X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

জোট কেবল পাটিগণিত নয়, রসায়নও

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৫ আগস্ট ২০১৬, ০৯:৪৮আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০১৬, ০৯:৫৩

ইশতিয়াক রেজাবিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর জোট অনেক দিনের। বলতে গেলে ঐতিহাসিক। এই জোটের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা নিয়েই এখন রাজনীতি সরগরম। জামায়াতকে জোট ছাড়াতে বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের একাংশই বেশি সক্রিয়। তারা কিছুদিন পরপর এ নিয়ে কথা বলে সংবাদ শিরোনাম হচ্ছেন। তাদের অন্যতম হলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ।
নির্বাচন বা আন্দোলন কেন্দ্রিক সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে যে ঐক্য বা জোট করে রাজনৈতিক দলগুলো এই জোটকে সেভাবে দেখার অবকাশ নেই। তাই এমাজউদ্দিন একদিনের মাথায়ই জামায়াত ছাড়ার কথা বলে খেলো হয়ে গেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীকে জোটে রাখা না রাখা প্রসঙ্গে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী এমাজউদ্দীন আহমদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তার ব্যক্তিগত অভিমত। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিশ্চয়ই দল প্রধানের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েই তার উপদেষ্টার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ দিন শেষে এই জোটগঠনের আসল কারিগর তো খালেদা জিয়াই।
জামায়াত-বিএনপি জোটকে নীতিহীন আদর্শহীন সুবিধাবাদী জোট বলে আক্রমণ করা হলে তা খুব একটা সঠিক হবে না। একটা আদর্শের ঐক্য এখানে আছে অবশ্যই। নীতি-আদর্শের ক্ষেত্রে এই দুই দলের ফারাকটা আসলে কোথায়? আদৌ আছে কি? খুঁজে দেখতে হয়। তবে বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালে হত্যার পর রাষ্ট্রকে যেভাবে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা হয়েছে সেখানে কাদের ভূমিকা বেশি সেটাও মাথায় রাখতে হয়। ইতিহাসের নানা সন্ধিক্ষণে তাদের ‘নীতি-আদর্শ’ রক্ষার জন্যই এই প্রকার বোঝাপড়া অনিবার্য। তাই চাইলেই ছাড়া হয় না। পূর্ব-পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প তো মাঝপথে বন্ধ করা যায় না।

বিএনপি আর জামাতের স্থায়ী রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন ‘বোঝাপড়া’র বিশ্বাসযোগ্যতা আসলে অনেক পুরনো। আর তা জানতে কিছুটা পেছনে যেতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ হয়। নিষিদ্ধ হয় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও। পাকিস্তানে থেকে যান এই দলের আমীর গোলাম আযম।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যে নতুন রাজনীতি বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল, তা ছিল পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার রাজনীতি। আর সেই ধারাতে গোলাম আযমকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে জামায়াতসহ নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল ও ধর্ম ব্যবসার রাজনীতিকে বৈধতা দেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।

জামায়াত ও বিএনপির সম্পর্কটা তাই পাটিগণিত বা অংক নয়, এতে আছে গভীর ক্রিয়াশীল রসায়ন। জিয়াউর রহমান জামাতকে নিজের রাজনৈতিক জোটে রাখেননি। খালেদা জিয়া সেই অবগুণ্ঠনও ভেঙে জোটের সদস্য শুধু করেননি, দু’জন চিহ্নিত মানবতাবিরোধী অপরাধীকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। বিএনপি ঘরানার পণ্ডিতদের কেউ কেউ যতই বলুন যে, জামায়াত এখন বোঝা, তারা এও জানেন, যে নীতি-আদর্শকে ভিত্তি করে এই জোট বন্ধুত্ব, তার শেকড় অনেক গভীরে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময়ও এই রসায়নকে উপলব্ধি করতে হয়েছে এদেশের মানুষকে। ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লা এক নয়, সেটা সবাই জানেন। কিন্তু কোথাও ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লার ভিন্নতাও চোখে পড়েনি। রাজনৈতিক সমীকরণে ভোটের পাটিগণিতে যেমন নজর আছে, আদর্শের রসায়নকেও কখন কম করে দেখা হয়নি। এই রসায়ন কাজ না করলে পাটিগণিতের অংক ভোটব্যাংকে পড়ে না

আজ বাংলাদেশে জিহাদের নামে যে সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের ভয় তার শুরুটা হয়েছে এই ভূখণ্ডে জামায়াতের মাধ্যমে। জামায়াতই বারবার ইসলামকে সাধারণ মানুষের সামনে, শান্তিতে বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক ধার্মিক বাঙালির সামনে মওদুদীবাদের জিহাদের কথা বলে খুনের রাজনীতিকে নিয়ে এসেছে। এসব ইতিহাস জেনেও যারা জোট করে তারাই আবার কী করে তাহলে এই দলকে রাজনৈতিক মিত্র করে সেই প্রশ্ন করা যেতে পারে, কিন্তু উত্তর পাওয়া যাবে না।   

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হলে প্রথমে বিএনপি নেতারা বলতে থাকেন, বিচার তারাও চান, তবে তা আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। এটা ছিল বিচার বিরোধিতার প্রথম ধাপ। জামায়াত নিজে ভয়ঙ্কর সহিংস পথে বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন প্ল্যাটফর্মটাকে ব্যবহার করেছে। এমনকী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বহু জনসমাবেশে এই দাবির প্রতিধ্বনি তুলে এই যুক্তি সাজিয়েছিলেন যে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে ভেঙে দিতেই কি এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে? ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১ সালে বগুড়ার এমনই একটি জনসভায়  মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বিচারাধীন সমস্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। জামাতের পক্ষে দাঁড়িয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চকে নাস্তিকদের মঞ্চ বলেছেন।

তাই এখন পরিস্থিতির চাপে পড়ে কেউ কেউ জামায়াত আর বিএনপি’র সম্পর্কের নতুন সমীকরণ করতে চাইলেও তা কেমন হবে সহজ ধারণা পাওয়া যায়। নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামাতকে যদি ছেড়েও দেয়, তবে তা হবে সাময়িক রাজনৈতিক পদক্ষেপ, স্থায়ী নয়। আত্মার যে রসায়ন, তা সেটা চিরস্থায়ী।

যেসব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তারও আগে ২৪টি বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকশিত করেছে, সে শক্তিকে নতুন করে ওঠে দাঁড়াতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্যকে কাজে লাগাতে একমাত্র পথ একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা। অন্যথায় কোনও ঐক্যের ডাকই আসলে ডাকার মতো ডাক হবে না।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

আরও খবর: খালেদাকে যা শোনালেন কাদের সিদ্দিকী

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ