X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোটা জাতি ভোরের অপেক্ষায়...

প্রভাষ আমিন
২৬ জুলাই ২০১৬, ১৫:৫৬আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৬, ১৬:০৩

প্রভাষ আমিন হলি আর্টিজানে হামলার লক্ষ্য কী, উদ্দেশ্য কী? কিছুই জানা যায়নি। হামলাকারীরা কাউকে জিম্মি করে কিছু দাবি করেনি। তারা স্রেফ ঢুকে বেছে বেছে বিদেশিদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সাথে প্রাণ দিয়েছে তিন বাংলাদেশিও। আর প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার চেষ্টা। আর ২৬ জুলাই রাতে কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের হানা। এখন জানা যাচ্ছে, কল্যাণপুরের জঙ্গিরা বড় কোনও অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই শঙ্কাটা অবশ্য ছিলই। র‌্যাব-পুলিশের তালিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক তরুণ নিখোঁজ আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, নিখোঁজ সবাই জঙ্গি নয়। কেউ বাবা-মার সঙ্গে অভিমান করে, কেউ প্রেম করে, কেউ হতাশ হয়ে, কেউ পরীক্ষায় ফেল করে ঘর ছেড়েছে। তবে তারপরও নিখোঁজ তরুণদের একটা বড় অংশ জঙ্গি আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই ঘর ছেড়েছে।
এখন এই নিখোঁজ তরুণদের খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আসলে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ নিখোঁজ তরুণরা নিশ্চয়ই পিকনিক করার জন্য বাসা থেকে যায়নি। তারা নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও প্রশিক্ষণ নিয়ে তৈরি হচ্ছে কোনও না কোনও অপারেশনের জন্য। কল্যাণপুরের ঘটনাই তার প্রমাণ। আমাদের সতর্ক পুলিশ বাহিনীকে অভিনন্দন। তারা সময়মত অভিযান চালাতে পেরেছে বলেই বড় কোনও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ। অপারেশন স্টর্ম ২৬ আমাদের নিশ্চিন্ত করেছে।
তবে জঙ্গিরা একটি কাজ খুব ভালোভাবেই করতে পোরেছে। সেটা হলো ভয় ধরিয়ে দেওয়া, আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। রাজধানী তো বটেই, দেশজুড়েই ভয়ের একটা চাদর ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্ক সর্বত্র- ঘরে, বাইরে, অফিসে, বাসায়, স্কুলে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালে, শপিং মলে। আতঙ্কের সঙ্গে আছে ভয়াবহ অবিশ্বাস। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না এখন। বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী, স্বজন, চেনা-অচেনা- সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় কেউই। রাস্তায় অচেনা লোক দেখলেই, আমাদের মনে সন্দেহ জাগে, জঙ্গি নয় তো!
হলি আর্টিজানে যা শুরু, তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এতদিন মূল সন্দেহ ছিল মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রতি। এখন সেটা বিস্তৃত হয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। জঙ্গিরা বিভিন্নস্থানে ভাড়া নিয়ে সংগঠিত হয়, এটা জানার পর সন্দেহের তালিকায় ওপরের দিকে এখন পাশের বাসার ভাড়াটে। কল্যাণপুরের ঘটনার পর এখন মেস করে থাকা ব্যাচেলররা বিপাকে পড়বেন। এমনিতেই রাজধানীতে ব্যাচেলরদের পক্ষে বাসা ভাড়া পাওয়া কঠিন। এখন তা কঠিনতর হবে। ইতিমধ্যেই অনেক এলাকায় ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া না দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

এ এক কঠিন সময়। এমন সময় খুব বেশি দেখেনি বাংলাদেশ। প্রাণচঞ্চল গুলশান জেগে থাকতো গভীর রাত পর্যন্ত। হই-হুল্লোর, খানাপিনা চলতো মধ্যরাত পর্যন্ত, কোনও কোনও রেস্তোঁরা খোলা থাকতো রাতভর। এখন সেখানে মাছি উড়ে বেড়ায়। সন্ধ্যা রাতেই সেখানে নিশুতি রাত নেমে আসে। সরকার এখন আবাসিক এলাকা থেকে সকল বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে অভিযানে নেমেছে। এটা মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। অননুমোদিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবশ্যই তুলে দিতে হবে। কিন্তু আবাসিক এলাকা থেকে সব বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে সেই এলাকার মানুষগুলো খাবে কী, কেনাকাটা করবে কোথায়? ঢালাও যে কোনও অভিযানই বিপদজনক। যেমন মেস বাড়িতে ঢালাও অভিযান চালিয়ে বিপদে ফেলা হবে ব্যাচেলরদের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ঢালাও অভিযুক্ত করাও একধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

আতঙ্কে শপিং মলে কেনাকাটা কমে গেছে। স্কুলে উপস্থিতি কমে গেছে। অনেক স্কুল অনির্ধারিত ছুটি দিয়ে দিয়েছে। অনেক অফিসের বিদেশি কর্তারা দেশে ফিরে গেছেন বা বাসায় বসে অফিস করছেন। আমি ঘর থেকে বেরুলে না ফেরা পর্যন্ত ছেলের উৎকণ্ঠা যায় না। বারবার ফোন করে। প্রসূন বারবার কান্নকাটি করে বলছে, আমি যেন জঙ্গিদের নিয়ে লেখালেখি না করি। এমন আতঙ্ক এখন ঘরে ঘরে। কিন্তু ঘরের ভেতরও তো মানুষ নিরাপদ নয়। শোলাকিয়ায় ঝর্না রাণী ভৌমিক ঈদের দিন নিজের রান্না ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

আতঙ্কের চাদরে ঢাকা এই বাংলাদেশ আমাদের চেনা নয়, ভীষণ অচেনা। তবে একটা কথা ঠিক বাঙালির ইতিহাস জয়ের। বাঙালিকে ভয় দেখিয়ে পরাভুত করা যাবে না। বরং বারবার বাঙালি রুখে দাড়িয়েছে সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, নির্মমতা, সাম্প্রদায়িকতা, অনাচার, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। সব যুদ্ধেই জয়ী হয়েছি আমরা। এবারও সম্মিলিতভাবেই রুখে দাঁড়াতে হবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। ভয় পেয়ে ঘরে বসে থাকলে জিতে যাবে গুটিকয়েক বিপথগামী জঙ্গি।

আশার কথা হলো, গুলশান ঘটনার পর আতঙ্ক যেমন ছড়িয়েছে, তেমনি বেড়েছে সচেতনতাও। সবাই এখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অবিশ্বাস থেকেই এসেছে সচেতনতা। সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে সচেতন জনগণ মিলেই প্রকিরোধ করতে হবে। ভয়কে জয় করেই এগিয়ে যেতে হবে আলোর পথে। এটা তো সত্যিই, রাত যত গভীর, ভোর তত নিকটবর্তী। আমরা গোট জাতি সেই ভোরের অপেক্ষায়।

লেখক: অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

[email protected]

আরও খবর: কল্যাণপুর অভিযান নিয়ে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ