X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

হিলারি ভার্সেস ট্রাম্প

আনিস আলমগীর
০২ আগস্ট ২০১৬, ১৭:২৯আপডেট : ০২ আগস্ট ২০১৬, ১৭:৩৬

আনিস আলমগীর আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ২১ জুলাই রাতে ট্রাম্প-এর মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা দলীয় ডেলিগেটরা। সুপার ডেলিগেটরা সম্মেলনে নির্বাক ছিলেন। সুপার ডেলিগেট হচ্ছেন দলীয় নেতারা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সুপার ডেলিগেটরা প্রসন্ন নয় বলে অনেকে সম্মেলনে উপস্থিতও হননি। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং ডব্লিউ বুশ, জেব বুশ, মিট রমনি, ম্যাককেইন কেউই সম্মেলনে যোগদান করেননি। বরঞ্চ প্রাইমারিতে ট্রাম্প-এর প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রেড ক্রুজ নানা সমস্যা সৃষ্টির পায়তারা করেছেন। সম্মেলনের অনতিদূরে শতাধিক নগ্ন রমনীদের দিয়ে নৃত্যের আয়োজনও করেছেন। প্রাইমারিতে পাস করা কোনও প্রার্থীর ভাগ্যে দলীয় সম্মেলনে এত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আর কখনও দেখা যায়নি। তবে কোনও প্রতিরোধই ট্রাম্পের মনোনয়ন প্রতিহত করতে পারেনি।
গত ২৭ জুলাই ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক পার্টির দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে হিলারি ক্লিনটন মনোনয়ন পেয়েছেন। সম্মেলনের তৃণমূলে বিভক্তি থাকলেও ডেলিগেট আর সুপার ডেলিগেটদের মাঝে কোনও বিভক্তি ছিল না। প্রাইমারিতে শেষ দিন পর্যন্ত হিলারির প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর স্যান্ডার্স সম্মেলনে হিলারিকে তার সমর্থনের কথাও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু  স্যান্ডার্সের সমর্থকেরা খোলামনে তাদের সমর্থন হিলারির প্রতি সম্মেলনে ব্যক্ত করেছেন বলে মনে হয় না।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন খুবই ব্যয় বহুল। স্যান্ডার্স ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক শক্তির নেতা। তার পক্ষ্যে মার্কিন নির্বাচন করা খুবই কঠিন। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কোটি কোটি ডলার চাঁদা সরবরাহ করেন ওয়াল স্ট্রিট-এর ব্যবসায়ীরা। আমেরিকার ৯৯% সম্পদ তাদের হাতে। স্যান্ডার্স তাদের কাছে অপ্রিয়। তিনি শেষদিন পর্যন্ত প্রাইমারিতে হিলারির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন যুবা গোষ্ঠীর সমর্থনে। যুবাগোষ্ঠী অর্থের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেদের কায়িক পরিশ্রম দিয়ে স্যান্ডার্সের নির্বাচন পরিচালনা করেছিলেন। সম্মেলনে স্যান্ডার্সের সমর্থক যুবাগোষ্ঠী স্যান্ডার্সের সমর্থনের পরেও হিলারির প্রতি প্রসন্ন বলে মনে হয়নি। স্যান্ডার্স প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়নি সত্য কিন্তু  কড়িহীন এ লোকটি লড়াইয়ে ছিলেন এবং হিলারির ডানঘেষা বক্তব্যকে পরিবর্তন করে প্রগতিমুখী করতে বাধ্য করেছিলেন। হিলারি বাধ্য হয়েছিলেন স্যান্ডার্সের মজুরি হার ঘণ্টা প্রতি ১৫ ডলার নিজের এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করতে।

এখন চূড়ান্ত, আগামী নভেম্বরে আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। প্রার্থী হচ্ছেন রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন।

হিলারি ক্লিনটন ফাস্ট লেডি ছিলেন। তিনি আমেরিকার ৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী, তিনি নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত সিনেটর ছিলেন। বারাক ওবামা ২০০৮ সালে যখন প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তখন তার সেক্রেটারি অব স্টেট ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সমগ্র বিশ্ব ও বিশ্ব ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে তার পরিচিতি রয়েছে ব্যাপক।

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনও প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এমন কী রিপাবলিকান পার্টির সাধারণ সদস্যও ছিলেন না। রিগ্যানের মতো বয়স্ক মানুষ। কথায় রাজনীতি নেই। যা সত্য বলে উপলব্ধি করেন তাই অকপটে বলেন। মুসলমান সম্প্রদায় তার বক্তব্যের টার্গেট তা নয় শুধু, প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনকে ‘শয়তান’ বলতেও তার মুখে আটকাচ্ছে না। তিনি একজন খ্যাতিমান ব্যবসায়ী। আবাসন আর ক্যাসিনোই তার প্রধান ব্যবসা।

ক্যাসিনো মানে জুয়াখেলার আড্ডাখানা। ২০১৫ সালে ১৬ জুন তিনি জুয়া খেলার মতো তার প্রার্থীতার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কেউ চিন্তাও করেনি যে তিনি প্রাইমারিতে জিতে চূড়ান্তভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন। প্রাইমারি নির্বাচন চলার সময় তিনি বলেছেন বহুদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে রাজনীতিবিদেরাই ছিলেন। একবার ব্যবসায়ীর হাতে এ পদটা দিয়ে দেখলে ক্ষতি কি? তার ভাষ্য হলো রাজনীতিবিদ প্রেসিডেন্টের হাতেতো আমেরিকা দেউলিয়া হতে বসেছে। তিনি বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মেক্সিকো সীমান্তের উৎপাত বন্ধ করার জন্য চীনের প্রাচীরে মতো প্রাচীর নির্মাণ করবেন। মেক্সিকো সীমান্ত মাদক আর অস্ত্র চোরা চালনের স্বর্গ রাজ্য। আমেরিকার যুবকদের জন্য মাদক আসে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে।

প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের সময় পানামার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ ছিল। প্রেসিডেন্ট রিগ্যান পানামার প্রেসিডেন্ট নরিয়েগাকে পানামা থেকে বিমানে করে তুলে এনে আমেরিকায় বিচার করে কারারুদ্ধ করে রেখেছিলেন। অথচ পানামাও একটা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। নরিয়েগাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এক ভ্যাটিকানের পোপ ছাড়া কেউ প্রতিবাদ করেননি। এমন কী সোভিয়েত ইউনিয়নও নয়। অস্ত্র ও অর্থের দাপট একেই বলে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে মুসলমানদের অভিবাসন বন্ধ করে দেবেন। একজন প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিদ্বন্দ্বী তার নিজ দেশের গণমানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য কোনও কর্মসূচি প্রদান করতেই পারেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার নাকি ৪৫ হাজার কোটি ডলার খরচ হয়েছিল আর ওসামা-বিন-লাদেনের আল-কায়েদার হাত থেকে আমেরিকার মানুষ, কূটনৈতিকস্থাপনা ইত্যাদি রক্ষা করতেও নাকি অনুরূপ অর্থ খরচ হয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার প্রত্যক্ষ ঋণ হচ্ছে ১৭ ট্রিলিয়ন ডলার আর সিকিউরিটি বন্ড বিক্রি করে নিয়েছে ১২৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এটাও এক প্রকার ঋণ। প্রতিটি আমেরিকান নব-জাতক নাকি ৩০ লাখ ডলার ঋণ মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

২০০৮ সালে যখন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন ৫৪টা ব্যাংক এবং মোটর কোম্পানিগুলো নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিল। প্রতিটি মানুষের একটা বাড়ি থাকতে হবে প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশ ও জুনিয়র বুশের এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো অকাতরে গৃহ ঋণ দিয়েছিল। বিশ্ব মন্দার কারণে যখন মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায় তখন গৃহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হয়নি। ব্যাংকগুলো নিলামে খরিদ্দারের অভাবে বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেনি। এই ব্যাংকগুলো ও মটর কোম্পানিগুলোকে বারাক ওবামা ভর্তুকি সরবরাহ করে সংকট উত্তরণে সাহায্য করেছিলেন।

ওবামা বহু কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিন্তু কংগ্রেস রিপাবলিকানদের কব্জায় থাকায় অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি। ওবামা তাই এখনও জনপ্রিয়। তার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে তবু তিনি ৫৬% মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। সে কারণে ৮ বছর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকার পরও যে এস্টাবিলশমেন্ট বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়ার কথা হিলারি ক্লিনটন সম্ভবতো অনুরূপ কোনও বিরোধিতার সম্মুখীন হবেন না।

ট্রাম্প আমেরিকানিজম-এর ডাক দিয়েছেন। তিনি গত শতাব্দীর প্রথম ও দ্বিতীয় দশকের রাষ্ট্র নায়কদের মতো আমেরিকাকে আমেরিকানদের কাজে দায়বদ্ধ রাখতে বদ্ধ পরিকর। নিজের তহবিলের টাকা খরচ করে বিশ্বের কোনও ঝামেলায় আমেরিকাকে জড়িত করতে তিনি নারাজ। তার শ্লোগান হচ্ছে আগে হলো আমেরিকা ও তার জনগণ।

হিলারির পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র বলেছেন, হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতলে সিরিয়ায় আসাদ বিরোধী গোষ্ঠীকে সুসংগঠিত করে আমেরিকার সমর্থন ও সাহায্য প্রদান অব্যাহত রাখবেন। বিশ্ব সমস্যার প্রতি দুই প্রার্থীর দু-রকম দৃষ্টিভঙ্গি। আগামী নভেম্বরে বুঝা যাবে আমেরিকান ভোটারেরা ট্রাম্প ডকট্রিন না হিলারি ডকট্রিনের প্রতি তাদের আস্থা প্রকাশ করেন।

এবার ভবিষ্যৎ বক্তারা কী বলেছিলেন তার কিছু কথা বলে লেখা শেষ করব। ষোড়শ শতাব্দীতে ভারতীয় এক দরবেশ ‘হাল’ অবস্থায় কিছু কথা বলেছিলেন তা তার উপস্থিত বক্তরা তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তারা পুস্তক আকারে এটা প্রকাশও করেছেন। নাম দিয়েছেন শাহা নেয়ামত উল্ল্যাহর কচিদা। তিনি ভারতের ইংরেজের আগমন, স্বাধীনতা আন্দোলন, সিপাহীদের মহাবিদ্রোহ, ভারত বিভক্তি, জিন্নাহ ও গান্ধীর উত্থান সবই ইশারা ইঙ্গিতে বলেছেন। যারা ইতিহাস সম্পর্কে অবগত তারা সবই বুঝতে পারেন।

ষোড়শ শতাব্দীতে ফরাসী এক জ্যোতিবিজ্ঞানী নস্ট্রাডামাস (Nostradamus) পৃথিবীর ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে কিছু কথা লিখে গেছেন। কেনেডি ভ্রাতৃদ্বয়ের হত্যা, নেপোলিয়ানে উত্থান ও পতন, হিটলারের উত্থান, যুক্তরাষ্ট্রে এক এগারোর ঘটনা মতো ঘটনা, কালো প্রেসিডেন্ট ওবামার উত্থান তার পুনঃনির্বাচন- সবই নস্ট্রাডামাস-এর লেখায় রয়েছে। বাব ভাঙা নামের বুলগেরীয় এক মহিলাও ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন বহু। বাব ভাঙাও  ও বাব ভাঙা উভয়ের একটা কথাতে মিল রয়েছে। আমেরিকায় কালো লোক প্রেসিডেন্ট হবেন এবং তিনি হবেন আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট।  কালো লোক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন এবং তার মেয়াদ আগামী জানুয়ারিতে শেষ। তাহলে কি আমেরিকা আর কোনও কালো প্রেসিডেন্ট আসবে না? যারা ভবিষ্যত বাণী বিশ্বাস করেন তারা খেয়াল রাখেন।

এখন উভয় প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণা আরম্ভ করেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে হবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আমেরিকানেরা আগে বলতেন- মনে হয় হিলারি হবেন। এখন একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তারা কপাল টান করে বলেন- বলা মুশকিল। আমিও বলি বলা মুশকিল, কে হবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। পরবর্তী কিস্তি লিখার সময় পরিষ্কার করে বলার চেষ্টা করবো।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

আরও খবর: হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে সিরিয়ার আসাদ সরকারকে উৎখাত করবেন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ