X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি দমনে বিএনপি কতটা আন্তরিক?

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
১৪ জুলাই ২০১৬, ১৫:২৬আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৬, ১৫:৪৯

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী জঙ্গি-সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে সরকারের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে বিএনপি। সরকার বা আওয়ামী লীগের পক্ষে তার কোনও ইতিবাচক সাড়া তারা এখনও পায়নি। সম্ভবতো সে কারণে বিএনপির মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব বলছেন যে, বিরোধীদল দমনের অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে সন্ত্রাস অব্যাহত রাখতে চায়। কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীও বলছেন, দেশের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে উভয় দলের সম্মিলন প্রয়োজন। বিএনপি হলি আর্টিজানের ঘটনা নিয়ে শোক সমাবেশও করেছে। কিন্তু জঙ্গি দমনে তারা কতটা আন্তরিক সেই প্রশ্ন পরিষ্কার না।
অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল মুহিত বলেছেন- জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের ঘোষণা দিলে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টা আওয়ামী লীগ ভেবে দেখবে। জামায়াত ত্যাগের এ কথাটা বেগম জিয়ার উপদেষ্টা গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও নেত্রীকে কয়দিন আগে বলেছিলেন। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে উত্তরে বেগম জিয়া নেগেটিভ কথাবার্তা বলেছেন।
বিএনপির প্রধান দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া কেউই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে কোনওভাবেই সম্মত নন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার কথা বলছেন দেশের মানুষকে শুধু বিভ্রান্ত করার জন্য। জঙ্গি দমনে সরকার ব্যর্থ, আন্তরিক নয় এটা প্রমাণ করার চেষ্টায়। বিএনপি নেতাদের জঙ্গি দমনে একযোগে কাজ করার আহ্বানের পেছনে শষ্য পরিমাণ আন্তরিকতা নেই। বিএনপি-আওয়ামী লীগের একটা যৌথ বিবৃতিও জাতি কখনও প্রত্যাশা করতে পারে না।
একটা ঘটনার শাখা-প্রশাখাই ঘটনার মূল নির্ধারণ করে। যদিওবা সন্ত্রাস এখন বৈশ্বিক ব্যাপার হয়ে গেছে কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টার্গেট কিলিংগুলো, ১ জুলাইয়ের গুলশান ট্র্যাজেডি আর ৭ জুলাইয়ের শোলাকিয়ার ট্র্যাজেডি জাতীয় রাজনীতি বাইরের ঘটনা নয়। অনেক বুদ্ধিজীবী বলেছেন এটা হতাশার বহিঃপ্রকাশ। তবে আবার অনেক বুদ্ধিজীবী এটা জাতির হতাশা হিসেবে দেখাবার চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে একমত হওয়া মুশকিল। কারণ হতাশাগ্রস্ত দু’টি রাজনৈতিক দল সমগ্র জাতির প্রতিনিধিত্ব করে না।
জামায়াতে ইসলামী চূড়ান্তভাবে হতাশায় ভুগছে এ কথা শতাংশে সত্য। তাদের তাত্ত্বিক নেতা গোলাম আযমের মৃত্যু হয়েছে জেলখানায়, আরেক নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর আমৃত্যু জেল হয়েছে, দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ বড় বড় নেতাদের ফাঁসি হয়েছে এবং আরও অনেকে ফাঁসির অপেক্ষায় রয়েছেন। ক্যাডার ভিত্তিক দল আর আর্থিকভাবে খুবই মজবুত তাই এখনও টিকে আছে এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিশোধের আগুন জ্বলিয়ে রেখেছে। অন্যকোনও দলের পক্ষে এ অবস্থায় টিকে থাকা সম্ভব ছিল না। জামায়াত এখনও টিকে আছে শুধু তাই নয়, সঙ্গে অর্থবিত্ত দিয়ে তার প্রয়োজনে বিএনপিকেও টিকিয়ে রেখেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এ দুই দলের কোনও দলই নির্বাচনে যোগদান করেনি বরঞ্চ অন্ধ উন্মত্ততার মধ্যদিয়ে দেশকে দীর্ঘ চার মাস কাঁপিয়ে তুলেছিল। সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়েছে প্রচুর কিন্তু সরকার উৎখাত বা সরকারকে তাদের দাবি দাওয়ায় টেনে আনতে সক্ষম হয়নি। বিজয়ী হলে মানুষ ক্ষয় ক্ষতি সম্পর্কে কোনও কথা বলে না। কিন্তু পরাজিত হলে সবকিছুরই কড়া গণ্ডায় হিসাব মেলায় সাধারণ মানুষ। মানুষের কাছে বিএনপি-জামায়াত অনুরূপ একটা প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয়বার ৯২ দিন তারা পুনরায় সন্ত্রাসের মধ্যদিয়ে সরকার পতনের 'তীব্র আন্দোলন' করেছিল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখন তারা আন্তর্জাতিক সমর্থনও হারিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে যারা উদ্দীপনা নিয়ে তাদের সমর্থন করতো তারাও স্থবির হয়ে পড়েছে।

ভারতের সংঘ পরিবারের বজরং দল, হিন্দু মহাসভা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও শিবসেনা যেমন ভিন্ন অস্তিত্বের পরও প্রয়োজনে এক ও অভিন্ন হয়ে যায় তেমনি বাংলাদেশেও জামায়াতে ইসলামী, হিজবুত তাহরীর, আনসার-আল-ইসলাম, হিজবুল মোজাহেদীন, জামায়াতুল মুজাহেদীন- সবাই এখন এক ও অভিন্ন হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। বড় বড় সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশকে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টায় মেতে উঠেছে।

গত ৭ জুলাই শোলাকিয়ার ঈদের জামায়াতে প্রায় ৩ লাখ লোকের সমাবেশ হয়েছিল। পুলিশ সদস্যরা যদি জীবন দিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে না পারতো তবে কারবালা সৃষ্টি হয়ে যেত। ২/৩ হাজার মানুষ এক সঙ্গে হতাহত হলে আমেরিকা অনিবার্যভাবে স্বশরীরে উপস্থিত হতো। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, এ কর্মকাণ্ড শুধু ‘ইসলামী সংঘ পরিবার’-এর একার নয়, এতে বিএনপিও জড়িত আছে। সুতরাং বিএনপি বার বার যে সংলাপের প্রস্তাব রাখছে তা কখনও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

দেশে সন্ত্রাস নির্মূল হোক বিএনপি যদি তাই কামনা করে তবে বিএনপি একাইতো দেশব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিটিং মিছিল করে তাদের বক্তব্য উপস্থিত করতে পারে। একটা জাতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিরও সন্ত্রাস বিরোধী কর্মসূচি দেওয়া আশু কর্তব্য।

আমরা একটা বিষয় লক্ষ্য করছি, বিএনপি নেত্রী শারীরিকভবে অসুস্থ, তার ছেলে লন্ডনে অনেকটা নির্বাসিত জীবন-যাপন করছেন, আবার তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা- সব মিলিয়ে তিনি হয়তোবা হতাশায় ভুগছেন। এক কেন্দ্রীক নেতৃত্ব আর সেই এক নেতাই যদি হতাশায় ভোগেন তবে দলতো স্থবির হয়ে পড়বে। এভাবে যদি দলের অবস্থা অব্যাহত থাকে তবে দল আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আমাদের চোখের সামনে মুসলিম লীগ বিলিন হয়ে গেছে, ভাসানী ন্যাপ বিলিন হয়ে গেল। এ দু’টি দলের কারোই শক্তি সামর্থ্য বিএনপির চেয়ে বেশ বড় ছাড়া কম ছিল না। মওলানা ভাসানীর জনপ্রিয়তাও বেগম জিয়ার চেয়ে বেশি ছিল। জনপ্রিয়তা একটা বাষ্পসম ব্যাপার। এটা উবে যেতে সময় লাগে না। সুতরাং বেগম জিয়ার এখন উচিৎ হবে সন্ত্রাস বিরোধী মিটিং মিছিলে আত্মনিয়োগ করা। এতে বিএনপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে জড়িত থাকার অভিযোগও খণ্ডন করা যাবে আবার স্থবিরতা থেকে দলও মাথাছাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালাতে পারবে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

আরও খবর: নিখোঁজদের তালিকা তৈরি নিয়ে বিভ্রান্তি!

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ