X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাঙালি হয়ে ওঠার উৎসব

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৭ জুলাই ২০১৬, ১২:২৬আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৬, ১২:৪৫

ইশতিয়াক রেজাআরও ৯ জঙ্গিকে খতম করেছে পুলিশ। কল্যাণপুরের ‘অপারেশন স্টর্ম ২৬’ নিয়ে আলোচনা চারদিকে। এমন একটি সফল অপারেশনের পর স্বাভাবিকভাবে পুলিশ বাহিনীর মনোবল এখন তুঙ্গে। তবে একটা কথা এবারো ওঠে এলো আলোচনায়। কেন তরুণরা বিপথে যাচ্ছে? 
নিশ্চয়ই আমরা আশা হারাচ্ছি না। আমাদের আশা হাত পেতে আছে পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে, প্রশাসনের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে। আমাদের আশা সামান্যই—সামান্য স্বস্তি, সামান্য সচ্ছলতা, সামান্য নিরাপত্তা, সামান্য শান্তি। কিন্তু আজ বালাদেশে আশার চেয়ে আতংক। সেটাই বাড়ছে দিনে দিনে। কল্যাণপুরে পাঁচ নম্বর সড়কের সেই বাড়ির আশেপাশে যারা আছেন তারা ভাবতেও পারেননি কতটা ভয়ংকর জীব ছিল তাদের প্রতিবেশী হয়ে।
যে ছেলে কোচিং-এ যাবে বলে মা’র কাছ থেকে বিদায় নিল একমাস আগে, তাকে পাওয়া গেলো জঙ্গি আস্তানায়। সমস্যাটা তাহলে কোথায়? আমাদের পরের প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান বেড়েই চলেছে। যেন চিনতে পারছি না ওদের।
যে বিশ্ববিদ্যালয় এখন আলোচনায় বেশি, সেই নর্থ সাউথের উপাচার্য সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেছেন- ‘আমরা বড়রা, অভিভাকরা প্রজন্মের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলেছি’। সত্যি তাই, দূরত্ব বেড়েছে। এখন সময় হলো হাত বাড়িয়ে দেওয়ার, ছুঁয়ে দেখার, আগলে রাখার। সেই চেষ্টাটা যে নেই বা ছিল না তা নয়। আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্নকে কে চায় হাত ফসকে বেরিয়ে  যাক? তবুও যাচ্ছে। বাবা-মায়েরা হয়তো বুঝতেই পারছেন না সন্তান কোন আকর্ষণে কার কাছে যায় বা যেতে চায়।
আসলে সবকিছুর সাথে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির যোগ আছে। সমাজে যদি নীতিহীনতার অধিক সাফল্য মানুষ দেখতে পায় তাহলে তারুণ্য সেদিকেই যায়। দুর্নীতি আর দখলের উৎসবে নীতিহীনতার বীজ জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে অভিভাবকরা বুনে দিচ্ছেন প্রজন্মের অন্তরে।

স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন- তার কাছে তরুণ মানেই সতেজ ও ছটফটে চেহারা। আত্মবিশ্বাস ও শ্রদ্ধাভাবে ভরপুর তারুণ্য। আসলে প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটি ধারণা আছে। বাইরের মানুষটা সেই ধারণার বহিঃপ্রকাশ। সময় এসেছে তাদের পরিকল্পিতভাবে বলা যে, ‘নষ্ট ধার্মিকের কথা শোনার চেয়ে ফুটবল খেললে স্বর্গ তাদের আরও কাছে চলে আসবে’।

জিজ্ঞাসা হলো তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, শ্রদ্ধা জাগানোর এই ভাব প্রচার করা হবে কী ভাবে? উৎসবের মাধ্যমে। উৎসব চাই। ভয়কে জয় করতে এর কোনও বিকল্প নেই। এই উৎসব হলো উদারতার ভাব প্রচারের আয়োজন। তরুণ মনে আত্মবিশ্বাস জাগাতে হবে যে, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল আলোকপথে যেতে, ধর্মের নামে অন্ধকারের পথে যাওয়ার জন্য নয়। উৎসবের বাংলাদেশে ধর্ম পালিত হবে একান্ত ব্যক্তিগতভাবে। 

তাই একদিকে যেমন কল্যাণপুরের মতো অপারেশন চলবে, তেমনি ভাবতে হবে কী করে আমরা জীবনের সঙ্গে মোকাবিলার রাস্তাটাও তরুণদের দেখিয়ে দিতে পারি। ‘তেজস্বী হও, উঠে দাঁড়াও, সৌর্যবীর্য অবলম্বন করো’, এমন বাণী তাদের অন্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে বাঙালি হয়ে ওঠার জন্য। তা নাহলে ভয়হীনতা আসবে কোত্থেকে? একাত্তরে আমরা বাঙালি হয়ে উঠেছিলাম বলেইনা আলোর পথে পেয়েছিলাম।

সেই আত্মবিশ্বাস থাকলেই তরুণরা নিজেদের শ্রদ্ধা করবে। শ্রদ্ধা করবে অন্যদেরও। দেশি-বিদেশি, ধার্মিক-অধার্মিক সবাইকে। দুর্বল মানসিকতার বিকাশ ঘটে শ্রদ্ধার অভাবে। যারা বাংলাদেশকে চায়নি, তারাই শ্রদ্ধা করে না এদেশকে, এদেশের উদারতার সংস্কৃতিকে। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছি। উন্নয়ন আমরা চাই। কিন্তু চেতনাবিহীন উন্নয়ন কতটুকু বিকাশ ঘটাবে আমাদের সেই ভাবনাটা এখন ভাবতে হবে। আমাদের সিনেমা হল কমে যাচ্ছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠছে অন্ধকারের শক্তির নানা আয়োজন। পাড়ায় পাড়ায় ছিল পাঠাগার, এখন আর তা দেখা যায় না। ইন্টারনেটের কারণে হাতে হাতে এখন তথ্য ভাণ্ডার। কিন্তু সেই ভাণ্ডার প্রতিক্রিয়াশীলদের দখলেই হয়তো বেশি বলে আজ তারুণ্য এমন বিপজ্জনক। 

শুধুমাত্র উন্নয়ন জঙ্গিবাদের উত্তর হতে পারে না। উত্তর হবে বহুমুখী। জঙ্গিবাদ বলতে শুধুমাত্র যে সহিংস কর্মকাণ্ড, তা নয়। এই হিংসাপূর্ণ জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত আছে মূলস্রোতে থাকা বড় রাজনৈতিক দল। এই দলের নেতা-নেত্রীরা সাধারণ মানুষের স্বার্থচিন্তা থেকে বহু দূরে। গ্রামে গ্রামে আজ উন্নয়নের আওয়াজ। তবুও বলতে হবে জঙ্গিবাদের উত্তর শুধুমাত্র উন্নয়নের মাধ্যমে করা হলে সেটা হবে ফুটো পাত্রে জল ঢালার সমান। এই জঙ্গিবাদ উদ্ভবের আর্থ-সামাজিক কারণগুলো হলো অত্যাচার, বঞ্চনা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, পারস্পরিক আস্থার অভাব,  শিক্ষার অভাব। তাই উন্নয়ন কেবল ওপর থেকে চাপিয়ে দিলে হবে না; শুরু করতে হবে জঙ্গিবাদের উৎস থেকে। যেমন- শোষণ, অত্যাচার, বৈষম্য দূর করা, পারস্পরিক আস্থা জাগানো, রোজগারের পথ দেখানো, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের আত্মমর্যাদার পুনরুদ্ধার।

রাষ্ট্রের কাছে অনেক প্রত্যাশা। তবে ব্যক্তিও নিজেকে দূরে থাকতে পারে না। আশার কথা বলছিলাম। আশা বাঁচার জন্য। কিন্তু বাঁচা মানে বাঁচার মতো বাঁচা। সব সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা মিলিয়ে জাগ্রত মানুষের মতো পৃথিবীর বুকে চলে-ফিরে বেড়াতে চায় সবাই। কিন্তু পদে পদে বাধা। কখনও ধর্মের চেহারা নিয়ে, কখনও সমাজের নীতি-পুলিশ সেজে, কখনও রাষ্ট্রের রক্তচক্ষু দেখিয়ে। এই সবকিছুর সামনে দাঁড়াতে হবে ব্যক্তি-মানুষকে। অর্জন করতেই হবে মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার অধিকার। তবেই জীবন শুধু আয়ুষ্কালের হিসাবে নয়, যথার্থ অর্থ পাবে। সেই আশা নিয়েই না হয় বাঁচবার চেষ্টা করি সবাই।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

আরও খবর: কল্যাণপুরে গ্রেফতার হাসান হোসনি দালান হামলায়ও জড়িত

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ