংলাদেশ, সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে।

লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক

আরও খবর: মাদ্রাসা থেকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি: ইউনিটভিত্তিক মগজধোলাই!

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ