X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রকৃতির ভাষা বোঝে কি রাষ্ট্র?

তুষার আবদুল্লাহ
৩০ জুলাই ২০১৬, ১৩:২৮আপডেট : ৩০ জুলাই ২০১৬, ১৩:৩১

তুষার আবদুল্লাহ আমরা কেউই হারিকেনের আলোর কাছে ফিরে যেতে চাই না। বৈদ্যুতিক বাল্বের আলোই চাই। যদিও আমরা জানি, হারিকেনের আলো, কুপির আলো আমাদের পরস্পরকে কতটা ঘনিষ্ঠ করে রাখতো। ওই মৃদু আলো ঘিরে ছিল আমাদের আত্মিক সমাবেশ। আমরা অনেক দূর দেখতে পেতাম! দূর স্বপ্নে ভেসে যেতে পারতাম সেই আলোতে। কিন্তু আমরা বরাবরই স্বপ্নকে বাস্তবে স্পর্শ করতে চেয়েছি। ভাসতে চেয়েছি উন্নয়নে। সভ্যতাকে নান্দনিক চাঁদের নিচে রেখে দিতে চাইনি। চেয়েছি, সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে। সভ্যতা এখন টাট্টু ঘোড়া। তার সঙ্গে তো হারিকেন হাতে পথহাঁটা যায় না। তাই, আমরা দৌড়াচ্ছি বিদ্যুৎগতিতে।বিদ্যুতের আলোতেই জোছনা দেখতে শিখেছি।
সভ্যতা গড়তে গিয়ে সভ্যতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ ভোগের উপযোগ বেড়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমরা বন্য হয়ে উঠি। চাহিদা- অপচয়ের গাণিতিক হিসাবের পরও আমরা বিদ্যুতের জন্য এক ক্ষুধার্ত জাতিতে পরিণত হই। সমস্যা হলো, বিদ্যুতের ক্ষুধা নিবারণের জন্য রন্ধনশালায় গৃহস্থ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বা আয়োজন রাখিনি।
গৃহস্থ বদল হয়েছে। কিন্তু রন্ধনশালার জোগান স্বাভাবিক রাখায় ছিল উদাসীনতা। গ্যাস দিয়ে, পানি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হতো। এখনও হয়। পানিতে সামান্য আর মাটির নিচের গ্যাসে বিদ্যুৎ তৈরি হতো বলে ব্যবহারের হিসাব-নিকাশে অপচয়, চুরি সবই ছিল। এখনও আছে।
সমস্যা হলো দিনকে দিন বিদ্যুতের জন্য ক্ষুধা বেড়েছে। বাড়ানোও হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ তৈরির মসল্লা জোগানে উদাসীনতা থাকায়, গৃহস্থরা টেরই পায়নি মাটির নিচের গ্যাসেও টান পড়েছে। পানি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরির সুযোগ ওই কাপ্তাইতেই সীমিত।
তাৎক্ষণিক ক্ষুধা মেটাতে গৃহস্থরা 'ফাস্টফুড' জ্বালানি হিসেবে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ ইউনিট পরিবেশন শুরু করে। সঙ্গে সালাদ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। কিন্তু বাসা-বাড়িতে নাস্তা হিসেবে এই বিদ্যুৎ চললেও শিল্প-কারখানার খাবারের মূল কোর্সের জোগান দিতে পারছে না জলদি খাবারতুল্য বিদ্যুৎ ইউনিট। এই বাস্তবতায় বিদ্যুৎ তৈরির উপকরণ হিসেবে চলে আসে কয়লার নাম।
প্রথম ভরসা নিজ মাটির নিচের কয়লা। কয়লা প্রাপ্তির আবেগে ২০০৮ সাল থেকে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রই হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একমাত্র উৎস।কিন্তু বড়পুকুরিয়ায় খানিকটা কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলেও ফুলবাড়িয়ার কয়লা তোলার উপায় কী হবে, তা স্থির করতে পারেনি রাষ্ট্র। স্থানীয়দের প্রতিবাদ ছিল উন্মুক্ত পদ্ধতির বিরুদ্ধে। সেই প্রতিবাদ ডিঙিয়ে গৃহস্থ বা সরকার কয়লানীতিও চূড়ান্ত করতে পারেনি। কিন্তু বিদ্যুতের জন্য বুভুক্ষু জনপদে বিদ্যুৎ সরবরাহ না করে আর উপায় নেই। নিরুপায় সরকার বিদ্যুৎ আমদানি করাসহ উপায় খোঁজে কয়লাবিদ্যুৎ বড় আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্রের। এটা খুব স্বাদু এবং সহজ উৎস। কিন্তু প্রশ্ন, এই কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হবে কোথায়?
স্থানীয় বিবেচনায় স্বাদু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনেক আগেই বিশ্ববিবেচনায় বিস্বাদ হয়ে গেছে। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র মানুষ-জমিন প্রান্তকেই বিপন্ন করেছে। বিজ্ঞান এখনও নিশ্চিয়তা দিতে পারছে না- কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতাস, জমিন, পানি, মানুষ সর্বোপরি প্রকৃতিকে দূষণ মুক্ত রাখবে।
এই সত্যকে জেনেই রাষ্ট্র রামপালে, বাঁশখালীকে বড় আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বেছে নেয়। বাঁশখালীর প্রকৃতি নষ্ট হবে,এর প্রতিবাদ হয়েছে। সুন্দরবনের ঘনিষ্ঠ রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে, এর প্রতিবাদ ভারতে হয়েছে, জাতিসংঘও সমর্থন করেনি। তারপরও চুক্তি বন্ধ থাকেনি। কিন্তু মানেই যে বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা থাকবে, চুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা যাবে না, তা নয়।
সেই ভরসা থেকেই বলছি- রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তৈরি ভস্মে সুন্দরবনের সামান্য একটি পাতাও নিরাপদ থাকবে না।একটি পাতার অস্তিত্ব যখন বিপন্ন, সেখানে স্থলভাগের প্রাণী, জলজ প্রাণীর নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন থাকবে, সেই নিশ্চয়তা রাষ্ট্র পাচ্ছে কোন উৎস থেকে?

সুন্দরবনের সুন্দর কয়লার ছাইয়ে ছেয়ে যাবে, সেখানে অসুন্দরের আস্তরণ পড়বে, তা বুঝি বনবিবি সইতে পারছে না। তার প্রমাণ আমাদের জলবায়ু চক্র। আষাঢ়- শ্রাবণ, কালবৈশাখী আপন নিয়মে আসছে না।
জলবায়ুকে অপরিচিত ঠেকছে। বনবিবির অভিশাপে প্রকৃতি বিরূপ। প্রকৃতির ভাষা কি রাষ্ট্র বুঝতে পারছে, পারবে? প্রকৃতির ভাষা যদি অনুবাদ করতে পারে রাষ্ট্র, তবে সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে আসবেই। এখন প্রশ্ন, রাষ্ট্র প্রকৃতির ভাষা বোঝার সাবালকত্ব অর্জন করবে, কবে?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

আরও খবর: ব্যাচেলররা থাকবে কোথায়?

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ