X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

টক শো নাকি মতলব শো?

তুষার আবদুল্লাহ
০৬ আগস্ট ২০১৬, ১২:০২আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০১৬, ১২:১৩

তুষার আবদুল্লাহ লাউয়াছড়া অরণ্যে রেললাইনের ওপর বসেছিলাম। চারদিকের নৈঃশব্দে নিজের সঙ্গে কথোপকথনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। নগরের কোলাহলে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মন মন্দির কই? কাছাকাছি কোথাও ঘুঘু ডাকছে। মা হনুমান তার সন্তান বুকে সেগুন গাছের নিচে বসে আমাকে দেখছে। নাকি নজর রাখছে? নজর রাখাটাই স্বাভাবিক। সন্দেহ আমি তার আবাসিক শৃঙ্খলা নষ্ট করতে আবির্ভূত হইনি তো? আমি ভাবছিলাম নিজের কথা, শহরের কৃত্রিমতায় আর কত দূষিত হবো? আমার ভাবনায় ছেদ টানলেন একজন বন কর্মকর্তা, প্রশ্ন করলেন- আপনারা টকশো করেন কার জন্য?
আমি মুহূর্তে প্রবীন বন কর্মকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। তারপর উত্তর দেই- আপনার জন্য, আপনাদের জন্য। উত্তর শুনে তিনি বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললেন- মিছে কথা। আপনারা টকশো করেন নিজেদের মতলবে। উত্তর শুনে আমি বিস্মিত হলাম। নিজেদের মতলব বলতে তিনি কী বুঝাতে চাইছেন, তা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মতলবের কোনও হদিস পাইনা। বন কর্মকর্তাকেই জিজ্ঞেস করি- কী মতলব খুঁজে পেলেন?
ততক্ষণে তাকে আমাকে ঘিরে জটলা তৈরি হয়ে গেছে। যেখানে পর্যটক, আইক্রিম বিক্রেতা, অটোরিকশা চালক, কিশোর, তরুণও রয়েছে। বন কর্মকর্তা উত্তর দেন- যা দেখি সবই মতলবের কথা। তার সঙ্গে যোগ দিয়ে একজন পর্যটক বলেন- দেশে নির্বাচন হলো। আপনারা সুবিধা মতো মানুষ নিয়ে এসে নির্বাচনের সাফাই গাওয়ালেন। আমরা পৌরসভায় বসে, উপজেলায় বসে, ইউনিয়নে বসে জানি কেমন ভোট হয়েছে।
আমাদের দেখার সঙ্গে টকশোতে কথা বলা মানুষদের বয়ানের কোনও মিল নাই। আরেকজন, তাকে পর্যটক বলেই মনে হলো তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বললেন- সরকার বিরোধী দলকে মাঠে নামতে দেয় না, কিন্তু আপনাদের টকশোর বক্তারা বলেন - বিরোধী দলের শক্তি নাই মাঠে নামার। আরেকজন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- আরে ভাই সরকারতো চাইবেই বিরোধী দল ঠেকাতে। কিন্তু তাই বলে বিরোধী দল জ্বরের ভান করে বসে থাকবে? ওদের নামতে হবে না?
ভারসাম্যের নামে বিরোধীদলের পক্ষে সাফাই গাওয়াচ্ছেন। হেফাজত, পেট্রোল বোমা থেকে শুরু করে এখনকার জঙ্গি হামলা, সব বিষয়েই আপনারা মতলবের মানুষ দিয়ে কথা বলাচ্ছেন। নিরাপত্তা নিয়ে যে যার মতো কথা বলছেন এসে। এক তরুণ বললো- আমাদের গালি দেওয়ার জন্যও তো দেখি মানুষ ঠিক করা আছে। তরুণরা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেন দেশের সব সর্বনাশ করে বসে আছে।

আমি সবার কাছেই জানতে চাইলাম - মতলব উদ্ধার হলো কার?

সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বন কর্মকর্তা বলেন- প্রথমতো হলো যিনি কথা বলতে আসছেন তার ধান্দা। তিনি টকশো করে দেখি নানা পদ পেয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতি করার সার্টিফিকেট পর্যন্ত। কারো কারো ভালো ব্যবসাও হচ্ছে। সমাজে বিশেষ ব্যক্তি হয়ে উঠছেন। জানতে চাই আর কার ধান্দা? প্রায় কোরাসভাবেই সবাই বলে ওঠে- আপনাদের চ্যানেলের!

সরকারের তোষণ করলে তারা তুষ্ট। বিরোধী দলের হয়ে কিছু বললে তারাও হাতে থাকে। চ্যানেল মালিকের ব্যক্তিগত ব্যবসাও তখন জমজমাট।

এক তরুণ খুব কাছে এসে ফিসফিস করে বললো- আপনার শোতেও দেখি কয়েকজনকে। যারা এসে নিজের মতলব মতো কথা বলে চলে যাচ্ছে।

আমি সবার কাছেই জানতে চাইলাম - তাহলে কি কোনও টকশোই দর্শকের কথা বলছে না? উত্তর আসলো- ছিটেফোটা, কখনও কখনও। একজন বললেন- টিভি খুলে আমরা  মতলবের তামাশা দেখি। টকশোর নায়ক- নায়িকাদের অভিনয় শৈলী দেখি।

লটকন খাচ্ছিলাম। লটকনের টকে মুখের মানচিত্র হয়তো বদলে গিয়েছিল। রেললাইন ধরে ফিরছি- পেছন পেছন কয়েকজন তরুণ হেঁটে আসে। আমাকে শুনিয়ে বলে- মন খারাপ করবেন না ভাই। দেশে মতলবের বাইরের অনেক মানুষ আছে। তাদের একটু জায়গা দিয়েন। তাহলেই আমরা বাংলাদেশ সত্যের দিশা পাবো।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

আরও খবর: নিবিড় পর্যবেক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ, ওয়েবসাইট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ